৬৪ জেলায় যা দেখেছি–২২

২২ মার্চ (দিনাজপুর থেকে জয়পুরহাট)

39464_1521503847439_3604544_n
দিনজাপুরের বাবু ভাই

ঘুম থেকে উঠেই চলে গেলাম বাবু ভাইয়ের দোকানের সামনে ঘড়িতে তখন আটটা। বাবু ভাইয়েরও একটা সাইকেল আছে। তিনি আমার সঙ্গে শহর থেকে বের হয়ে মেইন রোড পর্যন্ত আমাকে এগিয়ে দিবেন। তাঁর এই রকম ইচ্ছার কথা গত রাতেই জানিয়েছিলেন। দুইজনে হোটেলে নাস্তা করলাম। মূল রাস্তায় আসার পর তিনি আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেলেন। আমি আবার একা হয়ে গেলাম। যদিও আমাকে কেউ না কেউ পথের মানুষ সঙ্গ দিচ্ছেই প্রতিদিন।

আমার আজকের উদ্দেশ্য হিলি হয়ে জয়পুরহাট। লক্ষীতলা বিডিআর ক্যাম্প পার হওয়ার পর পরই পরিচয় হলো প্রবীন এক লোকের সঙ্গে। তিনি যেমন প্রবীন তাঁর সাইকেলটাও বেশ প্রবীন। চাচার সঙ্গে কথপকথন শুরু হলো।

‘চাচা আপনার সাইকেলের বয়স কত?’
‘আশি বছর হবে।’
‘বলেন কি! আপনার বয়স কত?’
‘ষাট পয়ষট্টি হবে।’
‘তাহলে কেমনে কি?’

তারপর তিনি পরিস্কার করে বুঝিয়ে বললেন। সাইকেলটি তাঁর বাবা শ্বশুর বাড়ি থেকে উপহার হিশেবে পেয়েছিলেন। বাবা মারা গেছে আগেই কিন্তু সাইকেলটি রয়ে গেছে। তিনি এখন এটি চালাচ্ছেন। তাঁর ভাষায় সাইকেলেটিতে টায়ার টিউব আর ব্রেক ছাড়া আর কিছু পাল্টাতে হয়নি। এটি তাঁর ছেলেও চালাতে পারবে।

পথেঘাটে এই ধরনের আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী হচ্ছিলাম প্রতিনিয়ত। আর আমার গল্পের ভা-ারও দিন দিন বাড়ছিল। বিডিআর ক্যাম্প পার হয়ে, মোহনপুর নামে একটি জায়গা, তারপর আত্রাই নদীর সেতু পার হয়ে আমতুলী বাজার, তারপর আবার আমবাড়ি বাজার নামের বাহার দেখে মনে হবে আমের ছড়াছড়ি আসলে তা না আমের গাছও তেমন চোখে পড়েনি।

38821_1520239135822_5301119_n
পথে দেখা এক ছোট্ট বন্ধু। সে এই সাইকেলে করে নিয়মিত স্কুলে যায়।

ফুলবাড়ি হয়ে বিরামপুর পার হয়ে একটু সামনে আসার পর রেললাইন। রেললাইনের পর রাস্তাটা দুইদিকে ভাগ হয়ে গেছে। একটি বগুড়া শহরের দিকে এবং আরেকটি হিলি বন্দরের দিকে। আমার উদ্দেশ্য হিলি হয়ে জয়পুরহাট যাওয়া। তাই আমি রেললাইন ডানদিকে রেখে হিলির রাস্তা ধরলাম।

কিছুদূর এগুনোর পর পরই দূরে দেখতে পেলাম কাঁটাতার। বুঝতে পারলাম কাঁটাতারের ওপারেই ভারত। অন্যরকম এক অনুভূতি হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল কাঁটাতারের ওপারে ভারত, কাঁটাতারের ওইপারে আমাদের দেশ না, কিন্তু দেখতে তেমন পার্থক্য নাই। ভাবতেই কেমন যেন লাগছিল। আরো কিছুদূর এগোনর পর যেখান থেকে মালামাল এবং মানুষ আশা-যাওয়া করে সেই গেট দেখা গেল। কাছে যাওয়ার পর বিডিআরের জওয়ানরা বলে দিলেন এখানে যেন কোন ছবি না তুলি। ছবি তুললে সমস্যা হবে।

তাই কোন ছবি তুলতে পারলাম না হিলি পোর্টের গেটের। তবে সেখান থেকে বের হওয়ার পরই দুইজন বিদেশি অতিথির দেখা পেলাম। এবং আরো অবাক করার বিষয় তাঁরা চমৎকার বাংলা বলে। তাঁরা আমাকে দেখে কথা বললো এবং আমার কয়েকটি ছবিও তুললো। নিজে থেকেই জানতে চাইলেন আমি কি সাইকেল এক্সপেডিশনে বের হয়েছি কিনা। আমিও তাঁদের একটি ছবি তুললাম।

হিলি পোর্টের আশেপাশে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি থাকার ও খাবার হোটেলও চোখে পরলো। এবং হোটেলগুলোর মানও বেশ ভালো। হিলি বন্দর দেখার পর পাঁচবিবি হয়ে জয়পুর হাট শহরের দিকে রওনা দিলাম।

এক সময় পাঁচবিবি হয়ে জয়পুরহাট শহরে পৌঁছালাম। চলে গেলাম সরাসরি এলজিইডির অফিসে। সেখানেই আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে কোরেশী ভাইয়ের সঙ্গে। এতদিন অনেক জায়গায় তিনি থাকার ব্যবস্থা করেছেন। আজ তাঁর সঙ্গেই থাকার ব্যবস্থা। তিনি আমাকে রুমে রেখে অফিসে চলে গেলেন। এই ফাঁকে আমি গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম।

41205_1523627620532_7587433_n

সন্ধ্যায় কোরেশী ভাইয়ের সঙ্গে বের হলাম শহর দেখতে। স্টেশনের দিকে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলাম। একটি চিনিকল দেখালেন তিনি এবং জানালের চিনিকলটি বছরে মাত্র দুই থেকে আড়াই মাস চালু থাকে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে এঁরা সারাবছর চলে কিভাবে? এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম যাঁরা স্থায়ী চাকরী করেন তাঁরা সারা বছরই বেতন পান। কিন্তু যাঁরা অস্থায়ী তাঁরা দুইমাস এখানে কাজ করেন বাকি সময় অন্যান্য কাজ করেন।

শহরে একটি মাঠে বইমেলা চলছে। সেখানে ঘুরে ঘুরে বইপত্র দেখলাম। তারপর শুরু হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রায় আধা ঘণ্টার মত গানবাজনা শুনলাম। খাওয়াদাওয়ার পরে রুমে ফিরে আসলাম।

Comments

comments

Comments

  1. কোরেশী

    জয়পুরহাটে এসে আমাকে সময় দিয়েছো, তাই ধন্যবাদ।

    1. কিযে বলেন ভাই। আপনে আমার ভ্রমণের জন্য যা করছেন তা বলে শেষ করা যাবে না।

  2. Sarower Hossain

    Super….. I like it. Go ahead…..

    1. ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.