৬৪ জেলায় যা দেখেছি-৩

30513_1429771714193_506961_n

৩ মার্চ (নরসিংদী থেকে কিশোরগঞ্জ)

সকালে ঘুম থেকে উঠলাম ৭:৩০ মিনিটে। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। কিবরিয়া ভাইয়ের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে আশেপাশে একটু ঘোরাফেরা করে ৯টার দিকে নাস্তা করলাম। তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলাম কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে। সাইকেল চালাতে চালাতে নারায়ান্দী নামে একটি জায়গায় এসে দেখতে পেলাম মাঠে কিছু বাচ্চা ছেলেমেয়েরা খেলাধূলা করছে। এটি আসলে স্কুলের প্রতিযোগিতা। প্রথমে দৌড় প্রতিযোগিতা, এরপরই শুরু হল মোরগ লড়াই। বেশ ভাল লাগছিল তাদের খেলা। স্কুলটির নাম ছিল ‘সানরাইজ কিন্ডার গার্ডেন’।

আমি আর কি খেলা দেখব! আমাকে দেখে খেলা বন্ধ করে ওরাই ছুটে এল আমার কাছে। সব বাচ্চাকাচ্চার সাথে সাইকেল একটি ছবি তুললাম। স্কুলের এক স্যারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আমি আবার রওনা দিলাম।

পর্যায়ক্রমে মনোহরদী, চালাকচর, সাগরদী বাজার, পাকুন্দিয়া বাজার হয়ে বিকালের দিকে পৌঁছলাম কিশোরগঞ্জ জেলায়। লোকজনকে জিজ্ঞেস করে প্রথমেই চলে গেলাম ডিসি অফিসে। সাইকেল তালা মেরে ডিসি সাহেবের খোঁজে উপরে উঠে গেলাম, তিনি অফিসে নেই। কর্মচারীরা বললেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি চলে আসবেন। সেই কিছুক্ষণ মানে দুই ঘণ্টা। ডিসি শাহ্ কালাম সাহেব আসার পরও আমাকে আরো প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হল।

অবশেষে আমার ডাক পড়ল। বিশাল টেবিলে তিনি বসে আছেন, তাঁর হাতের বাম দিকে টিভি চলছে। সামনে দুইজন বসে আছেন, কথাও বলছেন আবার টিভিও দেখছেন। তাঁকে আমার উদ্দেশ্য খুলে বললাম। সবকিছু শোনার পর তিনি বিভিন্ন বিষয়ে জেরা করতে শুরু করলেন আমায়। আসল কথা, আমার থাকার বিষয়ে দায়িত্ব নিতে চাচ্ছিলেন না তিনি। তিনি আমাকে বললেন, ‘আমি কিভাবে আপনাকে সার্কিট হাউজে থাকতে দেব, আপনি তো জঙ্গিও হতে পারেন।’ এই কথা শুনে আমি তো থ।

তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত সংসদ অধিবেশন দেখতে লাগলেন। সংসদে সম্ভবত স্থানীয় সংসদ সদস্য বক্তৃতা করছিলেন সেটা দেখে তিনি বেশ আনন্দ পেলেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই সংসদ সদস্যকে ফোন করলেন, তাঁকে অভিনন্দন জানালেন। এর পর আমার দিকে তাকালেন এবং আমাকে বললেন, আপনাকে তো সার্কিট হাউজে থাকতে দিতে পারবো না তবে আপনাকে অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

তিনি নেজারাত ডিপুটি কালেকটার (এনডিসি) সাহেবকে বলে দিলেন আমাকে যেন হর্টিকালচার রেস্টহাউজে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। আর আমি যে এই জেলায় এসেছি সেই মর্মে কিছু লিখে দিতেও অস্বীকৃতি জানালেন। তিন ঘণ্টা পরে যে অন্তত থাকার ব্যবস্থা তো হয়েছে হর্টিকালচার সেন্টারে। আমি এতেই খুশি। আমি ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিলাম। এনডিসি সাহেব ফোনে হর্টিকালচার সেন্টারে বলে দিলেন, এবং হর্টিকালচার সেন্টারের কেয়ারটেকারের নাম বলে দিয়ে বললেন, চলে যান।

