১৩ মার্চ (টাঙ্গাইল থেকে জামালপুর)
রাতে কেন জানি ভাল ঘুম হলো না, কয়েকবার ঘুম থেকে উঠে গিয়েছিলাম। ভোরের দিকে সামান্য ঘুম হলো। সকালে যখন ঘুম থেকে উঠলাম তখন ঘড়িতে ছয়টা বেজে ত্রিশ মিনিট। সুমন ভাইদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলাম আমার পরবর্তী জেলা জামালপুরের উদ্দেশে। সুমন ভাইরা নাস্তা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু নাস্তা করতে গেলে দেরি হয়ে যাবে তাই নাস্তা করিনি।
সকাল সকাল বের হয়ে যেতে পারলে আরাম করে প্রথম ২০/২৫ কিলোমিটার চলে যাওয়া যায়। একটু দেরি হলেই রোদ মাথায় উঠে যায় সাইকেল চালাতে কষ্ট হয়। টাঙ্গাইল শহর থেকে বের হয়ে দশ কিলোমিটার পরেই একটি তিন রাস্তার মোড় পেলাম জায়গাটাকে সবাই এলেঙ্গা বলে। এই মোড় থেকে একটি রাস্তা সোজা চলে গেছে যমুনা সেতুর দিকে, অন্যটি জামালপুর। এই সেতুর নাম সবসময় যমুনা সেতু থাকে না। রাজনৈতিক যাতাকলে কখনো যমুনা কখনো বঙ্গবন্ধু।
আমি আমার গন্তব্য জামালপুরের দিকে রওনা দিলাম। কালিহাতিতে নাস্তা করে নিলাম। পথে চোখে পড়ার মতো ইটের ভাটা ও ধানের কল, পাশাপাশি ভ্যানে করে লোকজন বস্তা ভরে ধান নিয়ে যাচ্ছে। ঘাটাইল সেনানিবাস পার হওয়ার পর থেকেই সাইকেলের পেছনের চাকায় পাম্প কম অনুভব করছিলাম। ব্যাগ থেকে পাম্পার বের করে পাম্প দিলাম। কিছুক্ষন পর আমার সেই একই অবস্থা। বুঝতে পারলাম চাকা লিক হয়েছে।
অল্প দূরেই রিক্সাসাইকেল ঠিক করার দোকান দেখা যাচ্ছিলো। হেঁটে হেঁটে সেখানে নিয়ে গেলাম। আমি ঠিক করতে গেলে সময় বেশি লাগবে তাই দোকনের দিকে নিয়ে গেলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে টিউব থেকে একে একে তিনটা ফুটা বের করা হলো। লিক সাড়তে সাড়তে প্রায় পনের বিশ মিনিট লাগলো।

আবার সামনে এগিয়ে চলা। মধুপুর, গোলাপবাড়ি, ধনবাড়ি পাড় হয়ে জামাল পুর শহর। শহরে ঢোকার মুখে মাল টানা ঘোড়ার গাড়ি চোখে পড়লো। কয়েকদিন যাবত বাস/ট্রাক দেখছি হঠাৎ করে ঘোড়ার গাড়ি দেখে অন্য রকম লাগছিলো।
জামালপুর শহরে যখন ঢুকলাম তখন বিকাল। খুঁজে খুঁজে কমদামী একটি থাকার হোটেল বের করলাম। আমার রুমটি দ্বিতীয় তলায়। সাইকেলটি কাধে করেই দোতলার রুমে ঢুকলাম। সবকিছু রেখে গোসল করে নিলাম। তারপর ঘুম। ঘুম থেকে উঠলাম সন্ধ্যার দিকে, উঠে বের হলাম শহর দেখার জন্য। জামালপুর জেলা শহরটা অনেক ছোট। হোটেল খোঁজার সময়ই অনেকটা দেখা হয়ে গেছে। রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পেলাম একটি মাঠে বইমেলা হচ্ছে। জেলাপ্রশাসকের তত্বাবধানে বইমেলায় দোকানের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটা, মাত্র ছয়/সাতটা। তুবও ভালো বই মেলাতো হচ্ছে! বই মেলাগুলো যদি শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক না হয়ে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া যেতো খারাপ হতো না।

এই সব চিন্তা করতে করতে হোটেলের দিকে ফিরছিলাম, রেলগেটের কাছে এসে দেখি মাদক বিরোধি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে। মঞ্চের সামনের অনেক চেয়ার ফাঁকা। একটি চেয়ারে বসে বসে বেশ কিছুক্ষণ গান শুনলাম। স্থানীয় শিল্পীদের গান শুনতে খারাপ লাগলো না। তারপর খাবার হোটেল খোঁজা। লোকজনদের জিজ্ঞেস করে বের করলাম খাবার হোটেল। খাওয়া শেষে রুমে ফিরে আসলাম।
ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছি, মোবাইলে এলাম দিয়ে ক্যামেরার ব্যাটারিটি চার্জে দিযে লাইট নিভাতে যাবো এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। বিরক্তি নিয়েই দরজা খুললাম, একলোক সামনে দাঁড়িয়ে।
‘ভাই কি ঘুমিয়ে পড়ছিলেন?’
‘না ভাই, ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
‘আমি এই হোটেলের মালিক, ম্যানেজার বললো আপনি নাকি দেশ দেখতে বের হয়েছেন। তাই আপনাকে দেখতে আসলাম, দেখা করতে আসলাম।’
তাঁর কথা শুনে আমার বিরক্তি চলে গেল। তাঁকে রুমের ভেতরে আসতে বললাম। খাটের এক পাসে আমি অন্য পাশে তিনি বসে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম। আগামীকালের রাস্তা নিয়ে তাঁর সাথে কিছু আলোচনা করলাম। আগামীকাল আমার ইচ্ছা শেরপুর হয়ে গাইবান্ধা চলে যাওয়া। কারণ জামালপুর থেকে শেরপুর মাত্র পনের কিলোমিটার। তিনি আমাকে বলে দিলেন কিভাবে যেতে হবে। তিনি আমাকে যে জায়গাগুলোর নাম বললেন সেগুলো আমার নোটবুকে লিখে নিলাম।
গল্প শেষে তিনি ফিরে গেলেন। নিজের কাছে অন্যরকম লাগছিল, লোকজনের এই ধরনের ব্যবহারে। এই কয়দিনে বহুলোকের কাছ থেকে বহুরকম ব্যবহার পেলাম। এরমধ্যে ভালোর পাল্লাই বেশি।



আপনি খুব অল্প অল্প আর দেরি করে করে লিখছেন। এটা খারাপ হচ্ছে! তাড়াতাড়ি পরের পর্ব দেন প্লিজ!
আসলে তিনটা লেখা এক সঙ্গে লিখতেছি, যেমন ”নৌকা ভ্রমণ”, “৬৪ জেলায় যা দেখেছি” ও “আজকের আমেরিকা”। সেই কারণে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। 🙂
এ ছাড়াও একটা বইয়ের কাজ করছি, একটা পত্রিকার কাজ করছি, একটা ভ্রমণ সঙ্কলনের কাজ করছি তাই আরো দেরি হয়ে যায়।
এরপর থেকে চেষ্টা করবো আরো দ্রুত দেয়ার। 🙂