মদ

কয়েক বছর আগে আমার এক ছোট বোন একটা প্রশ্ন করেছিল, সাধারণ একটা প্রশ্ন। সম্ভবত ওর বন্ধুরা বা আশেপাশের কেউ এই কথাটা বলেছিল। প্রশ্নটা ছিল এমন, ‘দাদা মেয়েরা যে সিগারেট খায় এইটা কি খারাপ?’ ও আমাকে মাঝে মাঝেই এই ধরনের ছোট ছোট প্রশ্ন করতো। এই রকম প্রশ্নগুলা নতুন নতুন চিন্তার মধ্যে ঢুকিয়ে দিত, এখনো দেয়। আমি অদ্ভুত ভাবে ডুবে থাকি, আমি ঘোরের মধ্যে চলে যাই।

উত্তরে প্রথমেই ওর মাথা থেকে ছেলে আর মেয়েটাকে বাদ দিতে বললাম। বললাম আমি আসলে এভাবে বিষয়টা দেখতে চাই না। তুই প্রথমেই চিন্তা কর সিগারেট জিনিশটা ভাল না খারাপ? সবাই কি বলতেছে? উত্তরে অবশ্যই খারাপই বলবে সবাই। আমার উত্তরটাও তাই যে জিনিশটা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ সেটা জেনেশুনে যেই খাক ছেলে হোক মেয়ে হোক। এটা খারাপ মানে খারাপ, এর সঙ্গে কোন আপোশ নাই।

সলিমুল্লাহ স্যার তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতায় একটা উদাহরণ দেন প্রায়ই। কিছু কিছু বিষয়ে অর্ধেক বলে কিছু নাই। যেমন নারীদের প্রেগনেন্সি। হাপ প্রেগনেন্সি বলে কিছু নাই, হয় প্রেগনেন্ট, না হয় প্রেগনেন্ট না।

আলীর বাড়ির ছেলেদের সঙ্গে যখন মিশতাম তখন ওদের প্রায়ই ছাদে পার্টি হতো। দেখা গেছে কেউ কারো কাছে টাকা পাবে উদ্ধার করতে পারতেছে না। তখন বড় ভাইরা এই টাকা উদ্ধার করতে যেত, তখন দল ভারী করার জন্য আমাদের জুনিয়র গ্রুপ থেকে কিছু ছেলেপেলে নিয়া যাইত। টাকা উদ্ধার করতে পারলে একটা পার্সেন্টিস পাওয়া যেত। সেই টাকা ভাগাভাগির পরে ছাদে পার্টি দেয়া হইত। পার্টিতে মস্তিস্ক উত্তেজনার অনেক কিছুই থাকতো। ঐ গ্রুপে আবার আমি আর ইব্রাহিম এই দুইজন সিগারেটও খেতাম না। তখন আমাদের জন্য অন্য ব্যবস্থা থাকত। তবে একটা বিষয় ছিল ওরা কখনো আমাদের দুইজনকে জোর করে নাই। আমরাও কিভাবে কিভাবে যেন এত বড় আখড়ার মধ্যে থেকেও নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারছিলাম।

কাকে কাজ করতে আশার পরে ঢাকা মিউজিক কনজারভেটরের এক বড় ভাই হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘শরীফ আপনে বান্দরবান গেছেন? পাহাড়ে গেছেন?’ আমি তখনও অ্যাডভেঞ্চারের সাথে যুক্ত হই নাই। বললাম, ‘না’। তিনি বান্দরবান সম্বন্ধে নানা রকম গল্প করলেন উনি গিয়ে কি কি করেছেন। উনার সবচাইতে ভাল লাগছে, পাহাড়ী মদ। এই জিনিশের জন্য উনি বার বার পাহাড়ে যেতে চান। উনি কয়েকবার গিয়েছেনও। আমাকে বলেছিলেন আপনেও চলেন খুব বেশি টাকা পয়সা লাগে না। ১০০০/১২০০ টাকায় ছাগল পুড়িয়ে খাওয়া যাবে। তবে মশল্লা ঢাকা থেকে নিয়ে যেতে হয়, আর নিজেরা রান্না করতে হবে, পাহাড়ীদের রান্না নাকি অতটা ভাল না। আমার অবশ্য যাওয়া হয় নাই তার সাথে, তবে তিনি সম্ভবত এই একটা জিনিশের জন্য কয়েকবার গিয়েছেন। তিনি দুর্দান্ত ক্লাসিক গিটার বাজাতেন, আঙ্গুল দেখা যেত না যখন দ্রুত বাজাতেন।

পরবর্তীতে দেখেছি, পাহাড়ে অনেকেই এই একটা মাত্র কারণে যায়। এমনও দেখেছি কোন একটা এলাকায় ১০/১২ দিনের জন্য গেছে শুধু মাত্র মদ খাওয়ার জন্যে। এমনও হয়েছে যে ঢাকা থেকে পছন্দমত মদ-গাজাও নিয়ে গিয়েছে। এই সংখ্যাটা একদম কম না। অনেকের কাছে পাহাড় বিষয়টা ভালবাসার জায়গা হলেও, কিছু কিছু মানুষের কাছে আসলে পাহাড়টাকে মদ খাওয়ার জন্য ব্যবহার করার জায়গা ছাড়া আর কিছু না।

আমি দুয়েকজনের সাথে কথা বলেছি এই বিষয়ে তাদের মন্তব্য ছিল এমন পাহাড়ে গিয়ে মদ খেলে নাকি প্রকৃতি উপভোগ করার জন্য আলাদা একটা মাত্রা তৈরি হয়। আমি জানি না আসলে হয় কিনা, তবে হতেও পারে। আমার কাছে পাহাড় বলি, সমুদ্র বলি, নদী বলি ঐখানে গেলেই এমনিতেই ঘোর চলে আসে। আমি ডুবে থাকতে পারি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আলাদাভাবে মস্তিস্ককে ঔষধ দিতে হয় না।

আমার কাছে মনে হয় তাঁরা পাহাড়কে ভালবাসার আগে পাহাড়ী মদকে ভালবাসে অথবা ঐখানে বসে নিশ্চিন্তে মদ খাওয়াটাকে ভালবাসে। পাহাড়টাকে ব্যবহার করে মাত্র…

৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.