
এশীয় শিল্প ও সংস্কৃতি সভার একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভা। আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভা থেকে প্রতিবছর আহমদ ছফার মৃত্যু দিবস উপলক্ষে একটি স্মৃতিবক্তৃতার আয়োজন করে থাকে, নাম আহমদ ছফা স্মৃতিবক্তৃতা। এশীয় শিল্প ও সংস্কৃতি সভায় কাজ করার সুবাদে আমারাও কাজ করতে হয়েছে বেশ কয়েকবার এখনও চেষ্টা করি কাজ করে যেতে। প্রায় ৪/৫ বছর আগের ঘটনা হবে, সারারাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগিয়ে সকালে গেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের অফিসে। উদ্দেশ্য অডিটোরিয়াম বুকিং এর জন্য টাকা জমা দেওয়া, আগেই দরখাস্ত করে রাখা আছে।
অফিসে ঢুকে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম অডিটোরিয়াম ভাড়ার জন্য কোথায় টাকা জমা দিতে হয়, তিনি দেখিয়ে দিলেন। যাকে দেখিয়ে দিলেন তার কাছে গিয়ে বললাম আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভা থেকে এসেছি আপনাদের কাছে মনে হয় আগেই দরখাস্ত করা আছে আমি টাকা জমা দিতে এসেছি। ভদ্রলোক আমার দিকে একবার তাকিয়ে খাতা দেখে নিলেন এই নামে কোন বুকিং আছে কিনা। তারপর বললেন, টাকা দেন। টাকা দিলাম, টাকা নিয়ে রশিদে লিখতে লিখতে জিজ্ঞেস করলেন, আহমদ ছফা কে? আমি কোন উত্তর দিলাম না। সামান্য অবাক হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় কাজ করছেন অথচ আহমদ ছফার নাম জানেন না! অথচ প্রতি বছর এই অডিটোরিয়ামেই ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা’ হয়ে থাকে। তিনি আমার হাতে রশিদ ধরিয়ে দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন বললেন না ভাই? আহমদ ছফা কে? উনি কি আওয়ামী লীগ এর? নাকি বিএনপির? উনি উত্তরের আশায় আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। উত্তর তো একটা দিতেই হবে, আমি তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উত্তর দিলাম আহমদ ছফা–আহমদ ছফাই।
আমি আহমদ ছফাকে যে খুব ভালো জানি বা বুঝি তা না। তাঁর সম্পর্কে যা জেনেছি তা কাজের সুবাধে, সলিমুল্লাহ স্যার এর কাছ থেকে শুনে, স্মৃতিবক্তৃতায় বিভিন্ন বক্তাদের স্মৃতিচারণ শুনে এবং তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন লেখকদের কিছু স্মৃতিকথা পড়ে। আজকে হঠাৎ করে মনে হলো, বাণিজ্য অনুষদের অফিসের ঐ লোক ‘আহমদ ছফা কে?’ এই প্রশ্ন করে যে ভুল করেছিলেন, ঠিক একই ভুল বেগম খালেদা জিয়ার পিএস-ও করেছিলেন। কাকতালীয়ভাবে আমার উত্তর আর ছফা সাহেবের উত্তরও দেখলাম একই রকম। ছফা সাহেবের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার পিএস এর যে কথোপকথন হয়েছিল তা পড়েছি নূরুল আনোয়ার এর ছফামৃত গ্রন্থে। আমি তা হুবহু নিচে তুলে ধরলাম, সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার কথোপকথনও_
“ছফা কাকাই বেগম জিয়াকে ফোন করেছিলেন। ফোনটি ধরেছিলেন তাঁর পিএস। ছফা কাকা বিনয়ের সঙ্গে পিএসকে বলেছিলেন, ম্যাডামকে কি একটু দেয়া যাবে? আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই।
পিএস সাহেব জানতে চাইলেন, আপনি কে?
কাকার জবাব, আমি আহমদ ছফা।
পিএস সাহেব ফের জানতে চাইলেন, কোন আহমদ ছফা?
পিএস-এর কথায় ছফা কাকা ভয়ানক রকম খেপে গিয়েছিলেন। তিনি রাগলে সচরাচর যে গালটি তাঁর মুখ দিয়ে বার হত সেটি বেরিয়ে গিয়েছিল। তারপর তিনি কোন রকম ভূমিকা না করে বললেন, বাংলাদেশে আহমদ ছফা দু’জন আছে নাকি?
ছফা কাকা কথা না বাড়িয়ে রিসিভারটি ধপাস করে রেখে দিয়েছিলেন।
পিএস সাহেব ছফা কাকার এ অশোভন আচরণের কথা বেগম জিয়াকে জানিয়েছিলেন কিনা জানা যায়নি। কিছুক্ষণ পরে বেগম জিয়া ফোন করেছিলেন। ছফা কাকার কথার ঝাল তখনও থেকে গিয়েছিল। ফোন পেয়ে তিনি বেগম জিয়াকে বিরক্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ম্যাডাম, কী সব অশিক্ষিত পিএস টিএস রাখেন আহমদ ছফার নাম জানে না।
ছফা কাকার কথায় বেগম জিয়া হেসে জবাব দিয়েছিলেন, আমি নিজে অশিক্ষিত; শিক্ষিত মানুষ পাব কোথায়। আপনারা কেউ তো এগিয়ে আসছেন না?
বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি থেকে বাসায় লোকজন এলে কাকা বেগম জিয়ার সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়টি সবিস্তারে বয়ান করেছিলেন। তিনি বেগম জিয়ার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে বারবার বলে যাচ্ছিলেন, ভদ্রমহিলার তারিফ না করে পারা যায় না। তিনি আশ্চর্য রকম বিনয়ী।”
একটু আগে আনোয়ার সাহেব আরো লিখছেন, “নাজিম উদ্দীন মোস্তান কাকার আনুপূর্বিক তসলিমা এবং অন্যান্য স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ বইটি বেগম খালেদা জিয়ার হাতে পৌঁছিয়েছিলেন। বইটি পড়ে খালেদা জিয়া আহমদ ছফা সম্পর্কে জেনেছিলেন এবং তাঁকে ফোন করে দাওয়াতও করেছিলেন। তবে ছফা কাকা যাননি। তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে বলেছিলেন, যেতে পারি এক শর্তে। আমাকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে হবে। শেখ হাসিনার কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে রান্না করে খাইয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার রান্না করার সময়ও হয়নি, ছফা কাকাও যেতে পারেননি।” (ছফামৃত, নূরুল আনোয়ার)
http://arts.bdnews24.com/?p=2759
1. আহমদ ছফা_আহমদ ছফাই।
2. আমি নিজে অশিক্ষিত; শিক্ষিত মানুষ পাব কোথায়|
প্রশ্নই উত্তর>>>
1. আমরা এখনও আমাদেরকে চিনতে চেষ্টা করি…..
2. শিক্ষা্ই কি মানবতা শেখায়…..
Kub valo laglo 🙂 ahamed sharif
tomer likha valo
দুর মিয়া, আমার নাম কি আহমদ শরীফ নাকি? =D