১৫ মার্চ (গাইবান্ধা থেকে রংপুর)
সকালের ঘুম ভাঙ্গল সকাল সকালই। বিছানায় সোয়া অবস্থাতেই মমিন ভাইয়ের গলা শুনতে পাইলাম। তিনি বুয়ার সঙ্গে কথা বলছেন, ‘বুয়া আমার একজন গেষ্ট আছে, যদি পারেন একটা ডিম ভেজে দিয়েন।’ বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম দুইজনে। আমি সাধারণত সকালে ভাত খাইনা, কিন্তু সেটা সব জায়গায় বলাও যায় না। সবজি, ডিম আর ভাত দিয়ে সকালের নাস্তা করলাম দুইজনে।

মমিন ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হলাম। গাইবান্ধা শিল্পকলার সামনে সাইকেলটা সামনে রেখে একটা ছবি তুললাম। আমার রুট প্ল্যান অনুযায়ী আমার আজ রংপুর যাওয়ার কথা ছিল না। আমার প্ল্যান ছিল গাইবান্ধা হয়ে কুড়িগ্রাম চলে যাওয়ার। কিন্তু আমার টাকা ফুরিয়ে গেছে তাই রুট প্ল্যান কিছুটা পরিবর্তন করতে বাধ্য হলাম। আর রংপুরের দিকে যাওয়ার কারণ ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথ রংপুরেই আছে। উপরের দিকে অর্থাৎ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়ের দিকে কোন বুথ নেই। আর আমার রুট প্ল্যান ছিল ঐ দিকেই।
টাকা সংকটের কথা পরে অবশ্য কোরায়েশী ভাই একটু বকা দিয়েছিলেন। আমি চাইলেই রুট প্ল্যান অনুযায়ী কুড়িগ্রাম চলে যেতে পারতাম। সেখানেই উনি টাকার একটা ব্যবস্থা করতে পারতেন। অথচ চাইলে মমিন ভাইয়ের কাছ থেকেও একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারতেন। কিন্তু আমি উনাকে আর ঝামেলায় ফেলতে চাই নাই। এমনিতেই উনি উত্তরবঙ্গের এই দিকে মোটামুটি অনেক জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। যা আমার জন্য অনেক বড় একটা ব্যপার।
পর্যায়ক্রমে হাট লক্ষীপুর, ভাঙ্গারাস্তা, গোডাউন বাজার, বীরগঞ্জ, পীরগাছা হয়ে রংপুর শহরে পৌঁছালাম। এই রাস্তাটা খুব একটা ভাল ছিল না। অনেক ভাঙ্গাচুড়া, তাই সাইকেল চালাতেও খুব কষ্ট হচ্ছিল। রংপুর জেলাকে মাত্র নতুন বিভাগ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। তবে বিভাগীয় শহর যেমন হয় রংপুর শহরটা ঠিক তেমন বড় শহর না। রংপুরে পৌঁছানোর পর থাকার জায়গা জুটলো জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে। রুমে ঢুকতে ঢুকতেই রাসেল ভাইয়ের ফোন। ফোন দিয়ে খোঁজ-খবর নিলেন। কিছু উপদেশও দিলেন, ঘটনা অঘটনা যা কিছুই ঘটুক না কেন সব যেন নোট করতে থাকি এবং সঙ্গে সঙ্গেই। পরে ভুলে যেতে পারি।
রুমে ঢুকে হাতমুখ ধুয়ে গোসল শেষ করে বের হলাম কিছু খাওয়ার জন্য এবং শহরটা ঘুরে দেখার জন্য। খাওয়া শেষ করলাম পাশের এক হোটেলে। খাওয়া শেষ করে জেলাপরিষদ অফিসের ঠিক উল্টাদিকে দেখতে পেলাম শিল্পকলা একাডেমী। সেখানে ঢুকে দেখতে পেলাম সাংস্কৃতিক অনেক কর্মকাণ্ডই চলছে, এক পাশে মাটিতে বসে দুইজন যুবক গীটার বাজিয়ে গান করছে। তাদের এখানে কিছুক্ষণ গান শুনলাম, পাশেই দেখতে পেলাম রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি, সরকারী গণগ্রন্থাগার।
তার উল্টাপাশে বেশ কিছু বইয়ের দোকান চোখে পড়লো। বইয়ের দোকানগুলো দেখে ঢাকার নীলক্ষেতের কথা মনে পড়ে গেলো। আজ অনেকদিন যাবত ঢাকার বাইরে অবস্থান করছি। কতদিন নীলক্ষেত যাই না। ঢাকায় থাকলে নিশ্চিত দিনে অন্তত একবার নীলক্ষেত যেতে হতই।
যাই হোক আরো কিছুদূর যাওয়ার পরেই হাতের ডান দিকে একটি রাস্তা চলে গেছে একটু ভিতরের দিকে। একটু সামনে এগুতেই দেখতে পেলাম চিড়িয়াখানার গেট! ঢাকার বাইরে চিড়িয়াখানায় কখনও যাওয়া হয় নাই। একটু অন্য রকম লাগলো চিড়িয়াখানাটা, অল্প কিছু প্রাণি আছে। খুব একটা বড় না। বড় আশাও করা ঠিক না, এটা তো ঢাকা শহর না যে বিশাল চিড়িয়াখানা হবে। রংপুরের আশেপাশের জেলা অথবা থানা থেকে অনেকেই এসেছিলে চিড়িয়াখানা দেখতে। কেউ নিজেদের গাড়িতে কেউবা আবার বাস ভাড়া করে। তাঁরা ফিরে যাচ্ছিলেন, কারণ তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে। চিড়িয়াখানার আশেপাশে বেশকিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে রুমে ফিরে এলাম।

আবার বের হলাম প্যানিয়ারটা নিয়ে। প্যানিয়ারটা একটু সেলাই করতে হবে, কারণ একটু ছিড়ে গিয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় কিছুক্ষণ ঘুরলাম মুচির দোকান খোঁজ করার জন্য। বেশিক্ষণ গুরতে হলো না। অল্প সময়ের মধ্যেই পেয়ে গেলাম মুচির দোকান। ব্যাগ সেলাইয়ের মাঝখানে জেনে নিলাম এখানে খাবার হোটেল কোথায় আছে ভাল। সেলাই শেষে আবার রুমে ফেরা। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতের খাবার খেতে বের হলাম। তারপর রুটিন অনুযায়ী ঘুম।