৭
কুয়াকাটা ভ্রমণে আমাদের কোনো প্ল্যান নেই…
সমুদ্রের জল দেখে দেখে অলস ভাবে গা এলিয়ে সময় কাটিয়ে দেবো…
আর স্থানীয় সিনেমা হলে একটা পুরোপুরি বাণিজ্যিক বাংলা সিনেমা দেখবো…
আপাতত এই চিন্তা নিয়ে আমরা নেমে পরেছি কুয়াকাটায়… তিন ঘণ্টা বাস জার্নি করে…
শরীফ বলেছে সমুদ্রের পাশে বাঁধের এ পাড়ে একটা ছোট্ট একতলা হোটেল আছে…
কিংস হোটেল… সেটা্ই সমুদ্রের সবচেয়ে কাছের হোটেল…
ছাদের উপর বসে সমুদ্র দেখা যাবে… দামেও সস্তা হবে…
হোটেলের কন্ডিশন মোটামুটি…
সেখানেই চললাম আমরা… অল্প খোঁজাখুজিতেই পেয়ে গেলাম হোটেল…
মধ্যবয়স্ক ঠাণ্ডা স্বভাবের মালেক ভাই হোটেলের ম্যানেজার… উনি ঝিনাইদাহের লোক… বহুবছর ধরে আছে এ হোটেলে…
বিনীতভাবে আমাদের জন্য রুমের ব্যবস্থা করে দিলেন…
রুম আমাদের পছন্দ হলো… টয়লেট পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন…
কিন্তু টয়লেটের গেট লাগে না…তাতে কি রুম পছন্দ হইছে…
আর শরীর ভেঙ্গে ঘুম আসছে…আপাতত এক গোসল দিয়ে ঘুম দিতে হবে…
তারপর বাকি সব… মাথার ভেতর কবিতা-গল্প-উপন্যাস কিচ্ছু নেই…
আছে নরম বিছানা আর ঘুম…
তেলতেলে চেহারার হোটেল বয় ইসমাইল বয়স ১২/১৩…
আর বয়সের চেয়ে চেহালায় বড় সোলায়মান ৯/১০…
দুজনের সাথেই পরিচয় হলো… তাদের কথা বলবো পরে…
শরীফ অবশ্য তাদের দুজনকে দেখে মন্তব্য করলো…
এদের দুজনের নামই কিন্তু ভাই পয়গম্বরের নামে খেয়াল করছেন…
আমিও খেয়াল করলাম… আসলেই তাই…
ইসমাইল আর সোলায়মান… বাহ্
কালো বর্ণের মানুষ যেমন সব সময় চকচকে পোষাক পরতে পছন্দ করে তেমনি গরীর মানুষ বড়লোকি নাম রাখতে পছন্দ করে… মানুষের অদ্ভুত স্বভাবের শেষ নাই…
শরীফ একটা সাউন্ডবক্স এনেছে সাথে করে… মেমরী কার্ড দিয়ে গান শোনা যায়…
আপাতত সেটা বাজছে…লালন-আধুনিক-উত্তরাধুনিক-রবীন্দ্র-পল্লীগিতি-ভাটিয়ালি কি গান নেই শরীফের কার্ডে…
একে একে বেজে চলেছে গান… গোসল সেরে ঘুমের আয়োজন করে নিয়েছি…
গান তখনো চলছে…
“সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।
কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।
ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।
যা-কিছু পায় হারায়ে যায়, না মানে সান্ত্বনা।।”
এই গানটা শুনলে কেনো যেনো মনে হয় পবিত্র হয়ে উঠলাম…
কেনো মনে হয় তার ব্যাখ্যা আমি নিজেও জানি না…
বা সেভাবে ভেবে দেখিনি… সময় করে ভাবতে হবে বিষয়টাকে…
প্রিয় গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরবো ভাবছিলাম…
ঠিক তখনি মনে পরে গেলো আমি এখন আছি কুয়াকাটায়…
যেখানে মিলবে রাখাইনদের গরম গরম “মহুয়া”… সেই কবে খেয়েছিলাম… আহ্
সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার বিখ্যাত পালামৌ উপন্যাসের শেষে মহুয়া নিয়ে লিখেছিলেন…
