হ্যালমেট

আমার প্রথম লং ডিস্টেন্সে সাইক্লিং ছিল তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ। সেটা ২০০৮ সালের ঘটনা, সঙ্গী ছিলেন মনা ভাই। ঠিক করেছিলাম বাসে তেঁতুলিয়া যাব। সাইকেল বাসের ছাদে করে নিয়ে যাব। আমাদের বাস ছিল শ্যামলী কাউন্টার থেকে। মনা ভাই আগেই পৌঁছে গিয়েছিল।

শ্যামলী পৌঁছে দেখি মনা ভাই সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছেন মাথায় অ্যাস রঙ্গের একটা হ্যালমেট। মনা ভাই দুইজনের জন্য ব্যাগের রেইন কাভার নিয়ে এসেছিলেন। তখন আমার কিছুই ছিল না সাইকেলটা ছাড়া। আমার ব্যাগটাও এক বড় ভাই শওকত ভাইয়ের কাছ থেকে ধার করে নিয়ে গিয়েছিলাম। মনা ভাই রেইন কভারটা হাতে দিতে দিতে বলেছিলেন, ‘আপনার জন্যও একটা হ্যালমেট যোগাড় করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারি নাই।’ ঐ সময়ে ঢাকাতেই হ্যালমেট পরে সাইকেল চালালে লোকজন এলিয়েন মনে করতো আর ঢাকার বাইরের অবস্থা তো বুঝাই যায়। তখনই প্রথম জানতে পেরেছিলাম হ্যালমেট পরেই আসলে সাইকেল চালায়। তখন খুব আফসোস হয়েছিল যদি আমারও একটা হ্যালমেট থাকতো কত ভাল হত!

যাঁরা অনেক আগে থেকে সাইক্লিং করে তাঁরা হয়তো জানবেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে সাইক্লিংয়ের একটা প্রোগ্রাম করা হয়েছিল। সেটার নাম ছিল ‘বাংলাদেশকে জানো’। সেই প্রোগ্রামে কেন্দ্র থেকে একটা ব্যাগ, একটা টি-শাট আর একটা হ্যালমেট দিত। কিন্তু শর্ত ছিল সাইকেল ভ্রমণ শেষে হ্যালমেটটি ফেরত দিয়ে দিতে হবে। সেখানেই প্রথম হ্যালমেট পরার সৌভাগ্য হয়েছিল। কিন্তু রাইড শেষে আবার হ্যালমেটটা ফেরত দিয়ে দিতে হয়েছিল।

অনেকেই চেনেন মীর শামছুল আলম বাবু ভাইকে। বাবু ভাইয়ের সাথে অনেকদিন ধরেই কাজ করি। বিশেষ করে তাঁর প্রকাশনা বিষয়ক কাজটাই বেশি করা হয়। কিন্তু এ ছাড়াও বাবু ভাইয়ের সঙ্গে অন্যান্য কাজ করারও অভিজ্ঞতা আছে। এমন একটা কাজ ছিল ‘হরলিক্স ফিউচার ফোর্স’ নামে একটা গেইম শোর কাজ। সেখানে বাচ্চাদের খেলার সময় সেইফটির জন্য হ্যালমেট দেয়া হত। সেটা ছিল সম্ভবত ২০০৯ সালের ঘটনা। তখন বাবু ভাইকে বলেছিলাম যদি সম্ভব হয় গেইম শো শেষ হলে আমাকে একটা হ্যালমেট ম্যানেজ করে দিবেন। গেইম শোটি হয়েছিল গাজিপুরে। প্রায় একমাস আমরা ঐখানে ছিলাম। ফাইনাল খেলার আগেই আমাকে ফিরে আসতে হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পরে ঢাকায় ফিরে বাবু ভাই আমাকে একটা হ্যালমেট দিয়েছিলেন। হ্যালমেটটি ছিল লাল রঙ্গের। হ্যালমেটটি পেয়ে আমি প্রচ- খুশি হয়েছিলাম। সেই হ্যালমেটটি আমার সাথে পুরা ৬৪ জেলা ঘুরেছে ২০১০ সালে। এটাই ছিল আমার প্রথম হ্যালমেট।

