পুরনো বন্ধুকে খুঁজে পাওয়া

ছবিটা তোর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নিলাম।
ছবিটা তোর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নিলাম।

স্কুল বন্ধুদের মধ্যে নব্বই শতাংশই হারিয়ে গেছে। ভাল মত হিসাব করলে আরো বেশি হবে। লিটল জুয়েল প্রি ক্যাডেট স্কুলে থাকতে বাবুর সঙ্গে পরিচয় হইছিল। বলা যায় জন্মের পর চার-পাঁচ বছরের মধ্যে পরিচয়। বাবুর সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে, সম্ভবত এই যোগাযোগ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকবে।

আমি প্রায়ই ফেসবুকে পুরনো বন্ধুদের খুঁজি। বেশির ভাগ সময়ই পাই না। তবুও খোঁজা অব্যাহত রাখি, একদিন না একদিন কাউকে না কাউকে পাবই, এই আশায়। চতুর্থ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় পরিচয় হয়েছিল রাজিবের সঙ্গে। আমরা একই পাড়াতে থাকতাম। আমরা ঐ এক ক্লাশ পর্যন্তই এক সঙ্গে পড়েছি তাও দুইজন দুই শাখায় আমি ‘খ’ শাখায় রাজিব ‘ক’ শাখায়। এলাকায় অনেক বন্ধু ছিল, হিমেল, তমহা, পারভেজ। রাজিবের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর ওর সঙ্গেই বেশি ঘোরাফেরা করতাম।

এক সময় রাজিবরা এগার নাম্বার গলি ছেড়ে দশ নাম্বার গলিতে চলে গেল। আমাদের দূরত্ব আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলে। মাঝে মাঝে কথা হতো, হায় হ্যালো পর্যন্ত। কোন এক কারণে আমরা কথাবার্তা বলাও বন্ধ করে দিলাম এক সময়। কারণটা কি ছিল এখনো মনে করতে পারতেছি না। এক সময় রাজিবকে হারিয়েই ফেললাম।

বেশ কিছুদিন থেকে রাজিবকে খুঁজছিলাম। কিন্তু কোন কূলকিনারা পাচ্ছিলাম না। একটা কথা সত্য রাজিবকে ফেসবুকে কখনো খুঁজি নাই। নাখালপাড়া গেলেই ওকে খুঁজতাম, কার কাছে যেন শুনেছিলাম নাখালপাড়া অনেক আগেই ছেড়ে গেছে। সুজন অথবা কার কাছ থেকে যেন রাজিবের আম্মার নাম্বার নিয়েছিলাম। একদিন কোন কারণ ছাড়াই মোবাইলে পুরনো নাম আর নাম্বারগুলা দেখছিলাম। সেখানেই রাজিবের মার নাম্বারটা পেয়ে গেলাম। পুরনো নাম্বার মুছে না দেয়াটা অনেক বড় সারপ্রাইজ হতে পারে আগে বুঝি নাই।

সেই নাম্বারের সূত্র ধরেই রাজিবকে খুঁজে পেলাম। প্রথমেই রাজিবের আম্মাকে ফোন, খালাম্মা চিনতে পারছে কিনা জানি না। ফোনটা ধরিয়ে দিল রাজিবের বউয়ের কাছে, রাজিব বাসায় নাই তাই। রাজিবের বউয়ের প্রশ্ন, ‘আপনে কে?’ স্কুল ফ্রেন্ডের পরিচয়ে নাম্বার নিলাম। এসএমএস পাঠানো, ফেসবুকে অ্যাড। হয়তো আবার যোগাযোগ শুরু হলো। একদিন দেখাও হবে আমাদের।

ক্যালেন্ডারে হিসাব করতে বসে কোন কূলকিনারা পাচ্ছি না, শেষ কবে দেখা হয়েছে। বার বছরের কম হবে না। রাজিব তোর কি মনে আছে শেষ কবে আমাদের দেখা হয়েছে? শেষ কবে কথা হয়েছে?

আমার বাউণ্ডুলে জীবনের শুরুর দিকে রাজিবকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলাম। আমরা এক সঙ্গে বহু জায়গায় হেঁটে বেড়িয়েছি। কত উদ্ভট কাজ যে করতাম তার কোন হিসাব নাই। আমরা একসঙ্গে বহুকিছু করেছি, অনেক স্বপ্ন দেখেছি। এখন সবই হাস্যকর শোনাবে সেইসব কথাবার্তা, স্বপ্ন দেখা, ক্রিকেট খেলা, ফুটবল খেলা, বয়সন্ধির কথাবার্তা, বাল্য প্রেম অনেক কিছু।

রাজিব তোর কি মনে আছে? আমরা কোরবানী ঈদে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম গরু গুনার জন্য, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে খেঁজুরের বিচি কুড়াতাম, ম্যাচের প্যাটেক, সিগেরেটের প্যাকেট, রাস্তার সবই মনে হয় আমরা কুড়িয়ে আনতাম। ঈদের নামাজ পড়ে বেশি সোয়াবের আশায় নাবিস্কো বেগুনবাড়ি সাতরাস্তা ঘুরে বাড়ি ফিরতাম! রোজায় পাল্লা দিয়ে সব রোজা রাখার চেষ্টা করতাম, রাস্তায় ঈদকার্ড বিক্রি করতাম। কোন এক বছর কারা যেন আমাদের দোকান ভেঙ্গে দিয়েছিল!

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.