
আজহারুল ইসলাম মাসুম ভাইয়ের প্রথম নাম শুনি মনা ভাইয়ের কাছে। সেটা ২০০৮ সালে ঘটনা। আমি আর মনা ভাই তখন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সাইকেল ট্যুর করার প্ল্যান করছি। তখন সাইক্লিং ক্লাবের নাম আসলেই “ঢাকা সাইক্লিং ক্লাবে”র নাম প্রথমে চলে আসতো। মনা ভাই ঢাকা সাইক্লিং ক্লাবের সদস্য ছিলেন। এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মাসুম ভাই, পদবীর কথা বললে তিনি ছিলেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, আর প্রেসিডেন্ট জোবেরা রহমান লিনু। আমরা দুইটি ক্লাবের ব্যানারে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ ট্যুরটি করেছিলাম। একটি ঢাকা সাইক্লিং ক্লাব অন্যটি ভ্রমন বাংলাদেশ (তখন নাম ছিল ভ্রমণ বাংলা)।
মাসুম ভাইয়ের আরেকটি পরিচয় তিনি জাতীয় সাইক্লিস্ট এবং বাংলাদেশ সাইকেল ফেডারেশনের সদস্য। মনা ভাইয়ের কাছ থেকে মাসুম ভাইয়ের সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছি। যেমন, তাঁরা ১৯৯৮ সালে প্রথম টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সাইকেল ট্যুর করেছিলেন। মাসুম ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেকবার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। দেখা হতো বেশিরভাগ সময় সাইকেল র্যালীতে। ঢাকাতে কোন সাইকেল র্যালী হলেই তিনি ফোন করে জানাতেন।
তাঁর সঙ্গে কথাবার্তার বেশিরভাগ জুড়েই ছিল সাইকেল এবং সাইক্লিং। তিনি স্বপ্ন দেখতেন ঢাকায় আলাদা সাইকেলের জন্য আলাদা লেন হবে। তিনি আরও স্বপ্ন দেখতেন ‘বিশ্ব সাইক্লিং দিবস’ নিয়েও। তিনি একবার তাঁর সঙ্গে কাজ করতেও অনুরোধ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একটা প্রেস দেব, তুমি প্রেসটা দেখবা। আর সাইক্লিং নিয়া প্ল্যান করবা।’ কেন জানি তিনি আমাকে অনেক পছন্দও করতেন। গতকাল (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে মুনতাসির ভাই আর উজ্জল ভাইয়ের পোস্টে দেখে প্রথমে বিশ্বাস করতে অনেক কষ্ট হলো, মনা ভাইকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত শুনলাম। শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
মাসুম আমাদের অনেককেই সাইক্লিং ট্যুর বিষয়ে অনেক সহযোগীতা করেছেন। তিনি আমার ৬৪ জেলা ভ্রমণে একটি প্রত্যয়ন পত্রও লিখে দিয়েছিলেন। তিনি সাঈদ ভাইয়ের ৬৪ জেলা ট্যুরেও অনেক সহযোগীতা করেছিলেন। সাঈদ ভাই ২০০৫ এ “ঢাকা সাইক্লিং ক্লাব” এর ব্যানারেই ৬৪ জেলা ভ্রমণ সম্পন্ন করেছিলেন। আমার প্রথম সাইকেল ট্যুরও “ঢাকা সাইক্লিং ক্লাব” এর ব্যানারে।
আমার সাইকেল ট্যুরের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ২০০৮ সালের তেঁতুলিয়া টেকনাফ ট্যুর। আর ভ্রমণে মনা ভাইয়ের টার্নিং পয়েন্টেও ১৯৯৮ সালের টেকনাফ তেঁতুলিয়া ট্যুর। আর মনা ভাইকে সরাসরি সহযোগীতা করেছেন এই মাসুম ভাই। আমার চাইতে মনা ভাই আরো অনেক বেশি ভাল বলতে পারবেন মাসুম ভাইয়ের সম্পর্কে। মনা ভাই এক জায়গায় লিখেনও এই রকম:
ক্লাশ টেন পড়ুয়া আমার কিশোর মনে ভ্রমনের নেশা জাগাতেই যেন এলাকার বড় ভাই “ঢাকা সাইক্লিং ক্লাব” এর প্রতিষ্ঠাতা আজহারুল ইসলাম মাসুম ঘন ঘন আমার বাসায় যাতায়াত শুরু করেছিলেন। এস.এস.সি. পরীক্ষার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আমার সেঝ চাচার সাথে বেড়াতে যাই সিলেট বিভাগের চারটি জেলায়। সেই ভ্রমণ যেন বপন করে দিয়েছিল আমার কিশোর মনে ভ্রমণ ভবঘুরের ছোট্ট একটি চারা, যা দিনে দিনে বেড়ে বটবৃক্ষ হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। তো যা বলছিলাম, মাসুম ভাইয়ের হাত ধরে “ঢাকা সাইক্লিং ক্লাব” এর বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেয়া শুরু করি, যার অন্যতম ছিল বিভিন্ন সাইকেল র্যালীতে অংশগ্রহণ। কিন্তু ক্ষণিকের এই সাইক্লিং যেন কিশোর মনে তৃপ্তি আনতে ব্যার্থ হচ্ছিল বারে বার। তাই একদিন মাসুম ভাইকে প্রস্তাব করলাম টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত সাইকেলে বেড়াতে চাই।
আমার প্রস্তাবনা শুনে উনি খুবই খুশী হলেন, শুরু হয়ে গেল আমাদের নানান পরিকল্পনা, সাথে অনুশীলন। সময়ের পরিক্রমায় ১৯৯৮ সালে ২১শে নভেম্বর আমার সাথে আরও তিনজন (তৎকালীন বাংলাদেশের সাইক্লিংয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ান (সিনিয়র) – জাহিদ চৌধুরী সুমন, জাতীয় চ্যাম্পিয়ান (জুনিয়র) – নাসির উদ্দিন রতন এবং দলনেতা হিসেবে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা আজহারুল ইসলাম মাসুম) সঙ্গী নিয়ে বের হয়ে যাই টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া যাত্রায়। টেকনাফ থেকে যাত্রা শুরু করে ১৬ই ডিসেম্বর পৌঁছই তেতুলিয়া। এই একটি সাইকেল ভ্রমণই আমার কিশোর মনকে করে তুলে যাযাবর, যার রেশ ধরে আজো ছুটে চলি পথ থেকে পথে। (স্বপ্ন দেখার গল্প-০১, রবিউল হাসান খান মনা)
আমি বিভিন্ন জায়গায় বলেছি এবং লিখেছিও, আমার সাইক্লিং গুরু রবিউল হাসান খান মনা। আর এই মনা ভাইয়েরও গুরু মাসুম ভাই। তাই মাসুম ভাইয়ের অবস্থান আমার কাছে অনেক উপরেই থেকে যাবে।
বিদায় মাসুম ভাই! বিদায়!

🙁 আল্লাহ্ তাঁর আত্মাকে শান্তি দেন । আমিন।
I want to member of Dhaka cycle club .please help me provide me address or phone no-please.
আমি মেম্বার হতে চাই হেল্প মি।