৬৪ জেলায় যা দেখেছি-২

30179_1405164339024_3513198_n

২ মার্চ (নারায়নগঞ্জ থেকে নরসিংদী)

সকালে ঘুম থেকে উঠলাম ৮ টার দিকে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা শেষ করতে করতে অফিসের অন্যান্য লোকজনও চলে আসলেন। সবার মধ্যেই একধরনের কৌতূহল আমি কোথা থেকে আসলাম এই অফিসে? সবার জবাবই দিচ্ছিলেন গতকালের পরিচয় দেয়া জিএম সাহেব (কেনা জানি তাঁর নামটা জানা হয়নি); সকল বৃত্তান্ত শুনে সবাই বেশ আনন্দিত, এই ধরনের কাজ করতে কেউই দেখেন নাই। বিশেষ করে বাংলাদেশের একজন মানুষ দেশ দেখতে বেড়িয়েছেন। এটা অনেকের কাছেই নতুন। সবাই বলাবলি করছিলেন, বিদেশী অনেক লোকজন বের হতে দেখেছেন কিন্তু দেশের মানুষকে দেখেন নি। অথচ বাংলাদেশ থেকে রামনাথ বিশ্বাস অনেক আগেই বের হয়েছিলেন।

সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শেষ করে ছবি তুলে রওনা দিলাম সোনাখালীর উদ্দেশ্যে। আমার ভ্রমণের উদ্বোধন করে দিবেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম। আমি যদিও গতকাল শুরু করেছি, কিন্তু উদ্বোধনের জন্য স্যারকে গতকাল পাওয়া যায়নি সময়ের অভাবে। আজকে মূলত সোনাখালীতে একটি হাসপাতাল উদ্বোধন হবে, হাসপাতাল উদ্বোধনের ফাঁকে আমাকে সামান্য সময় বের করে দিয়েছেন জিয়া ভাই।

সোনাখালী পৌঁছে দেখি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন ভ্রমণ বাংলাদেশের মনা ভাই, আব্দুল্লাহ ভাই, আবু বক্কর ভাই। আরো অপেক্ষা করছিলেন, ‘এশীয় শিল্প ও সংস্কৃতি সভা’র আল-আসাদুল করিম শিশির ভাই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর উপদেষ্টা মহোদয় আসলেন। এসে হাসপাতাল উদ্বোধন করার আগেই আমার সাইকেল ভ্রমণ উদ্বোধন করে দিলেন। তাঁর সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ-আল-কায়সার, বিশিষ্ট আইনজীবি ব্যারিষ্টার রফিকুল হক এবং নাম না জানা অনেক অতিথি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সবাইকে চেনা আমার পক্ষে সম্ভবও না। ছবি তোলার পাশাপাশি ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় জেনে নিলেন। সঙ্গে তাবু আছে কিনা? রাতে কোথায় থাকবো? খাবো কি? ইত্যাদি।

উদ্ভোধন শেষে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলাম আমার তৃতীয় জেলা নরসিংদীর দিকে। কাঁচপুরের কাছে এসে দেখলাম একটি খেলার মাঠে ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে। সেখানে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ ক্রিকেট খেলা দেখলাম। কল্পনায় চলে গেলাম কয়েক বছর আগে। এক সময় ক্রিকেটের জন্য পাগল ছিলাম। সারাদিন মাঠেই পড়ে থাকতাম।

সেখান থেকে আবার চলতে শুরু করলাম। পথে এক ট্রাক ড্রাইভার থামাল এবং জিজ্ঞেস করলো আমার উদ্দেশ্য কি? মাথায় হেলমেট কেন? সাইকেল চালাতে হলে হেলমেট লাগে নাকি? পেছনে ক্যারিয়ারে ব্যাগ কেন? এই সব নিয়ে কোথায় যাচ্ছি? এই ধরনের নানা রকম প্রশ্ন। উত্তর দিতে দিতে আমি ক্লান্ত। আমি নিশ্চিত আমার পুরো ভ্রমণে এই একই ধরনের উত্তর দিতে হবে।

সকল কিছু শোনার পর লোকটি উত্তর দিলেন, ‘আমিও ভাই এই ধরনের কিছুই ধারণা করেছিলাম। ভাই আমি আপনাকে গতকালও নারায়নগঞ্জের কাছে মানে সাইনবোর্ডের দিকে দেখেছিলাম। কিন্তু সুযোগের অভাবে জিজ্ঞেস করতে পারি নাই।’ তিনি পকেট থেকে মোবাইল বের করে বললেন, ‘ভাই আপনার একটা ছবি তুলবো।’ বলেই আমার ছবি তুললেন। বিদায় নেয়ার সময় আমার মোবাইল নাম্বারও রেখে দিলেন, মাঝে মাঝে ফোন দেয়ার জন্য।

