পশ্চিম বঙ্গীয় সাইক্লিং করচা-২ (রিস্কি টায়ার)

এবারের পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণে একটা রিস্কি এক্সপেরিমেন্ট করলাম। আমার ট্রেক সাইকেলটা যখন কিনি তখন এটার টায়ারের অবস্থা একদমই ভাল ছিল না। মোটামুটি অনেকটা ক্ষয় হয়ে গিয়েছিল। ঠিক করেছিলাম আপাতত ঢাকায় চালাবো। লং ট্যুরে গেলে পাল্টাবো। একবার বাহার ভাইয়ের সঙ্গে প্ল্যানও করেছিলাম বন্ট্রেজার অথবা শেলভির টায়ার আনাবো। কিন্তু ভারত ভ্রমণের সময় অনেক খরচের বিষয় চলে আসায় আবার পিছিয়ে যাই।

এর মধ্যে বাহার ভাইয়ে আম্মা মারা গেলেন। আন্টি মারা যাওয়ার পরে মিলাদে গিয়েছিলাম বনশ্রী। তখন মিঠুন ভাইও সঙ্গী হয়েছিলেন। প্রথমে মালিবাগ রেলগেট তারপর সেখান থেকে উবারে বনশ্রী। যেতে যেতে সাইকেল নিয়ে কথা হচ্ছিল, টায়ার কিনতে হবে কি টায়ার কিনবো এইসব হাবিজাবি বিষয় নিয়া কথা চলতেছিল। মিঠুন ভাই বললেন, ‘উনার সাইকেলে পেরেক ঢুকে টায়ারের অবস্থা রফাদফা।

তাই তিনি নতুন টায়ার কিনেছেন একদম নতুন টায়ার। আমাকে পরামর্শ দিলেন আমি যদি টায়ার কিনি তাহলে যেন একটা কিনি আরেকটা উনার বাসা থেকে নিয়া আসতে। কি মনে করে ফেরার সময় উনার বাসা থেকে দুইটা টায়ারই নিয়া আসলাম।

একটা টায়ার বেশ ভাল। আরেকটা টায়ার প্রায় এক ইঞ্চির মতো ফাঁক হয়ে আছে। এমনভাবে টায়ার ফাঁক হতে আগে কখনো দেখি নাই। এমন যায়গায় ফাঁক হয়েছে শেলাই করারও উপায় নাই। তবুও দুইটা টায়ারই বাসায় নিয়ে আসছিলাম।

তারপর যা হয় হোক চিন্তা করে পুরানা টায়ারটা প্রায় ৪ ইঞ্চির মতো কেটে ফেললাম। সেই কাটা টায়ারকে ঘসেঘসে আরো পাতলা করলাম। তারপর ফাঁক হওয়া টায়ারে গেটিস দিয়ে লাগালাম। দেখলাম মোটামুটি চলে। সাইকেলে যেহেতু পেছনের চাকায় প্রেসার বেশি পড়ে আর প্যানিয়ার থাকার কারণে ওজন বেশি থাকে, তাই পেছনে ভাল টায়ারটা লাগালাম। আর সামনে দিলাম নষ্ট টায়ারটা। টায়ারে লেখা ছিল এই টায়ার পিএসআই নিতে পারে সর্বচ্চ ৬৫ আর সর্বনিম্ন ৪০। আমি সামনের চাকায় পিএসআই হিশাব করে আরো কমিয়ে দিলাম। ৩৫ এর মতো দিলাম। যাতে টায়ারে অতিরিক্ত প্রেসার না পরে।

তারপর ঢাকায় মোটামুটি ১০০ কিলোমিটারের মতো চালিয়ে প্রেকটিস করে দেখলাম কোন ঝামেলা হয় কিনা। কোন ঝামেলা যখন হইল না, তখন মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়া নিলাম এটা দিয়াই দেখি কতদূর কি করা যায়।

মোটামুটি দুইতিন রকম ব্যাকাপ নিয়া নিলাম। ঢাকা থেকে চালানো শুরু করবো। যদি ঝামেলা হয় তো গাজিপুরে টায়ার পালটে ফেলবো। তারপরও ঝামেলা না হলে ময়মনসিংহ। তারপরও ঝামেলা না হলে দূর্গাপুর গিয়ে পাল্টাবো।

এভাবে একটা একটা ধাপ পার হয়ে হয়ে ১৭৫ কিলোমিটার চালিয়ে যখন দূর্গাপুর পৌঁছাই তখনও দেখলাম টায়ার বহালতবীয়তেই আছে। কোন ধরণের ঝামেলা করে নাই। এর মধ্যে ময়মনসিংহ পার হয়ে তারাকান্দার দিকে রাস্তা ভয়াবহ খারাপ ছিল, সেখানেও কোন ধরনের ঝামেলা করে নাই।

এভাবেই একদিন একদিন করে টায়ারটা অনেকদিন সাপোর্ট দিল। বলা যায় টানা ১২ দিন ঝামেলা ছাড়াই ঢাকা থেকে দুর্গাপুর, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, ইসলামপুর, ফারাক্কা, মুর্শিদাবাদ, কৃষ্ণনগর হয়ে কলকাতার পর্যন্ত নিয়া গেছে।

এই কয়দিনে ঢাকার প্রেকটিসের কিলোমিটার ধরলে সেই টায়ার মোটামুটি ১৩০০/১৪০০ কিলোমিটার সাপোর্ট দিল। কলকাতায় ঢুকার আগে সেই টায়ারের ফাঁক হওয়া এক ইঞ্চি থেকে প্রায় আড়াই ইঞ্চি বেড়ে গিয়েছিল। তাই আর সাহস না করে ঐখানকার স্থানীয় একটা টায়ার নিয়ে পালটে ফেলি। নতুন টায়ারের দাম পড়েছিল ২১০ রুপি।

পথে ভাঙ্গা রাস্তা না পড়লে হয়তো এটা দিয়া পুরা ট্রিপটাই শেষ করে ফেলা যেত।

 

৪ আষাঢ় ১৪২৬

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.