“বিলাতি পদ্ধতি অনুসারে প্রস্তুত করিতে পারিলে মৌয়ার ব্রান্ডি হইতে পারে, কিন্তু অর্থসাপেক্ষ। একজন পাদরি আমাদের দেশী জাম হইতে শ্যামপেন প্রস্তুত করিয়াছিলেন, অর্থাভাবে তিনি তাহা প্রচলিত করিতে পারেন নাই। আমাদের দেশী মদ একবার বিলাতে পাঠাইতে পারিলে জন্ম সার্থক হয়, অনেক অন্তরজ্বালা নিবারণ হয়।”
মহুয়া দিয়ে বিকালে অন্তরজ্বালা নিবারণ করবো সমুদ্র দেখতে দেখতে… এই ভেবে ঘুম দিলাম…
ঘুমাতে ঘুমাতে মাথার ভেতর আরেকটা গান বেজে উঠলো…
“গাছের পাতা টেকা কেনে হয় না…
দাদা গাছের পাতা টেকা কেনে হয় না…
সাগর যদি মদ হতো… হোক না তাতে লোনা…
মাতালে পেট ভরে খেতো পয়সা লাগতো নারে দাদা…
দাদা গাছের পাতা টেকা কেনে হয় না…”
নাহ্ একটা ঘুম দেয়া দরকার… ভ্রমণের এতোটা সময় একফোটা ঘুম দেই নাই… আয় ঘুম আয়…
.
৮
“যেতে পারি
যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি… কিন্তু, কেন যাবো?”
আমার অবস্থা এখন তেমনি… মাথার উপর আদিগন্ত আকাশ… পায়ের তলায় বালি… চোখের সামনে কেবল লোনা জল… সমুদ্রের জল… ছোট ছোট ঢেউ… তরুণ-তরুণীর উত্তাল হুড়োহুড়ি…
মাতালের চিৎকার… গুড়াগাড়ার চিংড়ি বা কাঁকড়া ভাজা বলে ডাকাডাকি…
তবে আরাম কেদারায় শুয়ে সবকিছু ছাপিয়ে একটাই কথা মনে আসলো…
যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি কিন্তু, কেন যাবো?
আসলেই তো কেনো যাবো? কার মাথার দিব্বি খেয়েছি যে আমাকে যেতেই হবে কোথাও…
আজ আর কোথাও যাবো না… আমার পৃথিবী এখন এখানে এসেই থেমে গেছে…
ভাবছেন মহুয়া কাজ করতে শুরু করেছে? না তেমন কিছু নয়… সমুদ্র বড়ই আজব জিনিস মাইরি… সে নিজেই মাতিয়ে মাতাল করে তোলে… তার উপর পূর্ণিমার চাঁদের ভয়াবহ বারাবারিতে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ রূপে… চাঁদ নিয়ে এতো কবিতা-গান-গল্প তো এমনি এমনি লেখা হয়নি… ব্যাটা আসলেই ভয়াভব জিনিস… একবার যে চাঁদ বা চাঁদের আলোর প্রেমে পরেছে তার জীবন ঝালাপালা… স্বয়ং সিদ্ধার্থ টিকতে না পেরে ঘর ছেড়ে হয়েছিল গৌতম… আর আমি ব্যাটা কোন ছাড়…
ফাটাফাটি একটা ঘুম দিয়ে দিন পার করে দিয়েছি আমরা… এখন সমুদ্র তীরে ভয়াবহ মজাদার নারিকেলের পানি খেয়ে আরামে আরাম নিচ্ছি… দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যা আসছে… সন্ধ্যার পর রাত… তাতে কি রাতের পর দিন আসুক… তবে একটাই সমস্যা জোয়ার তীব্র হচ্ছে… পায়ের তলার বালি লোনা জল টেনে নিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত…
মুসা এসে একবার জায়গা বদল করে দিয়েছে… তাও পানি চলে আসছে কাছে থেকে কাছে… ও মুসার কথা তো বলিনি… আরাম কেদারায় শোয়ামাত্র হার জিরজিরে ৭/৮ বছরের বালক এসে উপস্থিত… টেকা দেন… কিসের টেকা? চেয়ারে শুইছেন টেকা দেন… ঘণ্টায় ৩০ টেকা…
