স্যারের কাছ থেকে অনেক আগের শুনা একটা কথা কেমন করে যেন মাথার ভেতর ঢুকে গেল তা বুঝতেও পারিনি। যখন কলেজে প্রথম দিন যাই তখন স্যার একটা প্রশ্ন করেছিলেন। প্রশ্নটা এরকম ছিল, ‘বলতো মানুষ কিভাবে সবচেয়ে বেশি শিখতে পারে?’ আমরা তো কেউ কোন কথা বলছি না কারণ আজই প্রথম দিন। তখন স্যার আবার বললেন, ‘মানুষ সবচেয়ে বেশি শিখতে পারে বই পড়ে এবং ভ্রমণ করে।’ দুই একটা বই আমার পড়া হয়েছে কিন্তু দুই একটা জায়গায় কখনও ভ্রমণ করা হয়নি। তাই সবসময় সুযোগ খুঁজেছি কোথায় যাওয়া যায়। অপেক্ষার ইতি টেনে দিল পিক৬৯। তাঁরা একটা ইভেন্ট করার সিদ্ধান্ত নেয় যে বান্দরবানে একটা ট্যুর করবে। আমি আমার এক বন্ধুর কল্যানে যাওয়ার বন্দোবস্থ করে ফেললাম। আমি মনে মনে দৃঢ় সংকল্প, সব কিছু আমার প্রতিকূলে থাকলেও আমি যাবই যাব। এটা হচ্ছে আমার জীবনের প্রথম ভ্রমণ। কোন কিছু ভাবার সময় নাই। জীবনে অনেকটা পথ ভাবতে ভাবতে মানুষ আর নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না তাই কোন কিছুকেই পাত্তা দিলাম না। যথা সময় ঘনিয়ে আসছিলো আমার মন অনেক বেশি আন্দোলিত হচ্ছিল। জীবনের প্রথম ট্যুর বলে কথা। কত চিন্তা দূঃশ্চিন্তা এসে কাধে ভর করার চেষ্টা করছে কিন্তু আমার সজাগ কোষ ডোন্ট কেয়ার ডোন্ট কেয়ার বলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
তারিখ ১৩, বুধবার। আজ আমরা রাতে রওয়ানা দেব। আজ আরেকটা বিশেষ দিনও। আজ বিশিষ্ট্য উপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। এটাই তাঁর মৃত্যুর পরের প্রথম জন্মদিন। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে নানা পদের অনুষ্ঠান দেখাচ্ছে। আমি সারাদিন টিবি দেখে কাটালাম। তার মধ্যে আমার বন্ধুটি কিছুক্ষণ পরপর সব গুছিয়ে রাখছি কিনা ফোন করে তাড়া দিচ্ছিল। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। প্রথম গন্তব্য আজিজ মার্কেটের পিক৬৯ অফিসে। সেখানে গিয়ে প্রথম পরিচয় হল দুজন অপরিচিত মানুষের সাথে। একজন মানিক ভাই আরজন ফারজানা আপু। আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেলাম বাস স্ট্যান্ডে। ওখানে সবাই মিলিত হবে। আমরা গেলাম এবং আস্তে আস্তে সবাই এসে জড় হতে লাগলো। এখানে এসে আরও অনেকের সাথে পরিচয় হল। আমরা মেয়ে ছিলাম ৫ জন। সবাই সবার সাথে পরিচিত হয়ে গেলাম। টুম্পা আপু, ফারিহা আপু এবং সাদিয়া আপু। আমাদের বাস ছাড়ল রাত ১০:৩০ মিনিটে। আমারা বসলাম যার যার পছন্দমত জায়গায়। শুরু হল আমার জীবনের কল্পিত ভ্রমণের বাস্তব রূপ।
