ছোটবেলায় প্রথম ঈদের নামাজে যাওয়ার স্মৃতিটা কোনভাবেই মনে করতে পারতেছি না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে করার চেষ্টা করলাম। সবাই নিশ্চয়ই বাবার সাথেই প্রথম জামাতে যায়। কিন্তু আমার কোনমতেই সেই দিনটার কথা মনে পড়তেছে না। হয়তো অনেক ছোট ছিলাম তাই সেই স্মৃতি মনে আসতেছে না।
আমার প্রথম যে স্মৃতিটা মনে আসতেছে সেটা হইল আম্মার সাথে গিয়েছিলাম। গ্রাম থেকে দাদী আসছিল বেড়াতে। বাসা থেকে আম্মা, আপা, ভাইয়া, দাদীসহ দুইটা বেবিটেক্সিতে করে বায়তুল মোকাররমে গিয়েছিলাম। তখনও সম্ভবত আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করি নাই। তাই সবই আবছা আবছা মনে আছে, একদম পুরাপুরি সবকিছু মনে নাই। তাই বিস্তারিত কিছু লিখতে পারতেছি না। তবে আমরা মসজিদে যেন ঐ ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে না যাই সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হইছিল। আম্মা-দাদীদের সাথে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার মতো অন্য রকম স্মৃতির কারণেই সম্ভবত আবছা আবছা হলেও ঈদ আসলে ঐ স্মৃতিটা মনে পড়ে। বিশেষ করে নামাজের কথাটা আসলে। এই রকম অভিজ্ঞতা মনে হয় খুব কম মানুষেরই আছে।
এরপরের স্মৃতিগুলা মনে আছে, আমাদের দুই ভাইকে আব্বা নিয়ে যেতেন। একটু বড় হওয়ার পরে বন্ধুদের সাথে যাওয়া হইত। প্রথম প্রথম বেশিরভাগ ঈদের জামাতে নামাজ পড়া হয়েছে নাখালপাড়ার বেলাল মসজিদে। তারপরে বড় মসজিদে, আম্মা মারা যাওয়ার পরে রহিম মেটাল জামে মসজিদে। রহিম মেটালে অবশ্য খুব কম পড়া হয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই নাখালপাড়া বড় মসজিদেই নামাজ পড়া হয়েছে।
নাখালপাড়া ছাড়ার পরে একেক ঈদ একেক জায়গায় করা হয়েছে। প্রতিবারই নতুন নতুন মানুষজন সঙ্গী হিশাবে ছিল। কখনো পূর্ব পরিচিত, কখনো অপরিচিত। এলিফ্যান্ট রোডে থাকার সময় অনিক ভাই, মাসুদ ভাইয়ের সঙ্গে ঈদ করা হয়েছে।
অনেক ঈদ কেটেছে ভ্রমণের মধ্যে বিভিন্ন জেলায়। একবার দেখা গেছে একটা ঈদে রিমন ভাইয়ের বড় ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি টাঙ্গাইল আর ইশতিয়াক ভাইয়ের বাড়ি ধামরাইয়ে, তখন আমরা তেতুঁলিয়া টেকনাফ হাঁটতেছিলাম। একবার রাঙ্গামাটিতে সঙ্গী ছিলেন মোহাম্মদ ভাই, নিয়াজ ভাই। সেটা ছিল কোরবানীর ঈদ, মোহাম্মদ ভাইয়ের কোরবানী হওয়ার আগে অর্থাৎ বিয়ের আগের ভ্রমণ। একবার নেত্রকোনার কলমাকান্দায় আশফাক ভাই ছিলেন সঙ্গে। একবার কক্সবাজারে ঈদ কাটালাম। মালয়েশিয়াতে সঙ্গী ছিলেন শাহাদাত ভাই, বাহার ভাই। গত বছরে ভারতে ঈদে সঙ্গী ছিলেন, সোহাগ ভাই, হাসিব ভাই আর বাহার ভাই। বাহার ভাইয়ের সঙ্গে সম্ভত দুইটা ঈদ করা হয়েছে এমন আর কারো সঙ্গে দুই ঈদ করা হয়েছে কিনা মনে নাই।
সবকিছু ঠিকঠাক হলে আগামীতেও ঈদ করা হবে নতুন কোন জেলায় অথবা নতুন কোন দেশে। আবার এমনো হতে পুরাতন জেলা পুরাতন দেশ কিন্তু নতুন জায়গা। সঙ্গী থাকবে নতুন কেউ অথবা পুরাতন কেউ। অথবা কেউই না, শুধু একা। তবে সব সময়ই চেষ্টা থাকে সাইকেলটা যেন সঙ্গে থাকে।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