
প্রথম স্কুলে যাওয়াটা ছিল মহা আনন্দের। স্কুলের নাম ছিল নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়। মেজো ভাইয়ের সহযোগীতায় প্রথম বেঞ্চ পাওয়ার লড়াইয়ে জয়ী হয়েছিলাম। আমরা প্রায় ৫০/৬০ জন ছাত্র একসঙ্গে ক্লাসে বসে আছি। একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছি, কয়েকজন আবার প্রথম দেখাতেই বন্ধু বানিয়ে ফেলেছে। কয়েকজন আবার লজ্জায় কারও সাথে কথা বলতে পারছে না। এর মধ্যে তিন জন কান্নাকাটি করছে। চিৎকার চেচামেচি কারও কথা কেউ ঠিক মতো শুনে না। ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সবাই চুপচাপ হয়ে গেলে। কিন্তু যেই ৩ জন কান্না করছিল তারা কান্না চালিয়েই যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্যার ক্লাশে প্রবেশ করলেন। প্রথমেই বাংলা ক্লাশ স্যারের নাম, জসিম উদ্দিন পালোয়ান। স্যারের মাথা ভর্তি টাক, ক্লাশে প্রবেশ করেই টেবিলে বেত দিয়ে জোড়ে জোড়ে আঘাত করলেন। বেতের সঙ্গে টেবিলের আঘাতের শব্দে তিন জনের মধ্যে দুই জন কান্না থামিয়ে দিলো একজনের কান্না থামার কোন লক্ষণ নেই।
স্যার সেই দিকে কান না দিয়েই পড়ানো শুরু করে দিয়েছিলেন। ছেলেটির কান্না না থামতে দেখে স্যার ছেলেটিকে অনেক আদর করেছিলেন। আদর করেও কান্না থামাতে ব্যর্থ হলেন। তারপর ছেলেটিকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন, স্যারের এই আচরণে ঐ ছেলেটিকে অনেক হিংসা লাগছিলো। স্যার প্রতি ক্লাসেই বেত নিয়ে আসতেন কিন্তু কখনো কাউকেই মারতেন না। কাউকে যখন মারতেনই না, কেন যে ক্লাশে বেত নিয়ে আসতেন তা একটা রহস্য!
অবশ্য একদিন স্যারকে মারতে দেখেছিলাম, সেটা অনেক পরের ঘটনা প্রথম ক্লাসের না। রুবেল নামের একটা ছেলে আরেকটা ছেলের সঙ্গে ঝগড়া করে কলম দিয়ে গুতা দিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছিলো। আমাদের অবশ্য কলম দিয়ে লেখা নিষিদ্ধ ছিল, রুবেল যে কেনো কলম নিয়ে ক্লাসে এসেছিল সেটা একটা রহস্য। রক্তাক্ত সেই ছেলেটিকে পরবর্তীতে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়েছিল। আর রুবেলকে স্যার বেত দিয়ে ভালই পিটিয়েছিলেন।