এছাড়া আমাদের দেশের বাজারে এখন গরম হাওয়া বইছে। রাজনৈতিক দলগুলো একেকজন একেকজনকে রাজা ভাবছে। তাদের রাজ্য শাসন পদ্ধতির যাঁতাকলে পড়ে আমরা নিরীহ পাবলিক ভর্তা হয়ে যাচ্ছি। তাই আমাদের জীবনের করুন পরিনতির কথা চিন্তা করে ভয়ে শিহরিত হয়েও রওনা দিলাম। বাস ঠেলা গাড়ির মত চলা শুরু করল কারণ রাস্তায় বিশাল জ্যাম। আমাদের বাসের ড্রাইভার মামা আবার সুদূর আরব দেশ থেকে ড্রাইভিং করে এসেছে তো তাই কিছুক্ষণ পরপর শুধু মরুভূমির দিকে বাস নামিয়ে দিচ্ছিল অর্থাৎ সোজা রাস্তায় না গিয়ে মামা বারবার রাস্তা পাসের খোলা জায়গায় নামিয়ে দিচ্ছিল। মামা বুঝানোর চেষ্টা করছে আরব দেশের খেজুরের কত তেজ দেখ। আমার চিন্তা ছিল হাড্ডিগুলোর জোড়া লাগানোর জন্য আমায় আবার কুমিল্লার মগবাড়িতে থেকে যেতে হবে না তো! কুমিল্লায় রাত তিনটায় ধানসিঁড়ি হোটেলে রাতের খাওয়া সেরে নিলাম। আবার বাসে উঠলাম।
ছবি: মানিক ভাই
আমাদের বাস ভ্রমণ শেষ হলো ১৮ ঘন্টায়। বাস মামা আমাদের দিয়ে ফুটবল খেলতে খেলতে পরের দিন ৪:৩০ নিয়ে নিক্ষেপ করেন কেরানির হাটে। সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন জুমন ভাইয়া। উনি আগেই আমাদের খাবারে বন্দবস্ত করে রেখেছিলেন। দুপুরের খাবার শেষ করে আমরা বান্দরবান শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মহেন্দ্র নামক একপ্রকার যানে আমরা উঠলাম। যেটা দেখতে সিএনজির মতো কিন্তু সিএনজিও না আবার টেম্পুও না। আমি, টুম্পা আপু, শরীফ (গাইড) এবং লিমন ভাইয়া একটায় উঠে বসলাম। আসলে এখন যা হচ্ছে তার কিছুই আমরা চিন্তা করিনি। রাব্বি ভাইদের প্ল্যান অনুযায়ী কিছুই হচ্ছে না কারণ বাসেই আমাদের একটা দিন নষ্ট হয়ে গেছে। আসলে রাস্তায় বের হওয়া পরে বুঝা যায় কি হবে, এটাতে কারো কোন হাত থাকে না। আমরা সব বিধির বিধান মেনে নিয়ে নতুন প্ল্যানে কাজ করছি। আমরা সন্ধ্যা ৬টার দিকে বান্দরবান শহরের উদ্দেশে রওয়ানা দিলাম। রাস্তার দুই পাশে ছোট বড় পাহাড়। আবছা আবছা আলো পড়ে হঠাৎ হঠাৎ দেখতে পাওয়া পাহাড়। এটাও একটা মজার জিনিস। পুরো দেখা যায়না বলে আমি আমার মনের ভিতর এর একটা প্রতিকৃতি অংকন করতে পারছি। নিজেকে ব্যস্ত রাখার এই একটা উপায়। মাঝে মাঝে জোনাকির ঝাঁক। আমাদের গাড়ির আলো পড়লে বুঝা যায় না। কিন্তু দূর থেকে দেখে মজা পাচ্ছি। এখন আর দিনে না আসতে পারার আক্ষেপটা নেই। জোনাকির আলোয় বিলীন হয়ে গেল সকল ক্লান্তি। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। বুকের ভিতর কোথায় যেন ছুঁয়ে যায়।
আমরা বান্দরবান শহরে এসে পৌঁছালাম ৭টায়। এখানে রাতে থাকার একটা ব্যবস্থা হল। আমরা রাতে থাকব সুমাইয়া নামক একটা হোটেলে। এই হোটেলের পাশে একটা বড় ব্রিজ আছে। আমরা সংখ্যায় তের হওয়ায় পাঁচটা রুম নেওয়া হয়। প্রতিটা রুম বড় এবং মোটামোটি সবাই আরামেই থাকতে পারবে। হোটেলটা একদম ভালও না আবার খারাপও না, চলে আর কি। আমরা গোসল করে ফ্রেশ হয়ে ব্রিজটার উপর কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। আড্ডা শেষে রাতের খাবার খেলাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ চা পানের সুবাদে আড্ডা দিলাম। এরপর একটা শান্তির ঘুম দিলাম।