কেয়ারটেকার ফারজুনকে খুঁজে বের করলাম। তাকে বললাম, ‘আমি ডিসি অফিস থেকে এসেছি।’ তিনি জানালেন, ‘এখানে থাকতে হলে ২০ টাকা ফি দিতে হবে।’ আমি বললাম, কোন সমস্যা নেই। তিনি যখন আমাকে চাবি দিচ্ছিলেন তখন পাশের রুম থেকে একজন সরকারি কর্মচারী আমাকে ডাকলেন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কি সাইকেল ভ্রমণে বের হয়েছেন?’ আমি উত্তরে হ্যাঁ বলাতে তিনি বেশ খুশি হলেন।

আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার উদ্দেশ্য জানতে চাইলেন। আমিও ক্লান্তি নিয়েই বলতে লাগলাম। কথা বলার এক পর্যায়ে কেয়ারটেকার ফারজুনকে বলে দিলেন আমার কাছ থেকে যেন টাকা না নেওয়া হয়। আমার টাকাটা তিনি নিজেই দিয়ে দিবেন। বাংলাদেশের মানুষ যে একজন ভ্রমণকারীকে কতটা সাহায্য করতে পারে তা প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করতে পারছিলাম। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আমার রুমে চলে গেলাম।

আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে দ্বিতীয় তলার একটা রুমে। রুমটা বেশ বড় চারটা সিঙ্গেল বেড আছে কিন্তু মানুষ আমি একা। রুমে জিনিসপত্র রেখে চলে গেলাম গোসল করতে। গোসল করতে গিয়ে পড়লাম এক মহা ঝামেলায়। গোসলখানায় গিয়ে কল ছাড়তেই দেখলাম পানির সঙ্গে কাদা বের হওয়া শুরু হলো। বাধ্য হয়ে গোসলের চিন্তা বাদ দিয়ে রুমের দিকে ফিরে যাচ্ছিলাম।
রুমে ঢোকার আগে দেখি বারান্দার আরেক পাশে আরেকটি বাথরুম ও গোসলখানা আছে। গোসলখানায় ঢুকে কল ছেড়ে দেখলাম সেই কলের পানি ঠিক আছে। তাই সেখানে গোসল করার জন্য তৈরি হলাম। এখানেও আরেক ঝামেলায় পরলাম। ঝর্না ছাড়ার জন্য চাবি ঘোরাতেই ঝর্নার চাবি খুলে আমার হাতে চলে আসলো! আমি তো হতবাগ! পরলাম মহা-বিপদে, একদিকে পানি পড়ছে আর অন্য দিকে আমার হাতে চাবি। অনেক কষ্ট করে চাবি লাগালাম। হাপ্ ছেড়ে বাঁচলাম এবং ঝর্নার পানিতে গোসল করার চিন্তা বাদ দিলাম। বাধ্য হয়ে কলের পানিতেই গোসল করে রুমে ফিরে আসলাম।

রুমে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে বের হলাম শহর দেখতে। শহরে প্রথমেই চোখে পড়ল একটি কালীবাড়ি, তারপর থানা। কয়েকটি দোকানে দেখা গেল বিয়ের জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে। বিয়ের দোকান-পাট দেখলেই কেন জানি ঢাকার বাটা সিগনেল থেকে কাঁটাবন যাওয়া রাস্তার কথা পড়ে।

কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটি সিনেমা হলও চোখে পড়ল—নাম রঙমহল। রঙমহলের বিশাল ব্যনার দেখেই বোঝা গেল এখানে রঙ-বেরঙ্গের সিনেমা চলে। আরো কিছুদূর যাওয়ার পর একটি সুন্দর মসজিদ চোখে পড়ল, মসজিদটির নাম শহীদি মসজিদ। মসজিদের সামনে পুরানো কাপড়ের পসরা নিয়ে বসেছে দোকানিরা। আরো বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে, খাওয়া শেষ করে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।

আরো ছবি।

৬৪ জেলায় যা দেখেছি-২

Comments

comments

Comments

  1. মজা পেলাম… ঝরনার পানি তে গোসল দিতে চল বান্দরবন যাই। 😀

    1. চলেন। =D

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.