কাকে ঢুকার পর প্রথম রমজান মাস। আমার জন্য আরো অনেক কিছু প্রথম। প্রথম কোন রমজান মাস যেখানে আমি নাখাল পাড়ায় নাই। পরিবারের কেউই সঙ্গে নাই। অনেক কিছুই নতুন। বাসার বাইরে সাধারণত কখনও ইফতার করা হতো না। যদিও করা হতো সেটা কারও না কারও বাসায় দাওয়াতের কারণে।
আমাদের বাসায় সব সময় ঘরেই ইফতার তৈরি করা হতো। বাইরে থেকে শুধু জিলাপিটা কিনে আনা হতো। কিন্তু কাকে আসার পর কিভাবে ইফতার করবো সেটা একটা চিন্তার বিষয় ছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম দোকান থেকে কিনে এনে খাব। কিন্তু যে বেতন পাই তা দিয়ে যদি কিনে ইফতার করি তাহলে ১৫ দিনের বেশি চলা কঠিন।
অফিসে তখন আমরা কাজ করতাম মাত্র দুই জন। আমি আর জাফর চাচা। চাচাই জিজ্ঞেস করলেন ইফতার কিভাবে করবা ঠিক করছো? আমি না বলাতে চাচাই বুদ্ধি দিলেন, ‘দেখো সারাদিন রোজা রেখে বাইরের ভাজাপোড়া দিয়া ইফতার করার কোন মানেই হয় না। স্বাস্থ্য অর্থ দুইটাই খারাপ হবে। তার চাইতে আমি একটা বুদ্ধি দেই। দুই চাচাভাতিজা মিলে বেশি করে চিড়া কিনে ফেলবো। তারপর প্রতিদিন কলা কিনে আনবা ঐটা দিয়া ইফতার করবো। আর অফিসে তো চিনি আছেই, আমাদের চিনি কিনতে হবে না।’
এর পর থেকে সব সময় ইফতারে আমরা চিড়া আর কলা দিয়া ইফতার করতাম। কলা-চিড়ার সঙ্গে অবশ্য লেবুর সরবত থাকত। অফিসের বড় বড় লোকজনরা থাকলে উনারা ইফতার আনাতেন সেখান থেকে আমরা ভাগ পেতাম, ঐ দিন আর আমাদের কলা-চিড়া খেতে হতো না। আর ইফতার পার্টি হলে তো কথাই নেই।
জাফর চাচা অফিস ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও আমি এই রীতিতেই ইফতার করতাম। এখনও মাঝে মাঝে করি। জাফর চাচার কাছ থেকে নানা রকম বুদ্ধি পেতাম কিভাবে কম খরচে চলা যায়।
প্রতি রমজান মাসে প্রায়ই ইফতারের সময় চাচার কথা মনে পড়ে। আজ বাসায় ফিরে চিড়া আর কলা দিয়ে আবার ইফতার করবো। কাকের সেই পুরানো দিনের কথাগুলো মনে করবো। চাচার একটা নাম্বার ছিল সেটা বন্ধ। তাই চাচার খোঁজ-খবর নেয়ার কোন উপায় নেই।
.
.
পহেলা রমজান ১৪৩৭
২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