সকাল ৫:৩০ আমরা মোটামুটি সবাই ঘুম থেকে উঠে গেছি। কারণ সকাল ৬ টায় চাঁন্দের গাড়ি আসার কথা। আমরা রেডি হচ্ছি এমন সময় শরীফ এসে জানাল যে গাড়ি চলে এসেছে সবাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নীচে নামতে। আমরা রেডি হয়ে নীচে নেমে যে যে চা খাওয়ার খেয়ে নিলাম। গাড়িতে উঠে সবাই অনেক হাসাহাসি করছে। কেউ কেউ ছবি তোলার পোজ দেওয়া শুরু করছে (ডিম পোজ না)। কেউ উঠে দাড়িয়ে দুই পাশের পাহাড় দেখছে। এই রকম দেখতে দেথতে আমরা রোয়াংছড়ি এসে পৌঁছলাম। এখানে আমরা সবাই নাস্তা করে নিলাম। আমাদের কথা ছিল ৮ টার দিকে আমরা আমাদের ট্র্যাকিং শুরু করব কিন্তু তা আর হল না। কারণ আমাদের পোর্টাররা এসেছে একটু দেরি করে। এরি মধ্যে আমার আবার আরেক সমস্যা। আমি ট্রাকিং এর জুতা নেইনি। তাই প্রথমেই রাব্বি ভাইয়ের ছোটখাট একখান ঝাড়ি হজম করে ফেললাম। মালিক মানুষ বলে কথা! তারপর ওখানে বাজার থেকে একজোড়া জুতা কিনলাম। সেটা দিয়েই আমি আমার ট্র্যাকিং শুরু করলাম।
৮:৩০ এর দিকে আমরা ট্র্যাকিং শুরু করলাম। আমাদের উদ্দেশ্য পাইখংপাড়া। আমরা চলতে শুরু করলাম। আমার প্রথম থেকেই তেমন কোন খারাপ লাগেনি। আমরা ঝিরি ধরে হাঁটতে লাগলাম। ছোট বড় পাথর ডিঙিয়ে আমরা যাচ্ছি। মাঝে মাঝে ছবি তোলা। আমরা অনেক দূর গিয়ে ১৫ মিনিটের একটা ব্রেক নিলাম। এমন করে মোটামুটি তিন চারটা ব্রেক নিয়ে আমরা দুপুর ২টায় এসে পৌঁছুলাম পাইখংপাড়ায়। এখানে আমরা পিটার দাদার ঘরে এসে জিনিসপত্র রেখে ঝর্না দেখার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। দুই একজন থেকে গেছে রান্না-বান্নার জন্য আর আমরা বাকিরা রওয়ানা দিয়েছি ঝর্নার দিকে। এখানেও মোটামুটি আধা ঘণ্টা হাঁটার পর আমরা ঝর্নার সন্ধ্যান পাই। সবার মনে ঝর্না দেখে ঝর্না বইতে লাগল। মানিক ভাই আমাদের সবাইকে ধরে ধরে ঝর্না দিকে নামিয়ে দিল। আমি জীবনে প্রথম ঝর্না দেখলাম। উত্তেজনায় চোখে পানি চলে আসল। চোখের পানি গোপন করে সকলে সঙ্গে একযোগে চিৎকার দিলাম। আমি নিশ্চিত যে আমরা সবাই এই সুন্দর দৃশ্য দেখে সারা দিনের হাটার কষ্টটা ভুলে গেছি। ঝর্নায় গোসল করে ফেরার সময় বীরত্ব দেখাতে গিয়ে হাঁটুতে ব্যথা পেলাম। অবশ্য কেউ তেমন করে খেয়াল করেনি। বিষযটার মজা টের পেলাম রাতে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে এসেই সবাই মজা করে দুপুরের খাবার খেলাম। খাবার খাওয়ার পর পরই আমাদেরকে রাব্বি ভাই তাড়া দেওয়া শুরু করলেন কারণ আমরা এখনও ক্যাম্পসাইডে যাইনি। সেখানে যেতে আমাদের আরও দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগবে।
ছবি: লিমন ভাই
