বাবাকে যখন দাফন করতে যাই তখন শরীরে জ্বর ১০০। গ্রামে তিন দিন থেকে ঢাকায় ফিরে সেই জ্বরের সাথে কিছুটা যুদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলাম। শেষে দিকের মনে হইল খারাপ কিছু। রাসেল ভাই সঙ্গে নিয়ে ইবনে সিনা নিয়ে গেলেন। তাঁর বোন শার্মিন আপাও ডাক্তার, তাঁর পরামর্শে কিছু টেস্ট করা হলো। টায়ফয়েড ধরা পড়লো, গত দুই সপ্তাহ ধরে টায়ফয়েডের সাথেই মারামারি করতেছি।
এই দুই সপ্তাহ কোন ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি নাই। অনেকদিন ধরে হাতের আঙুলগুলা নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। এতে আঙুলের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথ্যা শুরু হইছে। শার্মিন আপার পরাপমর্শ একটু ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি বাড়াতে হবে। আঙুলগুলো একটু নারাচাড়া করতে হবে। তাই একটু কি-বোর্ডে বসলাম। টুকটাক গল্প লিখি।
আমি তখন এলিফ্যান্ট রোড থেকে রাসেল ভাইয়ের বাসায় যাই প্রতি সপ্তাহেই। রাসেল ভাই বাসায় থাকেন না, ইউনিভার্সিটিতে ক্লাশে থাকেন। আমি আমার মতো তাঁর বইয়ের তালিকা করে দেই। রাসেল ভাইয়ের বাসায় যখন প্রথম দিকে যাই তখন রাসেল ভাই কোনদিনই আলাদাভাবে তাঁর বাবা-মা’র সাথে পরিচয় করিয়ে দেন নাই। এমনি এমনি পরিচয় হয়ে গিয়েছিল। রাসেল ভাইয়ের বাবার সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতাম। ঐসব গল্প আরেকদিন।
রাসেল ভাইয়ের বাসায় প্রথমে গিয়ে দুইটা জিনিশ আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। তাঁর কম্পিউটার আর পড়ার রুমটা ছোট কিন্তু এত সুন্দর করে সাজানো-গোছানো। ছেলেদের রুম এত গুছানো হতে পারে আমার কোন ধারণাই ছিল না। আরেক বিষয় ছিল নানা জায়গায় নানান রঙের ছোট ছোট স্টিকার লাগানো। স্টিকার লিখা, অমুককে অমুক তারিখে ফোন দিতে হবে। অমুক তারিখে অমুক সময়ে অমুক স্যার অথবা ম্যাডামের সাথে দেখা করতে হবে। অমুকের খোঁজ নিতে হবে। একদম গোছানো নেটওয়ার্কিং, কিন্তু রাসেল ভাই মোবাইল ব্যবহার করেন না।
রাসেল ভাই আমাকে শুধু তাঁদের রুমগুলো দেখিয়ে দিয়েছিলেন, আর টয়লেট। এর মধ্যে একটা বিশেষ টয়লেট আছে। টয়লেটটায় দুইটা দরজা। এই পর্যন্ত আমি দুই দরজার টয়লেট দেখি নাই। টয়লেটটা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে ড্রয়িং রুমের লোকজন বারান্দা দিয়ে ঐ টয়লেট ব্যবহার করতে পারবে, বারান্দার সাথে আরেকটা রুম আছে। ঐ রুমের লোকজন ঐ টয়লেটে ঢুকতে পারবে একই দরজা দিয়ে। আবার টয়লেটে ঢুকার পরে আরেকটা দরজা সেটা আবার আরেক রুমের সাথে সংযুক্ত। অর্থাৎ দুই দরজা দিয়ে অন্তত তিন রুমে লোকজন এই টয়লেট ব্যবহার করতে পারবে।
এই টয়লেট ব্যবহারের একটা নিয়ম ছিল। এইটা রাসেল ভাই প্রথমেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। টয়লেটে ঢুকে দুইটা দরজাই বন্ধ করতে হবে। ভুলে যদি একটা খোলা থাকে তাহলে কেলেঙ্কারীর আর শেষ থাকবে না। টয়লেট শেষে বের হওয়ার সময় মনে করে অবশ্যই দুইটা দরজাই খুলে রাখতে হবে।
মোটামুটি আঙুলের ভালোই এক্সারসাইজ হয়েছে, আজ এই পর্যন্তই থাক।
১ ভাদ্র ১৪২৯