কলিকাতা হারবাল ঔষধের জগতে বিস্ময়

সালাম চাচা তাঁর সুখ-দুঃখের কথা শুনাচ্ছেন আমাদের।
সালাম চাচা তাঁর সুখ-দুঃখের কথা শুনাচ্ছেন আমাদের।

কিছুদিন আগে ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ গ্রুপের সঙ্গে উত্তরবঙ্গে গিয়েছিলাম একটি ভ্রমণে। রংপুর হয়ে তিস্তা ব্যারেজ দেখে দুপুরে খাওয়ার জন্য গেলাম একটি ছোট বাজারে। জায়গাটার নাম সম্ভবত দোয়ানী। খাওয়াদাওয়ার পর শাহাদাৎ ভাই নামায পড়ার জন্য মসজিদে গিয়েছেন। ইউসুফ ভাই তাঁর ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত। আমিও তপন ভাইয়ের ক্যামেরা নিয়ে ক্লিক করছি। এমন সময় তপন ভাইকে এক মধ্য বয়স্ক লোক ডাক দিলেন। ডাক দিয়ে তাঁরা কথা বলছিলেন।

কি মনে করে আমিও এগিয়ে গেলাম। মধ্য বয়স্ক লোকটি তপন ভাইকে উদ্দেশ্য করেই বললেন, ‘আপনারা তো মনে হয় সাংবাদিক, আপনাদের কাছে একটা কথা বলি।’ তপন ভাই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, ‘আমরা সাংবাদিক না। আমরা এমনিতে বেড়াইতে আসছি আপনাদের এলাকায়।’ মধ্য বয়স্ক লোকটি তখন বললেন, ‘তারপরেও আপনাদের সঙ্গে একটু সুখদুঃখের কথা বলি। আপনারা তো বেড়াইতে আসছেন। ঢাকা যাইয়া তো ইন্টারনেটে একটা কিছু লিখতে পারবেন।’ আমি মাঝখানে জিজ্ঞেস করলাম আপনার নাম কি? চাচার উত্তর, ‘আব্দুস সালাম।’

তিনি শুরু করলেন তাঁর কথা এইভাবে, ‘অনেকদিন আগে, পোস্টার দেখে রংপুর গেছিলাম কলিকাতা হারবাল দোকানে। আমার মাথায় তো চুল নাই দেখতে পারতেছেন। পোস্টারের মধ্যে লেখা ছিল তারা চুল তোলার ঔষধ দেয়। যাইয়া সব কিছু বলার পর তারা আমার কাছে ঔষধের জন্য ২২০০ টাকা চাইল। আমিও চুল উঠবো এই আশায় ২২০০ টাকা দিয়া ঔষধ কিনলাম। তারা এত সুন্দর একটা প্যাকেট দিল। প্যাকেটের দামই অনেক টাকা হইব, দোকানের সামনে আর প্যাকেটটা খুললাম না। চিন্তা করলাম ভাল ঔষধ তাই প্যাকেটটাও সুন্দর দিছে। বাড়িতে আইসা প্যাকেটটা খুললাম। খুইলা দেখি প্যাকেটের ভিতরে সাতটা কাঠের টুকরা, আর একটা কাঠের গ্লাস। এই জিনিশ দেইখা সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিলাম, তারা বললো এইটাই ঔষধ। পানির মধ্যে কাঠ চুবাইয়া তারপর কাঠের গ্লাসে কইরা ৩৬৫ দিন পানি খাইতে হইবো। আপনারা কন? এইডা হইল? কাছ চুবাইয়া পানি খাইলে বলে চুল উইঠা যাইবো! আমাগো মত গরিব মানুষরে এমনে কইরা ঠকাইতাছে।’

DSC_0912
আব্দুস সালাম

কথাবার্তা শেষ করে বললেন, ‘যদি পারেন, আপনারা ইন্টারনেটে কিছু লিখখেন এই বিষয়ে। আপনাদের অনেক সময় নষ্ট করলাম। আসলে কিছু সুখদুঃখের কথা কইলাম আপনাদের সঙ্গে। আপনারা কিছু মনে কইরেন না।’ তপন ভাই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, ‘আরে নানা মনে করার কি আছে? আমরা দেখি কিছু লিখতে পারি কিনা।’ আমি পেছন থেকে বললাম, ‘আমরা তো সাংবাদিক না, তবে আপনার কথা আমি ইন্টারনেটে লিখবো আপনে চিন্তা কইরেন না।’ আমার কথা শুনে সালাম চাচা কিছুটা খুশিই হলেন।

পাশে দাঁড়িয়েই আমাদের কথা শুনছিলেন এক মহিলা। তিনিও একটা অভিযোগ তুললেন, ‘আমার মোবাইলেও একজন ফোন করছিল, আমার একটা অসুখ ছিল। ফোন দিয়া বলে আপনার অসুখ ভাল হয়ে যাবে। আপনি আমাদের দোকানে আইসেন। দোকানের নাম সেই কলিকাতা হারবালই কইল। এরা আমার নাম্বার কই পাইল? এটা এখনও বুঝতে পারলাম না! আর আমার অসুখের কথাই কেমনে জানলো?’

কলিকাতা হারবালের পোস্টার।
কলিকাতা হারবালের পোস্টার।

আগে ভাবতাম প্রতারণা শুধু ঢাকাতেই। এখন দেখছি প্রতারণা সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে।

সালাম চাচার সঙ্গে আরো অনেক কথা বার্তা বলে আমরা রংপুরের উদ্দেশে দোয়ানী থেকে রওনা দিলাম।

Comments

comments

Comments

  1. tapu

    Life Ride Run . are aita khub valo hoice , network er baherer keshu kotha akhon networkee.. poshondo hoice .

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.