৬৪ জেলায় যা দেখেছি–১১

37237_1471079946873_6406512_n

১১ মার্চ (ময়মনসিংহ থেকে গাজীপুর)

শামিম ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলাম গাজীপুরের উদ্দেশে। গাজীপুর মানেই ঢাকার খুব কাছে, অনেকদিন পর ঢাকার খুব কাছাকাছি যাচ্ছি। যদিও ঢাকায় যাব না, আমার ইচ্ছা একদম ভ্রমণ শেষ করে ঢাকা ফেরা। প্রথমেই ভুল করে গাজীপুরের রাস্তা বাদ দিয়ে অন্য রাস্তায় প্রায় ৫/৭ কিলোমিটার চলে গেলাম। কেন যেন সন্দেহ হলো, কারণ এই রাস্তায় গাড়ী অনেক কম। হিসাব অনুযায়ী গাজীপুরের রাস্তায় গাড়ী অনেক বেশি থাকার কথা, তার চাইতে বড় কথা রাস্তায় কোন ঢাকা অথবা গাজীপুরের কোন বড় বাস নেই। ছোট ছোট মিনিবাস আর কিছু টেম্পু, বেবী টেক্সি। থেমে এক দোকানে জিজ্ঞেস করলাম এই রাস্তায় কোন দিকে গেছে? দোকানদার বললেন, ‘ফুলবাড়িয়ার দিকে’; আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলো আমি ভুল রাস্তায় আছি। দোকানদারের কাছ থেকে সঠিক রাস্তা চিনে নিলাম এবং আবার যেই রাস্তা এসেছে সেই রাস্তায় ফিরতে শুরু করলাম। বাড়তি প্রায় ১৪ কিলোমিটার চালাতে হলো। ১৪ কিলোমিটার চালানোর পর সঠিক রাস্তার সন্ধান পেলাম। ফেরার ৭ কিলোমিটার কেন যেন মনে হলো অনন্তকাল ধরে সাইকেল চালাচ্ছি রাস্তা আর শেষ হয় না। এই ভুল থেকে ঠিক করে নিলাম এরপর থেকে কাউকে জিজ্ঞেস না করে নিজে থেকে বেশিদূর যাওয়া যাবে না। আর রাস্তা সঠিক হলেও কিছুক্ষণ পর পর কাউকে জিজ্ঞেস করে নেব সঠিক রাস্তায় আছি কিনা!

বগার বাজার, ভালুকা হয়ে একটি নদী পেলাম নদীর নাম খিরু নদী। শ্রীপুর পার হওয়ার পর একটি ফ্লাইওভার পেলাম। এই ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। ফ্লাইওভার পার হয়ে অনেক্ষণ সাইকেলের প্যাডেল দেয়ার পর পৌঁছালাম গাজীপুর শহরে। তখন প্রায় সন্ধ্যা হবে হবে এমন ভাব। শহরে পৌঁছে প্রথমে গেলাম বাস স্ট্যান্ডের দিকে হোটেলের খোজে। এতদিনে মোটামুটি ধারণা হয়েছে বাস স্ট্যান্ডের কাছাকাছি কিছু আবাসিক হোটেল পাওয়া যায়।

34472_1470121122903_1508979_nবাস স্ট্যান্ডের কাছেই একটি দোতলা হোটেল পেয়ে গেলাম। ঢুকেই প্রথমেই একটা শান্তির গোসল দিলাম। ফোন করলাম ছোট ভাই অনির কাছে, অনির ঢাকা থেকে আমার জন্য কিছু জিনিসপত্র আনার কথা। এতদিনে আমি একটি টর্চ লাইটে অভাব বোধ করছিলাম। আর নিজের সঙ্গে কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিলো। সেগুলো অনিকে দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়ার ইচ্ছা। যেমন, তাবু, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত টি-সার্ট ও প্যান্ট নিয়ে এসেছি। সেগুলো কমাতে হবে। পরবর্তীতে আবার যখন ঢাকার পাশের জেলা মানিকগঞ্জে যাব তখন আবার কিছু জিনিশপত্র অদল-বদল করে নেয়া যাবে। অনি ফোনে জানিয়ে দিল ওর আসতে আরো ঘণ্টা খানেক সময় লাগবে।

এক ঘণ্টা হাতে থাকাতে আর বের হলাম না, এক ঘণ্টার একটা ঘুম দিলাম। ঘুম ভাঙ্গলো অনির ফোনেই। বের হয়ে দেখি অনি একা না, সঙ্গে ওর এক মামাও হাজির। মামা আমার সমবয়সী হবে। তিন জন মিলে বের হলাম শহর দেখার জন্য। প্রথমেই রেললাইন পার হয়ে ঢুকলাম একটি কালী মন্দিরে সেখানে কির্ত্তন চলছে। বসে কিছুক্ষণ কিত্তন শুনলাম। মন্দির থেকে বের হয়ে ঘুরে ঘুরে দেখলাম ডিসি অফিস, ডিসির ডাকবাংলো। ডিসি অফিসটি পুরনো একটি রাজার বাড়িতে। জানতে পারলাম ভাওয়াল রাজার ছিলো এই বাড়িটি। এভাবেই এলোমেলোভাবে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে, রাতের খাওয়া শেষ করে হোটেলে ফিরে গেলাম। অনি আর মামা নিজেদের গন্তব্যে রওনা দিলেন।

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.