নড়াইল আমর খুব পছন্দের একটি জেলা। বিশেষ করে নড়াইলর নদীগুলো আমার খুব প্রিয়। বেশ কয়েকবার নড়াইল যাওয়া হলেও সেখানকার ঐতিহ্যবাহি “ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা” দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তাই এবার পরিকল্পণা করলাম একটা বাইকপ্যাকিং ট্রিপ দেই নড়াইলে। যারা জানেন না তাদের জন্য বলি, সাইকেলে করে ক্যাম্পিংয়ের প্রয়োজনীয় জিনিস বহন করে ট্রিপ দেয়াকে বাইকপ্যাকিং ট্রিপ বলে।

খুলনা থেকে নড়াইলের লোহাগড়ার দূরত্ব মোটামুটি ৬৭ কিলোমিটার। বিকেল পাঁচটায় খুলনা থেকে রওনা দিয়ে আমরা রাত ১১ টার দিকে লক্ষীপাশা বাস স্ট্যান্ডে পৌছে গেলাম। এত রাতে একটা হোটেল খোলা ছিলো যেটার মালিক আমাদেরকে তখন রান্না করেই খেতে দিলো। খেয়ে দেয়ে আমরা নবগঙ্গা নদীর পাড়ে তাঁবু ফেললাম। রাতটা ওখানে কাটিয়ে দিয়ে সকালে খুব ভোরে উঠে চললাম নলদীর উদ্দেশ্যে। সেখানকার চন্ডীপুর গ্রামে অনিন্দ দার বাড়ী খুজে বের করলাম। তাদের বাড়ীর পেছন নবগঙ্গা নদী।
আমাদের সাথে নিয়ে রওনা দিলেন মাছ ধরার জন্য। নৌকার একপাশে একটি ছোট্ট খাঁচা, সেটার মধ্যে দুটি ভোঁদড় রাখা আছে। ৮-১০ বছর বয়স ওদের। খাঁচা খুলে নামিয়ে দিলো পানিতে। নৌকার পাশে দুটো বাঁশের মাথায় রশি দিয়ে ভোঁদড় বাঁধা থাকে। তাদের কাজ মাছগুলোকে তাঁড়িয়ে জালের মধ্যে আনা।
জাল ওঠানো হলে মাছ সরাসরি নৌকার পাটাতনের ফাক দিয়ে খোলে যেয়ে জমা হয়। ঘন্টাখানেক চললো এ মাছ ধরা। দিনে অবশ্য কম মাছ পাওয়া যায়, মূলত রাতেই তারা মাছ ধরে বেশি। তবুও ঘন্টা খানেকের চেষ্টায় কেজি খানেক মাছ পাওয়া গেল। মাছ ধরা শেষ হবার পর কিছু মাছ পুরস্কার হিসেবে দেয়া হলো ভোঁদড়দের।
আগে নড়াইল জুড়ে অসংখ্য পরিবার এ ধরণের মাছ ধরায় জড়িত ছিল। বর্তমানে মাত্র কয়েকটি পরিবার অবশিষ্ট আছে। নদী দূষণ আর নাব্যতা সংকটে মাছের দেখা প্রায় মেলেই না।
দেখা শেষ করে সেখান থেকে আমরা আবার সাইকেল চালিয়ে ফিরলাম খুলনায়।
নড়াইল সদর থেকে নলদীর চন্ডিবেরপুর গ্রামের দূরত্ব সাত/আট কিলোমিটার হবে। সেখানে অনিন্দ্য দার বাড়ী বললে মানুষ দেখিয়ে দিবে বাড়িটা। প্রাইমারি স্কুলের কাছেই।
নদী দূষণে তারা ইতিমধ্যেই ভারক্রান্ত। দয়া করে সেখানে যেয়ে নতুন করে দূষণ সৃষ্টি করবেন না।
ভিডিওর ইউটিউব লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=ySxtYE-qHLs&t=467s

