কু ঝিক ঝিক ২

সব সময় তেজগাঁও স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠলেও এই দিন কমলাপুর থেকে উঠেছিলাম। সুরাইয়াকে সায়দাবাদ বাসে উঠিয়ে দিয়ে আমি কমলাপুর। ঘড়িতে তখন মাত্র সাড়ে ছয়টা। এই ভোরবেলাতে প্রচুর লোকজন স্টেশনে। অনেকে চট্টগ্রাম থেকে অথবা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফিরেছেন। আর কিছুদিন পরে ঈদ সেই ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার জন্য লোকজন লাইনে দাঁড়িয়ে আছে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট কাটার জন্য। এই দৃশ্য পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সম্ভবত কমই দেখা যায়।

আমিও লাইনে দাঁড়ালাম। আমার ঝামেলা কম, আজই টিকেট কাটবো আজই বাড়ি যাব। কিন্তু লোকাল ট্রেনের টিকেট দেখা গেল চারটা ট্রেনের টিকেট একজন দিচ্ছে। তবে কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট করতে হয় না তাই খুব বেশি সময় লাগলোও না। এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল কারণ টিকেট ছাড়ে সাড়ে সাতটায়।

খুব সকালে উঠলে সব সময় আমার টয়লেটে একটু ঝামেলা হয়। বাসায় একবার পেট খালি করে আসার পরেও যে কিভাবে আবার পেট ভরে গেল ঠিক বুঝলাম না। পোয়াখানেক টয়লেট করার কারণে দশ টাকা দিতে খুব একটা খারাপ লাগলো না।

যথারীতি ট্রেনে উঠে বসলাম। জানালার পাশেই আমার সিট। জানালার পাশে সিট পড়লে খুবই ভালো লাগে। আরো ভাল লাগলো আমার সহযত্রীদের মধ্যে দুইটা পিচ্চি আছে। ট্রেনে আশেপাশে বাচ্চা থাকলে আমার খুবই ভাল লাগে। এঁরা অবাক হয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখে। আর একটু বন্ধুত্ব করতে পারলে নানারকম প্রশ্ন করে। মনে হয় যদি আবার যদি এঁদের বয়সে ফিরে যেতে পারতাম। কিন্তু যখন ছোট ছিলাম তখন দেখা গেছে বড় হতে চাইতাম। অনেকটা রবী ঠাকুরের সেই বাণীর মতো, ‘নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।’

আমার জানালার পাশে যে পিচ্চিটি দাঁড়িয়ে ছিল ওর বয়স চার কি পাঁচ। নাম সায়েম। প্রথম প্রথম চুপচাপ থাকলে আমিও কথাবার্তা বলার পর সেও কথাবার্তা বলা শুরু করলো। নানা রকম প্রশ্ন যেমন: ‘আচ্ছা আঙ্কেল এই ট্রেনটা এখনো ছাড়ছে না কেন? ট্রেনটা কোথায় যাবে? কতক্ষণ লাগবে? পাশের ট্রেনগুলা আগে ছাড়ছে কেন? আমাদেরটা পড়ে ছাড়বে কেন?’

সায়েমের হাতে ঘড়ি ছিল। সে তাঁর দাদার কাছ থেকে জেনে নিয়েছিল ট্রেন ছাড়বে সাড়ে আটটায়। কিন্তু ট্রেন ছাড়লো নয়টার দিকে। এই নিয়েও সায়েম বেশ চিন্তিত। ট্রেন ছাড়বে তো? ট্রেন না ছাড়লে ওরা কিভাবে যাবে? ট্রেন ছাড়ার পরে সায়েম নিশ্চিন্ত হলো।

অবাক হয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখতে দেখতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো জানালায় মাথা রেখে। খুব সকালে উঠেছে তাই হয়তো ভাল ঘুম হয় নাই।

টঙ্গী পার হওয়ার পরে এক ঔষধ বিক্রেতা উঠলেন। এমন বিক্রেতা প্রচুর উঠে এই ধরনের লোকাল ট্রেনে। আমি ছোটবেলা থেকেই এদের লেকচার শুনি অবাক হয়ে। ঔষধ বিক্রেতার নামটা মনে নাই। তবে তিনি এই লাইনে তের বছর আছেন। তিনি মূলত ব্যাথানাষক ঔষধ বিক্রি করেন। কিন্তু এই ঔষধ খেতে হয় না মোমড়ে বেধে রাখতে হয়। একটা কাছে ডাল কেটে সবাইকে দিচ্ছেন। হাদিয়া কোন নির্দিষ্ট নাই। যে যা দেন তাই। কিন্তু কারও যদি বয়স্ক মায়ের জন্য নেন তো তিনি টাকা নেন না। শুধু তাঁর জন্যে দোয়া করলেই হবে। বিষয়টা সত্যিই মজার…

২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.