এতো টেকা পামু কই… একটু কম নে? কম হইবো না ত্রিশ কেটা দেন… তোমার নাম কি? মুসা… তো মুসা একটু কম সম নেও এতো টেকা পামু কই… মুসা সাথে আলাপ জমলো না… সে বেশি কথা বলতে নারাজ… কপাল কুচকে চলে গেলো… কিছু সময় পর বিশাল দেহি এক লোককে নিয়ে এলো.. সে এসে মাস্তানের মতো বললেো টেকা দেন…
আমরা আবার বল্লাম এতো টেকা পামু কই… ঘণ্টায় ত্রিশ টেকা দেওন লাগবো… বললাম এতো টেকা নাই… দুই ঘণ্টায় ৪০ টেকা দিমু… ভদ্রলোক বেশ কিছু সময় গাইগুই করে চল্লিশ টেকা নিয়া ফিরা গেলো… আসলে ভদ্রলোকের সাথে আলাপ জমাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা ব্যস্ত আলাপে সময় নাই… তারাও হয়তো ভাবছে… আলাপ করতেই পারি কিন্তু কেনো আলাপ করবো?
সংজ্ঞামতে বলে পর্যটকের চোখে প্রকৃত সত্য ধরা পরে না… তারা চা দেখতে পায় না… চায়ের উপরের মালাই দেখে… আমরাও হয়তো তাই… আমরা মুসার বেরসিকতা দেখছি কিন্তু তার ভেতরের মুসাকে আবিস্কার করতে পারি নি… এই টুকু বয়সে সে কাজ করছে… ফেসবুকে আমরা শিশু দিবসে শিশুশ্রম নিয়ে কতো স্ট্যাটাস দেই কিন্তু সত্য সত্য কি তাদের পাশে দাঁড়াই কখনো?? ইচ্ছে থাকলেও কি তাদের কাঁধে হাত রেখে বলতে পারি.. “একদিন আমরাও”…
থাক বাবা আমাদের আর আবিস্কার করে কাজ নেই… নোবেল পুরুস্কার তো আর পামু না কষ্ট কইরা লাভ কি… পুরস্কার না পাইলে… নিদেন পক্ষে এনজিও খুলতে না পারলে কি আর এ সমাজে সমাজ সেবা করে…
তারচেয়ে সমুদ্র দর্শনে মনোযোগী হই… মহুয়াটা দুরুণ… হোটেল বয় ইসমাইল ভালোই ব্যবস্থা করছে… গুড… চুক চুক করে মহুয়ার চুমুক আর চিক চিক বালির ঝিকমিকি… শরীফ উদাস হয়ে বাংলা ছবির গান গুন গুন করছে…
মাছ ধরায় অবরোধ চলছে… তাই সমুদ্রে দূর-দূরান্তে কোথাও মাছ ধরার নৌকা দেখা যাচ্ছে… ছোট ছোট ঢেউয়ের ঝিলিকে চাঁদের আলো ফিক ফিক করে বলছে…
“চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে, উছলে পড়ে আলো ।
ও রজনীগন্ধা, তোমার গন্ধসুধা ঢালো ।।
পাগল হাওয়া বুঝতে নারে ডাক পড়েছে কোথায় তারে-
ফুলের বনে যার পাশে যায় তারে লাগে ভালো ।।
নীল গগনের ললাটখানি চন্দনে আজ মাখা,
বাণীবনের হংসমিথুন মেলেছে আজ পাখা ।
পারিজাতের কেশর নিয়ে ধরায়, শশী, ছড়াও কী এ ।
ইন্দ্রপুরীর কোন্ রমণী বাসরপ্রদীপ জ্বালো ।।”
আরেকটু খিদে লাগলে খেপুপাড়া হোটেল’টা খুজতে যাবো… শরীফ বলেছে সেটার রান্না নাকি দারুণ… আপাতত চাঁদ দেখি… উথাল-পাথাল করে উছলে আসা স্মৃতিকে ভেবে ভেবে আলোড়িত হই… সাঁইজি রক্ষা কর… এমন চাঁদের আলোয় তো সব ধ্বংস হয়ে যাবে… মুখোশ ভেঙে ভেতরের সত্য বেড়িয়ে পরবে… এ সমাজ কি সত্য মানুষকে মেনে নিতে পারবে??? রক্ষা করো সাঁইজি এমন চাঁদের আলো থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করো…
.