২০১০ সালেই ইশতিয়াক ভাইয়ের সঙ্গে একটা প্ল্যান করি তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ হাঁটার। তখন আমার নেংটা কালের বন্ধু সাজ্জাদুল ইসলাম রূপকের (আমরা অবশ্য ছোটবেলা থেকেই বাবু বলি) মাধ্যমে পরিচয় হাসনা রিয়া নামে এক জনের সঙ্গে। রিয়া বাবুর কাছে আমার নানারকম কর্মকাণ্ডের কথা শুনে বাবুর মাধ্যমে কিছু উপহার দিয়েছিল। সেই উপহারের মধ্যে ছিল জোরেক্সের একটা নিল রঙ্গের হ্যালমেট সেটা ছিল আমার দ্বিতীয় হ্যালমেট। মজার ব্যপার হলো রিয়ার সঙ্গে আমার এখনো দেখা হয় নাই। ফোনে কথা হয়েছে আর ফেসবুকে চ্যাট। নিল হ্যালমেটটা আসার পরে ঐটা নিয়েই বেশি রাইড দেয়া হত।

বিডি সাইক্লিস্টের জন্মের পরে ঢাকায় মোটামুটি সাইক্লিংয়ের একটা জোয়ার শুরু হল বলা যায়। তখন কাজ করি সেইফে। একদিন ফেসবুক গ্রুপে দেখলাম এক লোক টায়ারলিভার, হ্যালমেট আরো কি কি যেন বিক্রি করবে। হ্যালমেটটা ছিল ‘বেলে’র। বেলের হ্যালমেট আমার জন্য মোটামুটি দামিই বলা যায়। তখন মোজাম্মেল ভাইও সম্ভবত বেলের হ্যালমেট ব্যবহার করতো দেখতাম। আর ব্র্যান্ডের হ্যালমেট তখন খুব একটা পাওয়াও যেত না। শুধু হ্যালমেট কেন? কোন কিছুই পাওয়া যেত না। গ্রুপে লোকটি হ্যালমেটের দাম চাইল ১৪০০ টাকা। নেটে সার্চ দিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখলাম এই হ্যালমেটের দাম নতুন কিনতে গেলে ৩২০০ টাকার মত লাগবে। তারপরেও হ্যালমেটের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখলাম না। টায়ার লিভারের দাম একশ টাকা। মূলত টায়ার লিভার কিনার জন্যই পরের দিন গেলাম লোকটার কাছে। সঙ্গে হ্যালমেটের টাকাটাও নিয়ে গেলাম, যদি পছন্দ হয় তো কিনে ফেলবো।

উনার বাসা ছিল ইস্কাটনে আর আমার অফিসও ছিল ইস্কাটনে। বাড়ির সামনে ফোন দেয়ার পরে তিনি বের হয়ে আসলেন। উনি প্রায় আমার ডাবল বলা যায়। টায়ার লিভার হাতে নেয়ার পরে বললেন। তাঁর কোন এক আত্মীয় জার্মানী থেকে হ্যালমেটটি নিয়ে এসেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই হ্যালমেট উনার মাথায় ঢুকছে না। উনার আরো বড় হ্যালমেট লাগবে তাই হ্যালমেটটি বিক্রি করতেছেন। তখন আমি আগ্রহী হয়ে গেলাম। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম ব্যবহৃত হ্যালমেট হবে। আমার আগ্রহ প্রকাশের পর তিনি আবার বাড়ি থেকে হ্যালমেট নিয়ে আসলেন। দেখি পুরাপুরি ইনটেক্ট। আমি সঙ্গে সঙ্গে হ্যালমেটটি নিয়ে নিলাম। হ্যালমেটের কার্টুনসহ অফিসে ফিরে গেলাম।

এখনো বেলের এই হ্যালমেট নিয়ে ভ্রমণ করছি। গত পাঁচ বছর ধরে বলা যায় সাইকেলের সঙ্গে এই হ্যালমেটটি আমার নিত্য দিনের সঙ্গী।

এই ছিল আমার হ্যালমেট কাব্য।

.

২৩ কার্তিক ১৪২৪

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.