কোরবানীর ঈদ আসলেই সব সময় এই গল্পটার কথা মনে আসে। আমরা তখন পশ্চিম নাখালপাড়ার নয় নাম্বার গলির ৫২০ নাম্বার বাসা বদলে এগার নাম্বার গলির ২৫৫ নাম্বার বাসায় এসেছি।
সেই গলিতে একটা বাসায় তিন ভাইবোন থাকতো। তাবন ভাই, মিথুন ভাই, আর শ্রেয়া। উনাদের বাবা বিমানে চাকরী করতেন। কখনো রাজশাহী, কখনো চট্টগ্রাম আবার কখনো সিলেট।
ঘটনাটা এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকেই শোনা। কোন এক কোরবানী ঈদে মিথুন ভাইদের গরু কেনা হয়েছে। সেই গরু এক বিকাল বেলা দড়ি ছিড়ে দৌড়াতে শুরু করলো। কাছাকাছি ছিলেন মিথুন ভাই তিনিও গরুর পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছেন। তখন মিথুন ভাই এইটে কি নাইনে পড়েন। তিনি গরুর পেছনে দৌড়াচ্ছেন আর চিন্তা করতেছেন কি করবেন। গরুর পেছনে ছুটতে ছুটতে ফার্মগেট চলে গেলেন। গরু একটু থেমেছে, সেই ফাঁকে তিনি বাসায় ফোনে খবর জানালেন। তখন টিএনটির যুগ মোবাইলের যুগ না। বাসা থেকে তাঁর বাবা জানালেন যেভাবেই হোক গরু আগে বাঁধতে হবে তারপর যেন আঙ্কেলকে জানানো হয়।
ফোন রাখতে রাখতে গরুর আমার ছুটতে শুরু করলো। এবার গরু থামলো বাংলামটর, মিথুন ভাই আবার ফোনে বাসায় জানালেন, কিন্তু জানিয়ে লাভ হচ্ছে না কারণ গরু তো বাঁধতে পারতেছে না। লোকজন গরুর সামনেও যেতে সাহস পাচ্ছে না, আর মিথুন ভাই বাচ্চা ছেলে বলা যায় কিছু করতেও পারতেছে না। আর এদিকে বাসা থেকেও মুরুব্বীরা বের হতে পারছেন না। কোথায় যাবেন দেখা গেল বাংলামটর গিয়েছেন কিন্তু সেখানে আর মিথুন ভাই অথবা গরু কেউ নাই। ফোনেও আর ট্রেস করা যাবে না।
সেই গরু মগবাজার মৌচাক হয়ে মালিবাগ এক গলিতে আটকা পড়লো। স্থানীয় লোকজন ধরে একটি খাম্বার মধ্যে ভালোমতো বাঁধলেন। তারপর বাসায় ফোন দিলেন মিথুন ভাই, ততক্ষণে রাত আটটা। মালিবাগ থেকে নাখালপাড়ায় ফিরতে ফিরতে রাত এগারটার মতো বেজেছিল। এই গল্প প্রায় সময়ই আলোচনা হতো অন্তত ঘটনা ঘটার পাঁচ বছর পর্যন্ত।
১৬ ভাদ্র ১৪২৪