প্রথম বইয়ের কথা হিসাব করলে বলা যায়, অ আ এ ঐ, ক খ গ ঘ শিখেছিলাম যে বই দিয়ে সেটা। কিন্তু সেই বইয়ের নাম মনে নেই। এর পরে একটা কিন্ডারগার্টেনে পড়াশোনা করেছি। কোন বইয়ের নামই মনে নেই। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পরে তিনটি বই হাতে পেলাম বাংলা, অংক আর ইংরেজি। শুধু বাংলা বইটার নাম মনে আছে সম্ভবত ‘আমার বই প্রথম ভাগ’ অথবা ‘আমার বাংলা বই প্রথম ভাগ’ হবে।
ঐ বই আমাকে তেমন একটা আকর্ষণ করতে পারেনি। বড় ভাই অথবা বোনের নবম-দশম শ্রেণির বই বেশি আকর্ষণ করতো যদিও কিছু বুঝতাম, বানান করে পড়ার চেষ্টা করতাম। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বাজার থেকে খাতা কিনতাম, খাতার কভারে অবশ্যই মিনা কার্টুন থাকতে হবে। খাতায় মিনা কার্টুনের কাহিনী থাকে, প্রতিটা খাতায় আবার প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় খণ্ড, তৃতীয় খণ্ড এই রকম সাত বা আট খণ্ড থাকতো। একটা খণ্ডের সঙ্গে আরেকটা খণ্ডের মিল থাকতো। বাসা থেকে কখনোই একটার বেশি খাতা কিনে দিতো না, তাই তাড়াতাড়ি খাতা শেষ করার চিন্তায় থাকতাম কিভাবে খাতা শেষ করা যায়। বেশি করে লিখতাম, লিখেও শেষ করা যেত না। কখনো কখনো মাঝখান থেকে পৃষ্ঠা ছিড়ে ফেলতাম, পরবর্তী খণ্ডের আশায়। 🙂
শুধু মিনা আর রাজু দিয়ে তো আর মন ভরে না। নাখালপাড়ায় একটা লাইব্রেরী ছিল নাম ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরী (এই নামে মনে হয় সব এলাকাতেই লাইব্রেরী থাকে)। সেই লাইব্রেরীতে এক টাকায় কমিক্স ভাড়া পাওয়া যেত। শুরু করলাম কমিক্স ভাড়া নেওয়া, অনেক রকম কমিক্স পাওয়া যেত যেমন, চাচা চৌধুরী, নন্টে ফন্টে। আরো কি কি যেন নাম, এখন আর মনে পড়ছে না। আমরা যে গলিতে থাকতাম সেই গলির নাম্বার ছিল ১১ নং গলি অনেকে পেপসি গলিও ডাকতো। পাসের বাসায় একজনকে নানা বলে ডাকতাম, তার ছেলেমেয়ে ছিল তিন জন, বাবু মামা, মুন্নি আন্টি আর শরীফ মামা। মুন্নি আন্টির অনেক বই ছিল, তাদের সঙ্গে আবার ছোট ভাই টুকুর অনেক খাতির ছিল। তাদের বাসায় ডিসের লাইন ছিল, হিন্দি ছবি দেখার লোভে টুকু প্রায়ই তাদের বাসায় যেত। একদিন মুন্নি আন্টির বইয়ের মেলা থেকে একটি বই বাসায় নিয়ে আসলো, রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দা, বইয়ের নাম ‘বেড়ালের অপরাধ’। এক নিমিশে সেই বইটি শেষ করে ফেললাম। পরবর্তীতে যে বইটা পড়লাম সেটার নাম ছিল সম্ভবত হূমায়ুন আহমেদ এর ‘দরজার ওপাশে’; ওইটা মনে হয় হিমু বিষয়ক বই ছিল। এক সময় মুন্নি আন্টির ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেল। মুন্নি আন্টির বিয়ের পর অস্ট্রেলিয়া চলে গেলেন। সেখানে স্থায়ী হয়েই রয়ে গেলেন, এখন হয়তো মাঝে মাঝে বেড়াতে আসেন। তিনি হয়তো জানেনও না তাঁর বই পড়েই আমার বই পড়ার অভ্যাস হয়েছে। আমি অন্যরকম করে এখন চিন্তা করি, অন্যরকম স্বপ্ন দেখি। তার কাছে একটা প্রশ্ন, কিভাবে তিনি দেশ ছেড়ে থাকেন?
মুন্নি আন্টির বই শেষ করার পর এলাকার একটি লাইব্রেরীতে সদস্য হলাম লাইব্রেরীর নাম শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতি পাঠাগার। তারপর সদস্য হলাম বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রম্যমান লাইব্রেরীতে। শুরু হলো বিভিন্ন লেখকের বই পড়া। যেমন, রকিব হাসান, হূমায়ুন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কাজী আনোয়ার হোসেন। এগুলো ছিল আমার পনের ষোল বছর বয়সের কথা। এখনকার সময়ে যা পড়াশোনা হয় বেশির ভাগই অনলাইনে, অনলাইন ছাড়া যা বই পড়ি সবই বড় ভাইদের কাছ থেকে ধার করে। আমার বই কিনে পড়ার সামার্থ নেই, তাই ধার করেই পড়তে হয়। ধার দেওয়ার তালিকায় যে মহান ভাইয়াদের তালিকা সেখানে আছেন, রাব্বি ভাই, রাসেল ভাইসহ আরো অনেকে। এতদিনে অন্য লেখকের বই পড়াও শুরু হয়েছে। যেমন–সমরেশ মজুমদার, শীর্ষেন্দু, সেলিনা হোসেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। আহমদ ছফা, সলিমুল্লাহ খানের মতো কঠিন লেখকদের বইও পড়া শুরু করেছি।
একটা বই একটা মানুষকে অনেক পরিবর্তন করে দিতে পারে। যদি সেই মানুষটি সে বই থেকে কিছু নিতে চায় অথবা শিখতে চায়।
লেখাটি মুন্নি আন্টিকে উৎসর্গ করলাম।
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

তোমার লেখা পড়ে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের পাড়াতেও একটা বইয়ের দোকান ছিল যেখানে বই ভাড়া পাওয়া যেত। আর বই পড়ার অভ্যাসটা পেয়েছি বড় ভাইয়ার কাছ থেকে। তোমার মুন্নি আন্টির মতো আমার বড় ভাইয়াও প্রবাস জীবন যাপন করছে।
এখন পাড়াতে বই ভাড়া দেয়ার মতো কোন লাইব্রেরী দেখি না। সবাই মনে হয় অনলাইনে বই পড়ে।
=D