৯
কাঁকড়া ভাজাটা দাঁরুণ হয়েছে… মুচমুচে… কুরকুরে… এক কথায় অস্বাধারণ…
বাটামাছ ভাজা হচ্ছে তা হলেই গরম গরম ভাত খাবো… লেবুর বনে সৈকতের উপর ঝাপড়া হোটেলগুলোর একটিতে এখন আমরা বসে কাঁকড়া চিবাচ্ছি…
আজ বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে বীচ ধরে হাঁটতে শুরু করেছিলাম…
বীচের পশ্চিম দিকে লেবু বনের উদ্দেশ্যে…
আজ সারাটা দিন হেঁটে হেঁটে ঘুঁড়বো এই ছিল প্ল্যান…
তীব্র রোদে ঝলসে যাওয়া সভ্যতায় হাঁটছি তো হাঁটছি…
হাঁটতে অবশ্য বেশ লাগছে…
পাশ দিয়ে সাই সাই করে মোটর সাইকেল যাত্রী নিয়ে চলে যাচ্ছে…
দু-একজন জানতে চাইলো গাড়ি লাগবে কিনা…
আমাদের উৎসাহ না দেখে তারা অবশ্য বেশ অবাক হলো…
যাক সে কথা… আগেই বলেছি সমুদ্রে মাছ ধরার অবরোধ চলছে…
তাই নি:স্প্রাণ সৈকত… জেলেদের দেখা মিলছে না কোথাও…
স্বাভাবিক সময়ে এখানে ব্যস্ত জেলেদের দেখা মেলে…
হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম জেলেপাড়ায়…
কোথাও কেউ নেই… দূরে ছোট্ট একখানা দোকান পেয়ে গেলাম…
টং দোকান পাওয়া যাবে আর বাঙালী এক পাত্র চা পান করবে না তাই কি হয়…
আমরাও চললাম দোকানে উদ্দেশ্যে মাথার ভেতর ভাজতে ভাজতে…
“এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই
ডাইনে ও বাঁয়ে আমি তোমাকে চাই
দেখা না দেখায় আমি তোমাকে চাই
না-বলা কথায় আমি তোমাকে চাই”
টং দোকানে দোকানি ছাড়াও আর দুজনকে পেলাম সেখানে…
অবরোধের জন্য অলস দিন কাটাচ্ছে… তাদের কাছ থেকেই জানতে পারলাম… বেশ জোড়েসোরেই চলছে অবরোধ… তবে যাদের রাজনৈতিক শক্তি আছে তারা রাতে ঠিকই মাছ ধরতে সাগরে নৌকা ভাসাচ্ছে…
সে সব মাছ কিনেও নিচ্ছে প্রভাবশালীরা তাদের পর্যটক আত্মীয়স্বজনদের জন্য…
জেলেদের অনেকের বাড়িতেই এখন শুধু ভাত চলছে… অবশ্য অভ্যাসবশত শাক-সবজি তারা মুখে তুলতে পারে না মাছ ছাড়া… হার জিরজিরে পাকানো পেশীর অল্প বয়সী জেলেদের দেখে কুবের মাঝির কথা মনে পড়ে গেলো…
জল-চা-বিস্কুট খেয়ে আমরা আবার বেড়িয়ে পরলাম… চকচক করছে সমুদ্রের জল… ভেজা বালির তার মাধুর্য্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে… কুয়াকাটা বীচের প্রাণ তীর ধরে থাকা নারিকেল আর খেজুর গাছের সংখ্যা এখন খুবই কম… তবে এ পাশে তাদের কিছু কিছু দেখা পাওয়া গেলো…
হাঁটতে হাঁটতে ঘণ্টাখানেক পর চলে এলাম লেবুর বন…
