কি হতে চাই?

মানুষের নানা রকম বাসনা থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই বাসনা পাল্টায়। স্কুলে ঢুকার পর থেকেই বড়দের একটা সাধারণ প্রশ্ন বড় হয়ে কি হতে চাও? এই ধরণের প্রশ্ন নিশ্চয়ই সবার সম্মুখিন হতে হয়। আমারও কম হতে হয় নাই।

আমি যখন প্রথম প্রথম স্কুলে ভর্তি হই তখন মনে হতো কবে যে বড় হব? বড় হতে পারলেই বাঁচি, কোন শাসন থাকবে না। এটা করতে পারবা না ঐটা করতে পারবা না এইসব।

পাশাপাশি হঠাৎ একদিন ইচ্ছা হল আসক্রিম বিক্রেতা হব। কারণ ইচ্ছামত আইসক্রিম খেতে পারব। সেটা হয়তো আইসক্রিম প্রিয় ছিল বলেই এমন হয়েছে। এখন ভাবলেই নিজে নিজে হাসি।

এইরকম আরেকটু বড় হওয়ার পর ইচ্ছা জাগল বড় হলে স্কুলের শিক্ষক হব। শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম শিক্ষা দেয়ার জন্য না। ছাত্রদের পেটানর জন্য, পড়া না পারলে অথবা কোন না কোন দোষ পেলেই পেটাব। আহা কি শান্তি! সেটার ইচ্ছা জেগেছিল সম্ভবত স্কুলের শিক্ষকদের মাইরের ভীতি থেকে। সেটা তৈরি হয়েছিল অনেকটা রাগ থেকেই।

এরপর হঠাৎ ইচ্ছা জাগল দুইতিন মাস গার্মেন্টসে চাকরী করব। এই ইচ্ছার কারণটা অন্যরকম। দুইতিন মাসের টাকা পেয়ে কি কি করবো তারও একটা তালিকা তৈরি করে ফেলেছিলাম। সেটা হল ঘটা করে একটা জন্মদিন পালন করবো। সেই জন্মদিনে সুন্দর একটা ক্রিমওয়ালা কেক থাকবে, অনেক অনেক মিষ্টি থাকবে। পছন্দের সকল বন্ধুরা সেই জন্মদিনে উপস্থিত থাকবে।

আমি একটা সময় প্রায় বছর খানেকের মত গ্রামে ছিলাম। আরো বেশিও হতে পারে। তখন একবার বাসনা জাগল হুজুর হব। কারণ হুজুররা অনেক দাওয়াত পায় বিভিন্ন বাড়িতে। আর সব বাড়িতেই হুজুরদের আলাদা সম্মান দেয়া হয়। তরকারীর সবচাইতে ভাল মাংসর পিছটা তাঁকে দেয়া হয়।

যখন বয়স আরো বাড়লো তখন আবার শিক্ষক হওয়ার বাসনাও তৈরি হল। তবে এবার আর ছেলেপেলেদের মারার জন্য না, না মারার জন্য। মনে হতো কাউকে না মেরেও বুঝিয়ে পড়িয়েও ভাল শিক্ষক হওয়া যায় সেই রকম একটা উদাহরণ সৃষ্টি করবো। স্যারদের দেখিয়ে দিব শুধু মাইর দিয়ে সব কিছু হয় না।

হঠাৎ একবার ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার ইচ্ছা জাগল। ফুটবল খেলতে যেয়ে একবার পা’ও ভাঙ্গলো। এর পর আর ঐভাবে কখনো ফুটবল খেলা হয় নাই।

আইসিসি ক্রিকেটে বাংলাদেশের উত্থানের পরে ক্রিকেটার হওয়ার বাসনা জাগল। এই দিকে বলা যায় কিছুটা হলেও আমি সফল হয়েছিলাম। বহুদিন ক্রিকেটের পিছনে সময় দিয়েছি। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে যখন খেলতাম তখন খুব একটা উন্নতি করতে পারি নাই। শাহিনবাগে টাইগার ক্রিকেট ক্লাবে ঢুকার পর বেশ উন্নতি হল ক্রিকেটে। টাইগার ক্রিকেট ক্লাবে ত্রিশ জনের মত খেলোয়াড় ছিল। প্রথম এগার জনে সুযোগ পাওয়াটা ছিল খুবই কঠিন। বছর দুয়েক শুধু পানি টানতে হয়েছে। এক সময় এগারো জনের মধ্যে জায়গা পেয়ে যাই। এর পরে আর পিছনে তাকাতে হয় নাই। এক সময় ক্লাবের ক্যাপ্টেনও হয়ে গিয়েছিলাম। তখন বিভিন্ন জায়গায় ডাক পেতাম খেলতে যাওয়ার জন্য। গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, সাভার অনেক জায়গায় খেলতে গিয়েছি। চূড়ান্ত পর্যায়ে রিংকু ভাই যাঁকে আমি ক্রিকেটিও গুরু মানি। তিনি আবহানীতে গেলেন খোঁজ নিতে ভর্তি হওয়ার জন্য। জানতে পারলেন ঐখানে ভর্তি হতে দশ হাজার টাকা লাগে। ঐ রকম সময়ে দশ হাজার টাকা দিয়ে আবহানীতে ঢুকা খুবই কঠিন ছিল আমার পক্ষে। ক্রিকেটও আর বেশি দিন আগায় নাই।

এই রকম আরো অনেক ইচ্ছা ছিল। তালিকা হয়তো আরো দীর্ঘ করতে পারি কিন্তু সে দিকে না যাই। এখন অনেকদিন পরে এসে চিন্তা করি এখন কি হতে চাই?

এখনকার চিন্তাটা অনেকদিন যাবৎ স্থির হয়ে আছে। হয়তো এই বাসনাটা দীর্ঘদিন থাকবে। জানি কোনদিন হতে পারব না। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি।

যদি সত্যিকারের মানুষ হতে পারতাম! এখন আর কিছু হতে চাই না।

.
আমি মানুষ হতে চাই।

.
.
২ আষাঢ় ১৪২৩

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.