৬৪ জেলায় যা দেখেছি–১৬

১৬ মার্চ (রংপুর থেকে কুড়িগ্রাম)

সকালে ঘুম থেকে উঠেই রওনা দিলাম কুড়িগ্রামের উদ্দেশে। নব্দীগঞ্জ পার হয়ে একটা স্কুল চোখে পড়লো। স্কুলটি একটি বটগাছের নিচে। পত্রিকায় বিভিন্ন সময় কিছু স্কুলের ছবি দেখতাম তাই গ্রামের স্কুলের কথা মাথায় আসলেই এমন একটা ছবি ভেসে উঠতো। কল্পনার স্কুলটার সঙ্গে এই স্কুলটা হুবহু মিলে গেছে মনে হচ্ছিল।

এর পরই মীরবাগ বাজারের কাছে বিশাল জ্যাম তৈরি হয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম সামনে হয়তো চার রাস্তার মোড় তাই এই জ্যাম। ঢাকার বাইরে বের হওয়ার পর মোটা একটা ধারণা হয়ে গেছে যেখানেই জ্যাম দেখি মনে হয় সামনে চার রাস্তার মোড় অথবা কোন এক্সিডেন্ট। কিছুদূর এগুনোর পর আমার দুইটা ধারণাই ভুল প্রমাণিত হলো। পুরো জ্যামটি লেগেছে হিমাগারের কারণে।

রংপুর বা এই এলাকার দিকে এবার প্রচুর আলু ফলন হয়েছে। আর এই আলু রাখার জন্য বিশাল বিশাল হিমাগারকে আড়তদার বেছে নিয়েছেন। হিমাগারের কাছে যত্রতত্র ট্রাক রেখে দিয়েছে তাই এই জ্যাম। এর মধ্যে আবার একটা ট্রাক একদম আড়াআড়ি রেখে দিয়েছে। আমার অবশ্য এই জ্যাম থেকে মুক্তি পাওয়া কোন ব্যপার ছিল না। চিপাচাপা দিয়ে বের হয়ে চলে আসলাম।

তিস্তা সেতু ও আমার সাইকেল
তিস্তা সেতু ও আমার সাইকেল

বেইলী ব্রীজ বাজার নামে একটা বাজার পার হওয়ার পর দুই পাশের দৃশ্য কিছুটা পালটে গেল। সাধারণত রাস্তার দুই পাশে খোলা মাঠ অথবা সাধারণ কিছু গাছ থাকে। কিন্তু এখানে অনেকদূর পর্যন্ত দুই পাশে বাঁশ ঝাড়। এর মধ্যে আবার উল্টা দিক থেকে বাতাস আসতেছিল। বেশ কষ্ট হচ্ছিল চালাতে। কাউনিয়ার পেরিয়েই পেলাম তিস্তা সেতু। তিস্তা সেতুটি পার হতে একটু ভয় ভয় লাগছিল। কারণ এটি সাধারণ সেতুর মতো না। এটার উপর দিয়ে ট্রেন বাস দুইটাই চলে।

আমার বেশি ভয় পাওয়ার কারণ ছিল মূলত সেতুর স্ট্রাকচারের কারণে। কোন রকমে বড় বড় কাঠ দিয়ে যানাবাহন চলাচলের উপযুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার অনেক জায়গায় ফাঁকা। আমার সাইকেলের একটা বড় সমস্যা এখানে সাইকেলটা ছিল রোড বাইক। সংগত কারণেই চিকন টায়ার চিকন। আর দুই কাঠের ফাঁকে যদি চাকা ঢুকে গেলে বিপদ। অনেক সাবধানে চালাতে হচ্ছিল, কোন বিপদ ছাড়াই সেতুটি পার হতে সক্ষম হলাম। এই রকম ব্রিজ আগে বাসে পার হয়েছিলাম সেই ব্রিজটি ছিল চট্টগ্রামের কালুরঘাট ব্রিজ। আর গাড়ি এক লাইনে চলতে হয়। একপাশের গাড়ি বন্ধ করে অন্য পাশের গাড়িকে যেতে দেয়া হয়।

বড়বাড়ি নামে একটা জায়গায় আসার পরে রাস্তা দুইভাগ হয়ে গেল। একটি গেছে লালমনিরহাটের দিকে সেটি বাম দিকে। আগামীকাল আমার এই রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। আরেকটি রাস্তা কুড়িগ্রামের, সেটা সোজা। আমি সোজা রাস্তাই ধরলাম।

38360_1491740823382_4002092_nকাঁঠাল বাড়ি বাজার পার হয়ে কুড়িগ্রাম শহরে পৌঁছালাম। ফোন দিলাম কায়সার ভাইকে। কায়সার ভাইয়ের বাসাতেই আজ আমার থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। কায়সার ভাইকে ফোন দেয়ার পর উনি পলিটেকনিক্যাল কলেজে যেতে বললেন।

পলিটেকনিক্যাল কলেজে পৌঁছে বুঝতে পারলাম কায়সার ভাই এখানকার শিক্ষক। এখানেই পড়ান আর পাসেই কোয়ার্টারে থাকেন। আমাকে রুমে দিয়েই তিনি আবার চলে গেলেন ক্লাশে। তিনি পরিক্ষা নিচ্ছিলেন আমাকে রুম দেখিয়ে দেয়ার জন্য আরেকজনকে দায়িত্ব দিয়ে তিনি এসেছেন। আমাকে বলে গেলেন বিশ্রাম নিতে, পরিক্ষার পর পরই ফিরে আসবেন।

বিকালে দিকে ফিরে আসলেন তিনি। তারপর অনেক্ষণ আমরা আড্ডা দিলাম। তারপর বের হলাম বাজার করতে দুইজনে মিলে। উনি ব্যাচেলার এখানে একাই থাকেন। তিনি অবশ্য বাজারে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটু আমতা আমতা করছিলেন। আমি অতিথি তাই। কিন্তু আমার তাঁর সঙ্গে যেতে ভালই লাগছিল। ভ্রমণে নানা রকম অভিজ্ঞতার মধ্যে বাজার করার অভিজ্ঞতটাও বাদ যাবে কেন, তাও সেটা যদি হয় ঢাকার বাইরে।

কায়সার ভাই কথায় কথায় জানালেন এখানে দুইটি বাজার আছে। আমরা পলিটেকনিক্যালের কাছের বাজারটাতেই গেলাম। কিছু কেনাকাটার পর হালকা নাস্তা করে ফিরে আসলাম। আমরা রিক্সাতেই গিয়েছিলাম। দূরত্ব অনুযায়ী রিক্সা ভাড়া অনেক কম মনে হইল। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের সবচাইতে কম রিক্সা ভাড়া মনে হয় এই কুড়িগ্রামে।

সন্ধ্যার পরে বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ গল্পগুজব, খাওয়া-দাওয়া। কিছুক্ষণ আইপিএলের ক্রিকেট খেলা দেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.