সবাই রেডি হয়ে রওনা দিলাম ক্যাম্প সাইডে। আমাদের সাথে তিনজন রক্ষী আছেন মানে স্থানীয় ব্যক্তি এবং আমাদের পিটার দা। সবচেয়ে মজার বিষয় হল তাদের কাছে একটা প্রাগৈতিহাসিক বন্দুকও ছিল। যেটা দিয়ে তাঁরা সচরাচর শিকার করেন। তাঁরা রাতে আমাদের বালামুসিবত থেকে রক্ষা করবেন বলে দায়িত্ব নিয়েছেন। সবাই যাচ্ছে কিন্তু আমি, টুম্পা আপু, রাব্বি ভাই, লিমন ভাই, জুমন ভাই ও শরীফ সহ পেছনে পড়ে গেছি। আমরা রাস্তা ভুল করে অন্য রাস্তার অনেকখানি সামনে চলে আসলাম। এখন আমার আর টুম্পা আপুর জান যায় যায় অবস্থা। কিন্তু আমি আর টুম্পা আপু নীরব। আমরা একটু আকটু আ ও করছি আর কি! যাক শেষে আবার পেছনের দিকে আসলাম। দেখি আমাদের দুজন রক্ষী উদ্বিগ্ন চিত্তে অধীর আগ্রহে আমাদের পথপানে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের দেখে একগাল হেসে বলল তাঁরা আমাদের খোঁজে আবার পাইখংপাড়া থেকে ঘুরে আসছেন। আমি তো শুনে গোপনে একবার ভাল করে তাদের দেখে নিলাম। এটা কি করে পারল! এদিকে আমাদের আগে যারা ছিল তারাও আমাদের জন্য চিন্তিত। তারা আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। এখন সিদ্ধান্ত নিল যে সবাই মোটামুটি কাছাকাছি থাকবে আর স্থানীয় একজন সামনে দুইজন মাঝখানে এবং একজন পেছনে। যাক এবার আমাদের বেধে ফেলা হল অদৃশ্য দড়ি দিয়ে।
অবশেষে আমরা আমাদের ক্যাম্প সাইডে এসে পৌঁছালাম। এখানে ঘটল আরেক ট্রাজেডি। রিচার্ড ভাইয়া নামতে গিয়ে পাথরে পা পিছলে আছাড় খেল এবং তাকে ধরতে গিয়ে আরেকটা আছাড় খেল ফারিহা আপুও। আমি তাদের সামনেই ছিলাম। মনে মনে ভাবতেছি কি বাঁচাটাইনা বেঁচে গেলাম কারণ আমাকে ধরার জন্য কেউতো ওখানে ছিল না।
রাতটা অনেক মজার ছিল। এমন দৃশ্য না দেখে মরে গেলে হয়তো অনেক বেশি আফসোস থাকতো। এখন মনে হচ্ছে মানুষ কেন সুন্দর কিছু সময়ের কথা মনে করে বেঁচে থাকতে চায়? আমি যদি কখনও সুন্দর দুই একটা দিনের কথা মনে করি তাহলে প্রথমে এই দিনটির কথাই মনে আসবে। ক্যাম্প সাইডে এসে সবাই বসে পড়লাম। এমন সময় রাব্বি ভাই বলল যে, আমরাই প্রথম ট্যুরিস্ট যারা এই সুন্দর জায়গাটাতে ক্যাম্প করছি। এটাও আরেকটা মজা। রাতে মুরগীর বারবিকিউ হবে। সবাই বারবিকিউ করার আয়োজনে নেমে গেল। কেউ কেউ তাবু টানানো শুরু করলো। আর স্থানীয়রা আগুর জ্বলিয়ে দিল। সবাই মোটামুটি কাজ করছেন, এরি মধ্যে আমাদের সবজান্তা সাদিয়া আপু কবিতা লিখতে বসে গেলেন। উনার কবিতাটি আমরা দেখার আগেই তিনি সেটার সলিল সমাধি রচনা করে ফেললেন আগুনে পুড়ে। আহা আফসোস, যদি একটু দেখতে পেতাম! আমার সবচাইতে ভালো লগলো যখন আমাদের তাবু গুলো টানানো হলো এবং তাবুগুলোর ভেতর থেকে আলোর কারণে প্রতিটা তাবুকে একেকটা ফানুস মনে হচ্ছিলো। পানির উপর আলোর ফানুসের পরিবর্তে পানির উপর পাথর, তার উপর তাবুর ফানুস। মনমুগ্ধকর একটা দৃশ্য। যারা যারা আড্ডা দেওয়ার দিচ্ছে আমি রাতের বারবিকিউ খেয়ে ঘুমাতে গেলাম।
ছবি: টুম্পা আপু
