আমার জীবনের প্রথম লেখাটি চুরি হয়ে গিয়েছিল। চুরি হয়ে গেছে সেটাও আমি জানতাম না। একদেড় বছর পরে জানতে পেরেছিলাম। তাও দুর্ঘটনাক্রমে। এক বড় ভাইকে জীবনের প্রথম লেখাটি দিয়েছিলাম দেখার জন্য। তাও অর্ধেক। উনি সেই লেখাটি দেখে কিছুটা নিজের মতো করে একটি পত্রিকায় ছাপিয়ে দিয়েছিলেন।
একদিন একজনের অফিসে সময় কাটানোর জন্য একটি পত্রিকা হাতে নিলাম। দেখি সেখানে আমার লেখা কিন্তু লেখার নাম আর লেখকের নাম আমার না। লেখকের নাম যে ভাইকে দিয়েছিলাম তার নাম। আমার মনে ছিল লেখাটি শেষ করি নাই, পুরাটা পড়লাম। প্রথম অংশ আমার আর শেষ অংশ তার। ঐদিন কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল।
তারও অনেকদিন পরে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা’ বিষয়ক কাজের জন্য বসুন্ধরা সিটিতে গেলাম ‘ডেইলি সানে’র অফিসে। সেখানে শিবুদার সঙ্গে দেখা। শিবুদা প্রোগ্রামের জন্য বইয়ের প্রচ্ছদ ও পোস্টার করে দিচ্ছিলেন। সেদিন ছিল আমাদের অবাক হওয়ার দিন। অনেক্ষণ গল্প করেছিলাম। সেই গল্পের মাধ্যমেই একজন আরেকজনের অনেক চমকপ্রদ ঘটনা জানতে পারলাম। এর মধ্যে আমরা দুইজন ছাড়াও অনিক ভাই আর শিবুদার কলিগ উন্মাদের কার্টুনিস্ট ছিলেন।
সেদিনই প্রথম আমার সেই দুঃখের গল্প অনেক সুখ নিয়ে বলছিলাম। শিবুদা খুবই অবাক হয়ে বলছিলেন, ‘আপনার লেখা আরেকজন ছাপাইয়া দিলো আপনার কোন অভিযোগ নাই কেন?’ আমি বলেছিলাম, ‘ঐ বড় ভাইকে আমি অনেক পছন্দ করি তাই কোন অভিযোগ নাই।’ আসলে পছন্দ করি বলে অভিযোগ নাই সেটা আসলে ঠিক না। আমি সেদিন শিবুদাকে ঠিক গুছিয়ে বলতে পারি নাই। কেন তার উপর আমার অভিযোগ নাই। এটা অবশ্য আমার পুরানো সমস্যা সময়ের কথা সময়ে বলতে পারি না। অনেক পরে হইলে গুছিয়ে বলতে পারি।
ঐ ভাইয়ের উপর আমার কোন অভিযোগ নাই কারণ লেখাটা তিনি ছাপিয়ে ভালই করেছিলেন। আমি যখন লেখাটা লিখেছিলাম তখন আমার মনে হয়েছে লেখাটা ভাল হয় নাই। এখন যখন ঐ পুরানো লেখাটা দেখি তখন খুবই হাসি পায়, মনে হয় এটা কিছুই হয় নাই। কিন্তু লেখাটা যখন অন্যের নামে ছাপা হয়ে গেল এবং একটা পত্রিকায়। তখন মনে হয়েছে লেখাটা মনে হয় কিছু একটা হয়েছিল তা না হলে পত্রিকায় ছাপা হত না আর ঐ ভাইও এভাবে চুরি করতে পারতেন না। মনের মধ্যে একটা সাহস পেয়েছিলাম। তা না হলে মনে হয় কখনোই আর লেখা হতো না। তাই ঐ ঘটনা ছিল আমার জন্য একটা বড় অনুপ্রেরণা।
আমরা যখন প্রথম ‘চাকা’ পত্রিকা ছাপানোর প্ল্যান করি তখন থেকেই চেষ্টা করি যেন নতুন লেখক উঠে আসে। কয়েকজনের জীবনের প্রথম লেখাটিও ‘চাকা’য় প্রকাশিত হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সবাইকেই অনুপ্রেরণা দেয়ার চেষ্টা করি লেখার জন্য। আমি ভালমতই জানি লিখতে ইচ্ছা করলেও আমরা ভয়ে লিখি না। নিজের কাছেই নানা রকম প্রশ্ন তৈরি হয়, ‘না জানি লেখাটা কেমন হয়েছে’। সব সময় মনের মধ্যে খুঁতখুঁত করে।
আমি বিশ্বাস করি কেউ লেখা শুরু করলে এবং নিয়মিত লিখলে এক সময় তার লেখা আপনা থেকেই ভাল হয়ে যাবে যদি পাশাপাশি সে প্রচুর পড়ে।
.
১ ভাদ্র ১৪২৩