যতদূর মনে পড়ে ছোটবেলায় প্রথমে মসজিদে গিয়েছিলাম বাবার সাথে। নাখালপাড়ার অনেকগুলা মসজিদের মধ্যে সবচাইতে পপুলার হইল বড় মসজিদ। এই মসিজদেই সম্ভবত সবচাইতে বেশি নামাজ পড়া হয়েছে। এ ছাড়াও বেলাল মসজিদ আর ছাপড়া মসজিদেও নামাজ পড়া হয়েছে তবে খুবই কম। ছাপড়া মসজিদ নামে মনে হয় অনেক এলাকাতেই মসজিদ আছে, শুধু নাখালপাড়ায় না। এলাকার এই তিন মসজিদের বাইরেও নাবিস্কোর দিকে রহিম মেটাল মসজিদে অনেক নামাজ পড়া হয়েছে। এর মূল কারণ এলাকার অনেক বন্ধু-বান্ধবের আত্মীয়স্বজনের কবর আছে সেই মসজিদ প্রাঙ্গণে। নাখালপাড়া ছেড়ে আসার বছরখানেক আগে আমার মায়েরও কবর হয়েছে রহিম মেটাল মসজিদ প্রাঙ্গণে।
আমাদের বড় মসজিদে প্রথম ছোট ছিল। মসজিদ প্রাঙ্গনে ওজুখানাটা কলের ছিল না। আগের অনেক মসজিদেই এমন ছিল। বিশাল এক হাউজ তার চারদিকে মুসল্লিরা ওজু করতেন। পানি সব সময় ঠাণ্ডা থাকতো। সেখানে বসে থাকতো আমার খুবই ভালো লাগতো। তার কারণ হাউজ মাছ খেলা করতো। সবাই ওজু করে তাই পা চুবিয়ে বসার উপায় ছিল না, কিন্তু অনেক্ষণ হাত দিয়ে রাখলে মাছ এসে ঠোকর দিত। ঠোকর দিলে সুরসুরি লাগতো, এটার অনুভুতি অন্যরকম। এখন আর ঐ টাইপের অজুখানা খুব একটা দেখা যায় না। অনেক খুঁজলে হয়তো দুয়েকটা পাওয়া গেলেও যেতে পারে।
জোহরের নামাজের পরে প্রায়ই দেখা যেত অনেক মুসল্লিরা বিশ্রাম নিচ্ছেন বিশেষ করে গরমের সময়। আমি নিজেও অনেকবার এমন হয়েছে, একটু শুয়েছি কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি বুঝতে পারি নাই। বেশ আরামের ঘুম হতো। এই ঘুমের বিষয়টা মাঝে মাঝে হইত। কিন্তু অনেক লোকজন ছিল নিয়মিত এইটা করতো, বিশেষ করে অনেকে ছিল ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতেন অথবা অন্য পেশার লোকজনও দুপুরের সময় একটু বিশ্রাম নিতেন নামাজের পরে।
আমরা প্রায়ই জরুরি টয়লেটের প্রয়োজন হলে মসজিদের টয়লেট ব্যবহার করতাম। এটা অনেকেই করতো। একবার বড় ভাইদের দেখলাম গল্প করতেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাবেন, থাকবেন কোথায়? একজন বললো এত চিন্তার কি আছে একটা রাতের বিষয় স্টেশনে অথবা মসজিদে রাতটা কাটিয়ে দেয়া যাবে। মসজিদে রাতে থাকার বিষয়টা আমিও দেখেছি। অপরিচিত লোকজন মুসাফির হিসাবে মসজিদে রাতের জন্য আশ্রয় নিয়েছেন।
এখন আর টয়লেট চাপলে অথবা বিশ্রামের জন্য মসজিদ ব্যবহার করা যায় না। অনেক মসজিদেই দেখেছি নামাজের সময় ছাড়া মসজিদ তালা মারা থাকে। অদ্ভুতভাবে অনেক কিছু পালটে গেছে। ফেসবুকে দেখলাম কোন এক মসজিদে সাইনবোর্ডে লেখা আছে এখানে ইফতার করা নিষেধ। কিন্তু আমাদের মসজিদে দেখতাম রমজান মাসে প্রায়ই ইফতারের আয়োজন করা হতো। লোকজন জরুরি প্রয়োজনে মসজিদে বিনা পয়সায় ইফতারটা করে ফেলতে পারতেন।
এই যে মসজিদে তালা মারা বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ের পরিবর্তণটা কবে কিভাবে হলো ঠিক মনে করতে পারতেছি না।
অনেকদিন আগে একবার ৬৩ জেলায় একসাথে বোমা হামলা হয়েছিল। সম্ভবত প্রতিটা বোমাই ফুটেছিল সিনেমা হলে অথবা আশেপাশে। এই হামলার পরপরই অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকেই সম্ভবত মসজিদেও রাতে থাকার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। পাশাপাশি অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাও। শুধুমাত্র নামাজের সময় মসজিদ খোলা থাকে। হয়তো কিছু কিছু মসজিদ চব্বিশ ঘণ্টাই খোলা থাকতে পারে। তবে শহরকেন্দ্রিক মসজিদগুলাতে প্রায়ই বন্ধ থাকতে দেখা যায়।
২ চৈত্র ১৪৩০