
ছবি: মীর শামছুল আলম বাবু
হামিদ ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় তাঁর বাসায়। বাবু ভাই কোন এক কাজে তাঁর বাসায় যাচ্ছিলেন, সঙ্গে আমাকেও নিয়ে গেলেন। প্রথম দিন খুবই সাধারণ কথাবার্তা হয়েছিলো, ‘কেমন আছেন?’ ‘ভাল আছি’ টাইপের কথাবার্তা। এর কয়েকদিন পরেই ‘বাংলার সিনবাদ’ বা এই টাইপের কোন একটি শিরোনামে ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় একটি খবর। খবরটি ছিলো নৌকায় ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার রোমাঞ্চকর বর্ণনা, হামিদ ভাই কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে ছোট্ট একটি নৌকা নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন সেই কাহিনী।
পরবর্তীতে আবার দেখা হলো, ভ্রমণ বাংলাদেশের আড্ডায় (চারুকলার সামনে), তখন ভ্রমণ বাংলাদেশ থেকে মুজিব ভাইয়ের নৌকা নিয়ে আমরা কয়েকজন সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য মিটিং করছিলাম। তাঁর কাছ থেকে কিছু পরামর্শ নিয়েছিলেন টুটু ভাই। এর পরে বহুবার বহু জায়গায় দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। সাইকেলে ৬৪ জেলা ভ্রমণে যাওয়ার আগে একবার দেখা হয়েছিলো শাহবাগে। সেদিন কথায় কথায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি কি ৬৪ জেলা ভ্রমণে একাই যাচ্ছেন?’ উত্তরে, ‘হ্যা’ বলার পর তিনি বললেন, ‘ওহ! খুবই ভালো। আপনার দলে আপনিই সব চাইতে বুদ্ধিমান, কারণ এখানে আপনি যখন একটি সিদ্ধান্ত নেবেন তখন আর কেউ থাকবে না আপনার সিদ্ধান্ত বিরোধিতা করার জন্য।’ ভ্রমণের জন্য শুভ কামনাও জানিয়েছিলেন। তাঁর এই কথা মনের মধ্যে গেথে গিয়েছে।
গত বছরের (২০১২) জুন মাসে অফিসের একটি প্রোগ্রামে ‘বে অব বেঙ্গল ফ্যাস্টিভাল’ গেলাম কক্সবাজার। অফিসের আমন্ত্রণে হামিদ ভাইও সেখানে গিয়েছিলেন। প্রথমদিনের প্রোগ্রামে ছিলো ম্যারাথন, দ্বিতীয় দিন সাইক্লিং। দ্বিতীয় দিন সকালে সাইক্লিং করার জন্য আমরা সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এমন সময় হামিদ ভাই কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কি সাতার জানেন?’ উত্তরে বলেছিলাম, ‘যা জানি তা বলার মতো না, সুইমিং পুলের সাঁতার। সুইমিং পুলের একপার থেকে আরেক পারে যেতে পারি।’ তিনি শুনে আমাকে বললেন, ‘ঢাকায় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, ৭ দিনে সাতার ভালো মতো শিখিয়ে দেবো। এর পরে ৬ মাস আমার কাছে ট্রেনিং নিবেন, সাতার, দৌঁড় আর সাইক্লিং। এই তিনটা মিলে যেটা হয় সেটাকে বলে ট্রাইথলন। আপনাকে আমি বাংলাদেশী আইরন ম্যান বানাবো।’ ঢাকায় ফেরার পর অফিসে আবার দেখা হয়েছিলো, অফিস থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন সাঁতার আর ট্রাইথলনের কথা। সেটাই ছিল হামিদ ভাইয়ের সঙ্গে শেষ দেখা এবং শেষ কথা।
যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, তাহলে হয়তো আমি তাঁর অধিনস্তে ট্রাইথলনের জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারতাম। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি, এই বিষয়টা আমাকে সারাজীবন কষ্ট দিবে।
