আমার প্রথম বড় পরিসরে সাইকেল ভ্রমণ ছিল তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ। যে সাইকেলটায় চড়ে ভ্রমণ করেছিলাম সেই সাইকেলটি কাজের বিনিময়ে বড় ভাই রাসেল ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছিলাম। সাইকেলটি ছিল রোড বাইক। রোড বাইকের সিট সাধারণত শক্ত হয়। সিটে কোন ফোমটোম থাকে না। ঐটাও আলাদা ছিল না ফোম বিহীন শক্তপোক্ত সিট। সেটা দিয়ে তেঁতুলিয়া টেকনাফ ভ্রমণ করতে অনেক কষ্ট হয়েছিল।
আমার সাইকেল ঠিক করার জন্য মোটামুটি প্রথম থেকেই আল-আমিনের কাছে যেতাম। এ ছাড়াও মাঝে মাঝে আসে-পাশের দোকানে যেতাম লিক সারানোর জন্য। আর এলাকায় মানে নাখাল পাড়ার দিকে গেলে সব সময় যেতাম নাবিস্কো মোড়ে রহিম ভাইয়ের দোকানে। রহিম ভাইকে ছোট বেলা থেকেই চিনতাম। আমরা ছোটবেলায় রহিম ভাইয়ের কাছ থেকেই সাইকেল ভাড়া নিয়ে চালাতাম।
একদিন রহিম ভাইয়ের দোকানে গিয়েছি ব্রেক টাইট দেয়ার জন্য আর হালকা তেল দেয়ার জন্য। দোকানের পাসেই একটা সাইকেল বিক্রি হবে। সাইকেলের সিটটা দেখেই পছন্দ হয়ে গেল যদিও পুরনো ছিল। কিন্তু দেখেই বুঝা যায় বেশ আরামদায়ক সিট। রহিম ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই সাইকেল কত দামে বিক্রি হবে?’ রহিম ভাইয়ের উত্তর, ‘১৮০০ টাকা তুমি নিলে ১৫০০।’ আমার উত্তর, ‘ভাই আমার সিটটা লাগবে। যেমনে পারেন দেন।’ রহিম ভাই বিরক্ত, ‘দূর মিয়া, শুধু সিট বেঁচা যায় নাকি? আর সিট ছাড়া সাইকেল বিক্রি করুম কেমনে?’ আমি নাছোড় বান্দা, ‘ভাই আমার সাইকেলের সিট নেন, ঐটা লাগাইয়া দেন আর ্ঐ পুরান সিটটাই আমারে দেন।’ রহিম ভাই আইগুই করে ২৫০ টাকা আর আমার পুরান সিটের বিনিময়ে সিটটা আমাকে দিয়ে দিলেন।
এই সিটের উপর বসে মোটামুটি আমার অনেক বড় বড় ভ্রমণ সম্পন্ন করেছি। এই সিটের একটা বড় বৈশিষ্ট্য ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেও পাছা ব্যাথা করে না। আমি যদি কখনো সাইকেল পাল্টে অন্য সাইকেল নিয়ে যেতাম তখনো সিটটা পাল্টে এই সিটটা নিয়েই চালাতাম। গত দুই তিন বছর যাবত পাইথন বাইক চালাই সেটাতেও এই সিট লাগিয়ে চালাচ্ছিলাম।
মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে গিয়ারটা ঠিক করার জন্য অনেকদিন পরে ক্যাফে সাইক্লিস্টে গিয়েছিলাম আল-আমিনকে একবার দেখানোর জন্য। পাশাপাশি আল-আমিনের সঙ্গেও দেখা করার জন্য। এই কাজটা আমি অনেকদিন পর পর করি। কারণ এখন আর সাইকেল ঠিক করাতে দোকানে যেতে হয় না। সাধারণত নিজেই ঠিক করে ফেলি। তারপরও মাঝে মাঝে আল-আমিনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া হয় সাইকেল ঠিক করানোর উছিলায়। আল-আমিন সিট দেখেই বলল, ‘ভাই এই সিট আর কতদিন চালাবেন অনেক দিন তো হইল?’
মালয়েশিয়াতেও এই সিটসহ পাইথন সাইকেল নিয়ে গিয়েছিলাম। অনেকদিনের সার্ভিসের পর সিটটা আর সার্ভিস দিতে পারলো না এবার। সিটের একটা স্ক্রু গেল। আর সিটটাও ছিড়ে গিয়েছিল অনেকদিন আগে। স্ক্রুর প্যাচ কেটে যাওয়ার কারণে আর চালানোই যাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে সিটের মায়া ত্যাগ করে তিলক ইন্তাম শহরে এক দোকানে সিটটি পাল্টাতে বাধ্য হলাম।
সিটটি যখন দোকানে কিনতে যাই তখন দোকানীর সঙ্গে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছিল ভাষার কারণে। সেখানে হবিগঞ্জের এক বাঙ্গালীকে পেয়েছিলাম তিনি দোভাষী হিসেবে আমাদের সিটটি কিনতে সহযোগিতা করেছিলেন। পাশাপাশি কিছু কম পয়সায়ও কিনে দিয়েছিলেন।
৩০ আষাঢ় ১৪২৩
