ফেব্রুয়ারির বই মেলায় কোন একদিন আকাশ ভাইয়ের ফোন। শরীফ অমুকদিন মেলায় যেতে পারি, পারলে আইসো। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকি। কিন্তু ঐ দিন কোন এক কারণে ফ্রি ছিলাম আকাশ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হইল। বিশাল এক তালিকা নিয়া বের হয়েছেন। অনেকগুলা বই কিনবেন, আমার সময় ছিল না তাই বেশি সময় দিতে পারি নাই। তবে কথায় কথায় বললেন, ‘তোমাকে তো একটা বই দিতে চাইছিলাম। তোমার তো সময় নাই, একটা বই ঠিক কর, তোমার তো আবার জীবনী বেশি পছন্দ।’ বাসায় ফিরে চিন্তা করে ঠিক করলাম মহানবীর জীবনী চাইব। খোঁজ নিয়ে দেখি মেলা দাম, প্রায় বারশ টাকা।
আকাশ ভাইকে বলাতে একটু দোনামনার মধ্যে ছিলেন বুঝলাম। রকমারীর লিংক পাঠালাম, যেখানে কিছুটা ভূমিকার কিছু অংশ পড়া যায়। কি মনে করে সেটা উনার আম্মাকে পড়ালেন। সঙ্গে সঙ্গে আদেশ হয়ে গেল এই বই অবশ্যই কিনতে হবে। এবার আকাশ ভাইয়ের ফেসবুকে ম্যাসেজ বই তো কিনতেই হবে মায়ের আদেশ। আন্টির কথা শুনার পরে নতুন আরেক বাসনার কথা জানাইলাম, ‘ভাই মাশরাফির জীবনীটাও তো দরকার ছিল। আকাশ ভাইয়ের উত্তর ‘তথাস্তু’। দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘মাশরাফি’ বইটার দামও ভালই। একদিন বিকাশে ২ হাজার টাকা পাঠালেন। এই দুইটা ছাড়াও আরো দুইটা বই কিনতে হবে। একটা আহমদ ছফার ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’ আরেকটা আলমগীর কবির রচনা সংগ্রহ ১ এর ‘চলচ্চিত্র ও জাতীয় মুক্তি’। মোটামুটি এই টাকাতেই হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সঙ্গে আরো একটা বই তালিকায় যুক্ত হইল নাজির হোসেনের ‘কিংবদন্তীর ঢাকা’। এটা বাজারে পাওয়া যায় না, নীলক্ষেত থেকে ফটোকপি কিনতে হলো।সব হিশাব করে দেখা গেল টাকায় কুলায় না, আরো ৬০০ টাকা পাঠালেন। এবার টাকায় কুলাইল। বইপত্রগুলা সব পড়ে তারপর ফেরত দিব এমন একটা চুক্তি হইল।
একসঙ্গে দুইটা বই পড়া শুরু করলাম। মহানবীর প্রথম বিশদ জীবনী, ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)’ লিখেছেন ইবনে ইসহাক। তর্জমা করেছেন শহীদ আখন্দ। মহানবীর জীবনী পছন্দ করার একটা কারণ আছে। হিশাব করে দেখলাম, যেভাবে খুঁজে খুঁজে শীব, পাবর্তী, বুদ্ধ, রাম, সীতা, কৃষ্ণ, ঈশা সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করেছি বা পড়ার চেষ্টা করেছি সেই তুলনা মুসলমান হয়েও মোহাম্মদের জীবন সম্বন্ধে কিছুই জানি না। যতটুকু জানি স্কুলের বইয়ে যা পেয়েছি সেই পর্যন্ত অথবা পথে ঘাটে বিভিন্ন ওয়াজে অথবা শুক্রবারের মসজিদে হুজুরের কাছে যতটুকু শুনেছি ততটুকু। কিন্তু নিজে খুঁজে খুঁজে জানার চেষ্টা তেমন করাই হয় নাই। কয়েকদিন আগে মাজিদ মাজিদির ‘মুহাম্মদ’ মুভিটা দেখলাম। এখন পড়তেছি।
আরেকটা পড়তেছি ‘মাশরাফি’। পড়তে পড়তে দুইটা কাকতালীয় ঘটনা ঘটলো। একটা হইল ২১২ পাতায় এসে ১৬ মার্চের ঘটনায় আটকে গেলাম। এই দিনে মানজারুল ইসলাম রানা মারা গিয়েছিলো। আরেকটা তথ্য পাইলাম বইয়ের ২১৩ পাতায়। এই তারিখের আশেপাশে বাংলাদেশের খেলা থাকলে নাকি সব সময় জিতে। মানে এখনও পর্যন্ত হারে নাই। রানার মৃত্যুর পরের দিন ভারতের সঙ্গে খেলা ছিল সেটা ছিল রানাকে উৎসর্গ করে খেলা। সেই থেকে শুরু। আজকে আবার অঘোষিত সেমি ফাইনালও বলা যেতে পারে। এখন দেখা যাক আজকে কি হয়…
২ চৈত্র ১৪২৪

প্রায় সময়ইই আমাকে উপকার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। 🙂