অনেকেই জিজ্ঞেস করে আপনি অথবা তুমি কতদূর পড়ালেখা করেছো। কখনো কখনো বলি আমি কোনরকমে এসএসসি পাশ করেছি, আবার কখনো কখনো বলি আমি স্কুল পাস করিনি। যাঁদের সঙ্গে প্রথম প্রথম পরিচয়, তাঁরা কেন জানি বিশ্বাস করতে চায় না আমি মাত্র এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। অনেকেই পাল্টা আবার জিজ্ঞেস করে সত্যি করে বলো অথবা বলেন কতদূর পড়ালেখা? উত্তরে সত্যি কথাই বলি। অনেকে মেনে নেন, অনেকে সন্দেহের চোখে বলে ও আচ্ছা। অনেককেই বোঝাতে পারিনা আমি আসলেই এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি এবং এসএসসি পাশও করেছি সাধারণ কোন স্কুল থেকে না, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
এখন আমি আমার পড়ালেখার বৈচিত্রময় উত্থান-পতন বলি। আমি প্রথমে ভর্তি হয়েছিলাম কেজি শ্রেণিতে ‘লিটল জুয়েল প্রি ক্যাডেট’ নামক একটি স্কুলে। পরবর্তীতে ‘নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়’ স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হই, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করার সৌভাগ্য আমার হয়নি। এক বছর কোন স্কুলে পড়ালেখা না করে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হই ঐ স্কুলেই। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ালেখা করি ঐ একই স্কুলে। এর পরে বিশাল এক বিরতী, অর্থাৎ পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এই চার ক্লাস আমি কোথাও পড়ালেখা করিনি, করিছি বিভিন্ন যায়গায় ছোট ছোট কাজ আর খেলাধুলা। এই পাঁচ বছর চার ক্লাস বাদ দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি ভর্তি হই নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে ঐ একই স্কুল ‘নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়’। নবম শ্রেনিতে পরিক্ষা দিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু দশম শ্রেণিতে আর পড়া হয়নি। বিভিন্ন ঝামেলার কারণে আবার এক বছর গেপ দিয়ে নবম শ্রেণিতে এবার ভর্তি হলাম নতুন এক স্কুলে নাম সম্ভবত ‘বিকে আফতাব উচ্চ বিদ্যালয়’ বিভাগ সেই একই বিজ্ঞান। সেখান থেকে দশম শ্রেণিতে উঠলাম ঠিকই কিন্তুটেস্ট পরিক্ষা আর দেয়া হয়নি।
পড়ালেখা আবার বন্ধ হয়ে যায়, এর পরে পুরোপুরি কর্ম জীবেন প্রবেশ করি। কিভাবে যেন কাজের পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে ফেলি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য কেন জানি মানবিক বিভাগ নিয়ে পড়তে ইচ্ছা করলো, তাই বিভাগ হিসেবে নিলাম মানবিক সঙ্গে চতুর্থ বিষয় নিলাম হিসাব বিজ্ঞান। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য তিনজন মানুষের কাছে চিরকৃতজ্ঞ, কারণ তাঁদের টাকা দিয়েই ভর্তি হই। এই তিনজন হলো রিঙ্কু ভাই (এখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন), হাবিব ভাই এবং আমার অনেক কাছের বন্ধু যাকে সবসময় বিপদে কাছে পেয়েছি বাবু। উন্মুক্ততে পড়ার সময় সবকিছু নিজে নিজেই পড়তাম শুধু হিসাব বিজ্ঞান পরীক্ষার সময় বন্ধু মানিকের কাছে দুইদিন পড়তে গিয়েছিলাম এবং এই দুইদিনের পড়ালেখার জোরেই হিসাব বিজ্ঞানেও পাশ করেছিলাম, মানিকের কাছেও বিভিন্ন কারণে সবসময় ঋণি। এই হলো আমার পড়ালেখার দৌঁড়।
এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে কেন আমি পড়ালেখা করিনি অথবা করতে পারিনি। উত্তরে বলবো, এর অনেক কারণ আছে, এর জন্য দায়ী কিছুটা আমার পরিবার, কিছুটা অর্থনৈতিক, কিছুটা সামাজিক, কিছুটা আমার ভাগ্যের এবং এর দায় কিছুটা আমার নিজেরও। তবে আমি পড়ালেখা করিনি বা পড়ালেখা করতে পারিনি বলে আমার কেন জানি খারাপ লাগে না, অদ্ভূত এক ভাললাগা কাজ করে। একাডেমিক পড়ালেখার উপর কেন জানি এক ধরনের বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছে, হয়তো এই বিতৃষ্ণার কারণে আর ভর্তি হওয়া হয়নি, একাডেমিক পড়ালেখাও আর করা হয়নি। কেন জানি মনে হয়, ভাল একাডেমিক কোন সার্টিফিকেট নেই বলেই আমি হয়তো অনেক ভাল আছি।

একাডেমিক শিক্ষার চেয়ে জীবনের শিক্ষা বেশি কাজের..। দোয়া রইলো।