এখানে বেশকিছু দোকান উন্মুক্ত দোকান ঘর আছে… সামনে কাঁচা মাছ আর কাঁকড়ার পসরা…
পর্যটকরা মাছ পছন্দ করলে তা রান্না করে দেয়া হয়…
গরম গরম খাওয়া… ততক্ষণে খিদেটাও বেদম লেগেছে… গোটা দুয়েক ডাব হলে ভালো হতো… কিন্তু এখানে ডাব পেলাম না… এখানে আমরা আবিস্কার করলাম দূরন্ত-চতুর-কঠিন ব্যবসায়ী ১০/১১ বছরের দোকানী… মোটাসোটা আক্রামকে…
এই বয়সে সে যতটা চতুর ব্যবসায়ী তাতে সে যে কোনো মানুষকে ঘোল খাইয়ে দিতে পারবে… গতরাতে ইলিশ ভাজা দিয়ে জমিয়ে খেয়েছি তাই আজ পছন্দ করলাম বাটা মাছ আর কাঁকড়া… আক্রাম মাছ নিয়ে চলে গেলো রান্না করতে আমরা বসে বসে অপেক্ষার প্রহর গুণতে শুরু করলাম…
পাশের টেবিলে আরেক দল যুবক বসেছে… তারা ঢাকা থেকে বাইক নিয়ে এসেছে… সকলেই ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা… বায়িং হাউজে চাকরি করে… তারা বেশ উৎসুখ হয়ে আমাদের সাথে আলাপ জমালো… তবে পেটে খিদে নিয়ে আলাপ বেশি জমলো না… তারা নিজেদের মধ্যে আলাপে ব্যস্ত হয়ে উঠলো… তাদের আলাপের মূল বক্তব্য হলো পরকিয়া করে আজ পর্যন্ত কে কতজনের ঘর ভেঙেছে… যে সেঞ্চুরি করেছে তাকে তারা বস বলে ডাকছে… তাদের আলাপ শুনতে শুনতে খুব ঘেন্না লাগতে শুরু করলো… বমি বমি পেলো… রান্নারও খবর নেই… তারচেয়ে বীচের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম… সেখানে ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা কাঁকড়া ধরছে ফাঁদ পেতে… তারা বেশ মজা করে কাজটা করছে… তাদের দেখতে লাগলাম… তাদের ভাষা ঠিক বুঝতে পারলাম না… কথা জমলো না… তবে তাদের দূরন্তপানা শৈশবে নিয়ে গেলো…
সমুদ্রের একপাশে চিকন একটা সবুজ রেখা দেখা যাচ্ছে… ওখান থেকেই সুন্দরবনের শুরু… ট্রলার দিয়ে সেখানে যাওয়া যায়… এখন ভাটা চাইলে যাওয়া যায়… সমুদ্রও শান্ত… তবে শরীফ খুব একটা উৎসাহ দেখালো না… খেয়ে দেয়ে আমরা আরো পশ্চিমে যাবো… যেতেই থাকবো সূর্য ডোবা পর্যন্ত… তারপর ফিরবো… এখানে সৈকতটা সত্যই অস্বাধারণ… কুয়াকাটার মূল সৈকত থেকে এখানটা বেশ শান্ত… গলায় সুর থাকলে চিৎকার করে গাইতাম…
“ওরে নীল দরিয়া
আমায় দেরে দে ছাড়িয়া।
বন্দী হইয়া মনোয়া পাখি, হায়রে
কান্দে রইয়া রইয়া।
কাছের মানুষ দুরে থুইয়া,
মরি আমি ধড়-ফড়াইয়া,রে।
দারুন জ্বালা দিবানিশি।।
অন্তরে অন্তরে।“
কুয়াকাটা ভ্রমণ বৃত্তান্ত (৪)–মূর্শেদূল কাইয়ুম মেরাজ