আবার চলা। মাধবদির কাছে এসে ফোন করলাম ভ্রমণ বাংলাদেশের আরেক সদস্য তুহিন ভাইয়ের কাছে তিনি মাধবদিতেই থাকেন। তিনি আমার জন্য মেইন রোডের কাছেই অপেক্ষা করছিলেন। সঙ্গে তাঁর এক বন্ধুকেও নিয়ে আসলেন আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য। তুহিন ভাই দুপুরের খাওয়া খাওয়ালেন। খেতে খেতে গল্প হলো টেকনাফ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার হাঁটার গল্প। হাঁটার প্রোগ্রামেই পরিচয় হয়েছিলো তুহিন ভাইয়ের সঙ্গে।

তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবার রওনা দিলাম নরসিংদী শহরের দিকে। নরসিংদী শহরে পৌঁছে চলে গেলাম ডিসি অফিসে। আমার মূল প্ল্যান ছিল প্রত্যেক ডিসির কাছ থেকে একটি করে প্রত্যয়ন পত্র গ্রহণ করবো।

ডিসি অফিসে ঢুকে ডিসি সাহেবের রুমে গেলাম। বিস্তারিত বললাম, সব শুনে তিনি বললেন, ‘দেখেন আমি যদি আমার প্যাডে দেই তাহলে আপনার সবগুলো কিছুটা বিচ্ছিন্ন থাকবে। তার চাইতে আপনার সঙ্গে যে ডাইয়েরী আছে, সেটাতে সবার স্বাক্ষর নেন। তাহলে সবকিছু একসঙ্গে থাকবে।’ আমার তাঁর পরামর্শ পছন্দ হলো। আমি আমার ডাইয়েরীটা তাঁকে দিলাম। তিনি আমার ডাইরীতে শুভকামনাসহ কয়েকটি লাইন লিখে দিলেন এবং সিল দিয়ে দিলেন।

30179_1405164419026_2449494_n

ডিসি অফিস থেকে বের হয়ে চলে গেলাম কিবরিয়া ভাইয়ের বাসায়। কিবরিয়া ভাইয়ের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন পূর্ব পরিচিত কোরাইসি ভাইয়ের মাধ্যমে। এই জেলায় আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন আছে। আমি কাউকেই জানায়নি ইচ্ছে করেই।

কিবরিয়া ভাইয়ের শহর থেকে ২/৩ কিলোমিটার দূরে। তাঁদের বাসায় গিয়ে লজ্জায় পড়ে গেলাম। কারণ তাঁরা আমার জন্য দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। এমনকি তাঁরা না খেয়ে আমার জন্য অপেক্ষাও করেছেন। আমার দেরি দেখে কিছুক্ষণ আগে খাওয়া শেষ করেছেন। এই ধরনের আচরণে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পরে গেলাম।

তাদেরকে আমি ঠিক মতো চিনিও না, আর তারা আমার জন্য এত কষ্ট করে না খেয়ে অপেক্ষা করেছেন। নিজের কাছে অনেক খারাপ লাগছিল। বাধ্য হয়ে বিকালে আবার খেতে হলো। খাওয়ার মাঝে অনেক গল্প করলাম সবার সাথে। গল্প করতে ভালো লাগছিল। কারণ অনেকদিন পর নিজের জেলায় এসেছি এবং নিজের ভাষায় কথা বলছি।

সারাদিন সাইকেল চালানোর কারণে বেশ ক্লান্ত ছিলাম। বিশ্রাম নেয়ার জন্য বিছানায় শরীর দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠলাম রাত ৮টার দিকে। উঠে তো অবাক মোবাইলে চোখ পড়তেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল, ৮টা বেজে গেছে! সঙ্গে অনেকগুলো মিস কল। হাতমুখ ধুয়ে যাদের যাদের মিস কল পেয়েছি তাঁদের সাথে ফোনে কথাবার্তা বললাম।

রাতের খাওয়ার পর ডাইয়েরীতে কিছু নোট করে ঘুমিয়ে পরলাম।

আরো ছবি।

৬৪ জেলায় যা দেখেছি-১

Comments

comments

Comments

  1. […] ৬৪ জেলায় যা দেখেছি-২ […]

  2. আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম শরীফ, ভালো লাগ্ছে।

    1. ধন্যবাদ, ফুয়াদ ভাই।

      আগামী পর্ব আসছে, ইনশাল্লাহ।

Comments are closed.