প্রিয় মানিক,
সবকিছু শেষ পরে বলছিলা বিয়া তো শেষ হইয়া গেল, ‘কোন কমেন্ট করবি না?’ উত্তরে বলছিলাম, একটা খোলা চিঠি লিখবো অপেক্ষা কর।’ ইহা একটি খোলা চিঠি। অনুষ্ঠানের আগের রাতে ফোন দিয়া বললা, ‘অনুষ্ঠানে কিন্তু আসতেই হইব এইটাই শেষ অনুরোধ আর কোনদিন অনুরোধ করবো না।’ এই শেষ মানে কিন্তু অবচেতন মনে একটা সত্য কথা বলে দিল, এর উত্তরটা দিমু দশ বছর পরে যদি বেঁচে থাকি। যাই হোক তুমি আমার মত একটা অসামাজিক পোলারে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল কইরা অনুষ্ঠানে নিয়া গেছ। এরপরে একটা ঠাণ্ডা খোলাচিঠি না লেইখা ছাড়া যায়?
রুবেল বলতেছিল, ‘শরীফ একটা বিষয় খেয়াল করছো, পুরনো বন্ধুর কথা চিন্তা করলে কিন্তু আমি আর তুমি ছাড়া কেউ নাই মানিকের।’ চিন্তা করে দেখলাম তাই তো। শুভ-তুহিন ছোট ভাইয়ের মত হইলেও বন্ধু তো অবশ্যই। তবে সমবয়সী বন্ধু বলতে আমরা দুই জনই কথা সত্য। সেই জায়গা থেকে সব কিছু আমাদেরই করার কথা ছিল। কিন্তু আমরা হইলাম আকাইম্মা। এক দিক দিয়া ভালই হইছে, আমরা যদি সব করতাম তাহলে হয়তো তোমার ফুলের বিছানায় ফুলের পাশাপাশি দুই চাইরটা আলপিনও দিয়া আসতাম। এটা নিশ্চয়ই ভাল হইতো না। আমি না দিলেও রুবেল তো দিতই কারণ তোমার বিয়ে দেখে রুবেলের একটু একটু হিংসা হইতেছিল। এই কথা কিন্তু আমি বানাইয়া কই নাই কথা সত্য।
বিয়া তো শেষ হইয়া গেল সঙ্গে আরো অনেক কিছু শেষ হইয়া গেল। যেমন এখন আর আমরা চাইলেও স্কুল জীবনের মতো যন্ত্রপাতির এটাসেটা খুলে দেখার সময় পাব না। এমনিতেই চাকরী জীবনে আইসা সবাই ব্যস্ত হয়ে গেছি সেই ব্যস্ততা আরো বাড়বে। এত ব্যস্ততার মাঝেও যখন বন্ধুদের নিয়া একটু আড্ডা দিবা তখন বাসা থেকে ফোন আসবো, ‘তুমি কই? এত দেরি কেন?’ এইগুলা অবশ্য বড় ভাইদের দেখে অনেক আগেই শিখে ফেলছি। সমস্যা হইল আমি আর রুবেল এই বিষয়গুলা ট্যাকেল দিতে পারলেও তুমি কত পারবা এইটা দেখার বিষয়। এখন থেকে দুই জায়গায় কথা শুনতে হবে, ঘরে তো খোঁচা খাইবাই সঙ্গে বন্ধুদের কাছেও।
বিয়া তো শেষ হইয়া গেল সঙ্গে কিন্তু তাকে নিয়ে তোমার কবিতা লেখা গান লেখাও শেষ হইয়া গেল। সঙ্গে আরো শেষ হইল রাত ২/৩টা পর্যন্ত মুভি দেখা তারপর সকাল পর্যন্ত এক সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমানো। আহা শান্তির দিন শেষ হইল। সঙ্গে শুরু হইল তোমার নতুন পরাধীনতা এখন থেকে আরো নতুন একজনকে কৈফয়ত দিতে হইবে। অবশ্য এই বিষয়ে তুমি আগে থেকেই সৎ।
আরো অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা করতেছে কিন্তু আজ এই পর্যন্তই থাক। বাইরে বৃষ্টি হইতেছে এখন আর কিছু না লিখি। শুধু শেষে লিখছি এক বিবাহিত বড় ভাই আরেক অবিবাহিত বড় ভাইকে বিয়ের আগে লেখা কয়েকটা উপদেশ বাণী।
“হে পুরুষ যেইদিন তোমার বিবাহ হইয়াছে সেই দিন তুমি তোমার শারীরিক পুরুষত্ব প্রমাণ করিলেও মনের পুরুষত্ব যে কোন সময় হারাইয়া যাইতে পারে তাহার শংকা জাগিয়াছে। সুতরাং সাধু সাবধান।”
“বিবাহের পর যথা সম্ভব বধির হইয়া যাও… নারীর প্রথম এবং একমাত্র কাজ হইতেছে অভিযোগ করা। শুনিবার চেষ্টা করিলেই বিপদ। তাহার মাত্রা বাড়িতেই থাকিবে। বলিতে থাকিলে এমন একটা ভাব করিবে যেনো খুব শুনিতেছ। প্রতিউত্তরে দীর্ঘসস্বাস ছেড়ে বলিবে, “ঠিকই বলিয়াছ… দেখি কি করা যায়”।
কিন্তু তুমি কিছুই করিবে না। আপন কাজ কর। ওরা এমনিতেই ভুলিয়া যাইবে… মনে রাখার মত স্মরণ শক্তি তাহাদের নাই.. কারণ মস্তিস্কে তো কিছু থাকিতে হইবে.. ”
“ঝগড়া বাধিবেই। তাহাতে চিন্তার কিছু নাই। কিন্তু তাহাকে প্রলম্বিত হইতে দিবা না। সহজ উপায় সামনে থেকে সরিয়া যাও। বাইরে ঘুরিয়া আস.. এক প্লেট ফুচকা খাইয়া আস… এমন একটা ভাব নিয়া বাইরে যাইবে যাহাতে মনে হইবে তুমি আজ রাগে খুব সাংঘাতিক কিছু একটা করিয়া ফেলিবে… কিছুক্ষণ পর ফিরিয়া আস… দেখিবে সব কিছুই স্বাভাবিক হইয়া গিয়াছে…”
“বউকে সব কিছু বলিও না… নিজের গোপন তো দুরে থাকুক… অন্যের গোপন কিছুও বলিও না… সন্দেহ প্রবণ নারীর মনকে আরো সন্দেহ প্রবণ করিয়া তুলিও না।”
বন্ধু বলিয়া আমরা যারা ছিলাম ভুলিয়া যাও… অন্তত কিছুকাল। কারণ যে বন্ধুদের কল্যানে আজ এতকিছু হইতেছে সেই বন্ধুরাই কিন্তু তোমার বউ এর সতীন হিসাবে আবিভূর্ত হইবে। তাহাদের লইয়া তোমার কিসের এত আদিখ্যেতা… ই্ত্যাদি বক্র বানে জর্জরিত হইতে হইবে। (ইহা অধমের কথা নহে, সেই বড় ভাইদের কথা।)
.
সর্বশেষ কথা এই চিঠি ভুলেও তাঁহাকে দেখাইও না। এখন থেকেই কৌশলী হও…
২৭ আশ্বিন ১৪২২
ছবি: তুহিন ও শুভ।


