নাখালপাড়ার ১১ নাম্বার গলিতে অনেকটা সময় কাটিয়েছি। বলা যায় সেখানেই বেড়ে উঠার একটা বড় অংশ চলে গেছে। ঐ গলির আরেকটা নাম ছিল পেপসি গলি। আমরা যাঁরা নাখালপাড়ার বাসিন্দা ছিলাম তাদের কাছে পেপসি গলিটা মোটামুটি বিখ্যাত। Arifur Rahman Khan ভাইয়ের মনে থাকলেও থাকতে পারে পেপসি গলির কথা। :p
ঐ পেপসি গলিতে মঞ্জু নামে দুইজন ছিল। একজন ছেলে আরেকজন মেয়ে। মেয়ে মঞ্জুর গল্প আরেকদিন বলা যাবে। আজ ছেলে মঞ্জুর কথাই বলি।
মঞ্জু আমাদের সমবয়সীই ছিল। বেশ ভদ্র, নিয়মিত নামায পড়তো। আমার মত খারাপ ছাত্র ছিল না। সম্ভবত বিজ্ঞান স্কুল অথবা তেজগাঁওয়ে পড়ালেখা করতো। পরবর্তীতে কলেজে ঢুকেছিল শাহীন কলেজে।
মঞ্জুর একটা সাইকেল ছিল। সে নিয়মিত সাইকেলে ফার্মগেটে স্কুলে যাওয়া-আসা করতো। তখনকার দিনে স্কুল পড়ুয়া ছেলের নিজের একটা সাইকেল থাকা সাধারণ বিষয় না। বিশেষ করে আমাদের মত মধ্যবিত্ত অথবা নিম্ন মধ্যবিত্তদের মধ্যে। সেই সাইকেলের কারণে ওকে আমরা অনেকেই হিংসা করতাম।
আমরা সাইকেল চালাতে চাইলে বেশিরভাগ সময়ই দিত না। তাই আমরা ওকে প্রায়ই জ্বালাতাম। জ্বালানোর ধরন ছিল বিশেষ। তখন এলাকায় মাত্র কনিংবেল এসেছে। ওর সাইকেল নিচে তালা মারা থাকতো পাশাপাশি গেইটও লাগানো থাকতো। ওরা থাকতো তিন তলা অথবা চার তলায় এখন আর মনে নাই। কনিংবেল চাপলেই মঞ্জু নিচে এসে দেখতো কেউ আসছে কিনা। আমরা মঞ্জুকে জ্বালাতন করার জন্য প্রায়ই এই কাজ করতাম। ওকে জ্বালাতন করার মূল কারণ হইল আমাদের সাইকেল না দেয়া। দুয়েকদিন পরেই সে আর নিচে নামতো না আমাদের দেখলেই। তারপর শুরু করলাম ওর সাইকেলের বেইলে টিপাটিপি। কয়েকদিন পরে এতেও আর কাজ হইল না। সে বিরক্তই হয় না। আবার আমাদের সাইকেলও দেয় না। ছেলেটার ধৈর্য ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। আবার সে প্রতিদিন বিকালে ঠিকই আমাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে আসতো।
এরপরে ওকে টাইট দেয়ার জন্য নতুন একটা জিনিশ আবিষ্কার করলাম। ওর সাইকেলের পাম্প ছেড়ে দেয়া শুরু করলাম। এবার আমাদের বুদ্ধি বেশ ভাল কাজে লাগলো। আমাদের মধ্যে একটা আন্ডাসটেন্ডিং হইল। ও যখন প্রতিদিন বিকালে আমাদের সঙ্গে ক্রিকেট অথবা ফুটবল খেলতে আসবে তখন আমাদের সাইকেল চালাতে দিবে। এতে আমরা সবাই খুশি থাকলাম। 🙂
এই রকম সাইকেল নিয়ে নিশ্চয়ই অনেক মজার মজার গল্প আছে। এই ধরনের গল্পগুলা সবাই করলে ভাল হয়। কারণ সবার গল্পই নিশ্চয়ই একটু আলাদা আলাদা হয়। আমারও সাইকেল নিয়ে আরো গল্প আছে। আজ এই পর্যন্তই থাক।
৩০ ফাল্গুন ১৪২৫