ঢাকায় একটা পার্টিতে গিয়েছি। গল্পগুজব, রান্নাবান্না, খানাদানা রাতে ঘুমানোসহ সব কিছুই হয়েছিল। খাবার দাবারের মধ্যে মস্তিস্ক উত্তেজক পানীয়ও ছিল। এই পানীয়র প্রতি ব্যাপক আগ্রহ সবার। পানীয় খাবারের পর টালমাতাল হয়ে কি যে তারা বলতেছিল নিজেই হয়তো জানে না। কিন্তু সাধারণত যারা একদম মাতাল হয়ে যায় তারা নাকি সত্যি কথা বলতে থাকে অনেকটা ফ্রুটিকার ঐ অ্যাডের মতো। মাতাল হওয়ার মধ্যে ছেলেদের চাইতে মেয়েরাই বেশি এগিয়ে ছিল। পাশের রুম থেকে মেয়েদের চমকপ্রদ কথা শুনতে বেশ লাগছিল, আর হাসি পাচ্ছিল। ছেলেরা কথাবার্তা কম বললেও তাল দেয়াতে বেশ ওস্তাদের ভূমিকা পালন করছিল।
মেয়েদের কথাবার্তার মূল বিষয় ছিল কোন কোন ছেলে তাঁদের প্রপোজ করেছে। কোন ছেলেকে বেশি ঘুরিয়েছে। কোন কোন ছেলে ফেসবুকে অথবা মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে বিছানায় যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। সব মেয়েদের মধ্যেই এক ধরনের প্রতিযোগিতা। এর মধ্যে আবার একজন বেশ অহম নিয়ে বলতেছিল এই ছেলে আমাকে প্রপোজ করেছে কিন্তু আমি রাজি হই নাই। কিবা আছে তার? থাকার মধ্যে শুধু টাকা। বর্তমানে সেই মানুষটা টাকাওয়ালা ঐ মানুষটার সঙ্গে সুখে-শান্তিতে সংসার করছেন। সত্যিই অদ্ভুত…
নাখাল পাড়ায় সবচাইতে নিকৃষ্ট এবং সবচাইতে ক্রিয়েটিভ যে গ্রুপটার সঙ্গে মিশেছিলাম তাদের মধ্যে একটা মজার বিষয় ছিল। তাদের নানারকম কর্মকা-ের মধ্যে ছিল লোকজনের পাওনা টাকা আদায় করে দেয়া। ওদের সফল কোন অভিযান শেষে আলীর বাড়ির পাশে এক ছাদে পার্টি দেয়া হতো। পার্টিতে প্রধান খাবার ছিল কাবাব, চানাচুর আর বাংলা মদ। ঐ গ্রুপের ২০/২৫ জনের মধ্যে আমরা দুইজন ছিলাম উত্তেজক পানীয় পান করতাম না। দুইজনের একজন ইব্রাহিম আর আমি। আমাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতো, কোক অথবা স্প্রাইট।
এমন একটা পাওনা আদায়ের সফল অভিযান শেষে পার্টি হচ্ছে। খাওয়া দাওয়া চলছে এর মধ্যে কয়েকজন বেশি খাওয়ায় বমি করে ছাদের একপাশ ভাসিয়ে দিয়েছে। আমাদের মধ্যে এক বন্ধু ছিল যার বাবা ঐ সময়ের মাস দুয়েক আগে নতুন একটা বিয়ে করেছে। ওর নতুন মার বয়স খুবই কম। আমাদের চাইতে দুই/চার বছরের বড় হবে। এটা নিয়া আমরা ঐ বন্ধুকে বেশ ক্ষ্যাপাতাম। কিন্তু ও কখনো কিছু মনে করতো না, হেসে উড়িয়ে দিত। এখন মনে হয় আমরা অনেক বিকৃত মানুষিকতার অধিকারী ছিলাম সবাই। তো ঐ রাতে ঐদিন আবার ওর নতুন মার কথা তুলা হলো।
কথায় কথায় ঐ বন্ধুটি একটা কঠিন সত্য কথা বলে দিল। ঐ বন্ধুর সঙ্গে ওর নতুন মায়ের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। এবং সেই সম্পর্ক শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত এগিয়েছে। ছাদে তখন পিনপিন নিস্তব্ধতা চলছিল। আমরা দুইজন তো কোন কথাই বলতেছিলাম না। কিন্তু যারা একটু মাতাল ছিল তাদের পিনিকও মনে হয় চলে গিয়েছিল।
আমার কর্মপ্রতিষ্ঠানের ইংরেজির শিক্ষক শাহনেওয়াজ কবির। কিছুদিন আগে শাহনেওয়াজ ভাই এসে একটা বই দিয়ে গেলেন। বইটা পুরাটা টাইপ করে উনাকে দিতে হবে। গত বছর এই বইটির কিছুটা কাজ আমি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই বইয়ের সফট কপি আর নাই তাই পুরাটা নতুন করে টাইপ করতে হবে। গত কিছুদিন ধরে এই কাজটাই করতেছি। বইটির নাম ‘ঈদিপাস যখন কোলোনাসে’। বইটি শাহনেওয়াজ ভাই অনুবাদ করেছেন। টাইপ করতে করতে নাকটটি পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে চমৎকৃত হলাম। ঈদিপাস তার বাবাকে খুন করেছেন এবং নিজের মাকে বিয়ে করেছেন। যদিও সে যে তার মাকে বিয়ে করেছেন তা তিনি জানতেন না। যখন জানতে পেরেছেন তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ততদিনে তার দুটি মেয়ে এবং একটি ছেলে সন্তান হয়েছে। যখন সে সব জানতে পারলো তখন সে তার নিজের চোখ নিজেই নষ্ট করে ফেলেন। অদ্ভুত ঘটনা অদ্ভুত সব চরিত্র। এই ঘটনার পুরাটা অবশ্য এই বইয়ে নাই। এই বইটা ঐ ঘটনার পরবর্তী ঘটনার। কিন্তু সংক্ষেপে অল্প করে ঘটনাটা আছে। আমি এখন মুখিয়ে আছি ঈদিপাসের মূল বইটা পড়ার জন্য। আর চিন্তা করছি জীবনে কতনা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যায়।
.
২৫ কার্তিক ১৪২৩

আপনার লেখনি খুব সুন্দর।
ধন্যবাদ ভাই। 🙂
খুব ভালো লাগলো পড়ে। বিশেষ করে নিজেকে এসব থেকে নিবৃত রেখে মজা নেয়ার মজাই আলাদা।
ছেলেরা সাধারনত মাতাল হয়ে কান্নাকাটিও করে …
আরো লিখার জন্য চাতক পাখি হয়ে রইলাম
হাহা। ঠিক বলছেন ভাই। ছেলেরা মাতলামী করে কত কি যে করে। একদিন সময় পেলে লিখবো সেই বিষয়ে। :p