আমি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। উঠেই দেখি স্থানীয় একজন বসে আছেন। ওনাকে বললাম ঘুমান নি? বলল, “না, আমার তাবুর ভিতরের লোকের নাক ডাকা এবং দুই পাশের দুই তাবু ভিতরের জনদেরও সমান তালে নাক ডাকা হচ্ছে তাই ঘুমাতে পারিনি। আসলে দুই পাশের দুই তাবুতে ছিলেন লিমন ভাই ও মানিক ভাই। আর স্থানীয় বাকিরাও ঘুম থেকে উঠে হাসতে হাসতে বলল আমরাতো রাতে ওনার (মানে মানিক ভাইয়ের তাবু দেখিয়ে) নাক ডাকা শুনে ভাবছি যে ভালুক আসছে বুঝি তাই তাড়াতাড়ি বন্দুক নিয়ে বের হলাম। বের হয়ে তো দেখলাম এই অবস্থা। সকালে একে একে সবাই ঘুম থেকে উঠলাম। চা বানিয়ে চা-বিস্কুট দিয়ে সকালের নাস্তা করলাম। আমরা তাবু গুছিয়ে আবার রওনা দিলাম পাইখংপাড়ার উদ্দেশে। দুপুর ১টায় আমরা পাইখংপাড়ায় এসে পৌঁছালাম। দুপুরে খেয়ে রওনা দিলাম ট্রাকে করে। এই ট্যুরে আমার সব কিছুই নতুন তাই ট্রাক জার্নিটাও নতুন। ট্রাকে উঠার পর মনে হল ঢাকায়তো আর ফিরে যেতে পারব না। এটা তো বাস ড্রাইভার মামার চেয়ে এক ডিগ্রী বেশি। ট্রাক আমাদেরকে একবার উপরে তোলে আবার ছেড়ে দেয়। মনে হইছে ট্র্যাকিং করাই ভাল ছিল। ট্রাকে আমাদের দুই একজন অসুস্থ হয়ে গেল। এত ঝামেলার ভিতর দিয়েও মানিক ভাই যে হাসতে পারে এবং হাসাতে পারে তার প্রমাণ পাওয়া গেল। ট্রাকের আছাড়ে মানিক ভাইয়ের সানগ্লাসের একটা গ্লাস পড়ে গেল এবং মানিক ভাই ঐ এক গ্লাসবিহীন সানগ্লাস দিয়েই সবাইকে দেখতে থাকে। হাসতে হাসতে পেটে খিল পড়ে গেল।
আমরা বান্দরবান শহরে এসে বাসের টিকেট করি। আমাদের উদ্দেশ্য বাসে চিটাগাং গিয়ে ট্রেনে করে ঢাকায় ফেরা। আমাদের সাদিয়া আপু ফোনে ফোনেই এগারটা টিকেট করে ফেললেন। সবার জন্য টিকেট কাটলেন কিন্তু নিজের জন্য কাটতে পারলেন না। আমরা আমাদের ভ্রমণের ইতি টানতে যাচ্ছি। রাতে খেয়ে আমরা ট্রেনে উঠে গেলাম। রাব্বি ভাই সবাইকে টিকেট দিয়ে দিলেন কিন্তু টেনশন তো অন্য জায়গায়, একটা টিকেট কম। এছাড়াও আমরা সবাই একই কামরায় টিকেট পাইনি। আমাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে তিনটি কামরায়। অবশেষে সবাই ট্রেনে উঠলাম, যথা সময়ে ট্রেন ছেড়েও দিলো। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই আমি শীত শীত অনুভব করলাম। আমার ব্যাগ খুলে দেখি সব কাপড় ভেজা কারণ দুপুরে গোসলের পরে কোন কাপড় শুকায়নি। যাও একটা চাদর ছিল সেটা শরীফের কাছে, তাঁকে ফোনে বলার পরেও প্রায় দুই ঘণ্টা পর সে হাজির ছাদর নিয়ে ট্রেনে অনেক ভীড়, আর আমাদের সীটও একটি কম। তাই আমি আর ফারজানা আপু শরীফকে আর যেতে দেইনি। আমরা তিনজনেই দুইটা সিট ভাগ করে বসে পড়লাম। আমার ভালই ঠাণ্ঠা লাগছিলো ট্রেনে। সকাল ৭ টায় আমরা ঢাকায় এসে নামলাম। আমাদের ভ্রমণ শেষ হল মানিক ভাইয়ের আরেকটা মজাতে। মানিক ভাই এক গ্লাসওলা সানগ্লাস চোখে দিয়ে রাব্বি ভাইকে বলে দেখ রাব্বি কেমন লাগছে? আর আমাদের সবার তো হাসি। সেই হাসি নিয়েই বাড়ি ফিরলাম।



