ফেসবুকে এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল। তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘ম্যাডাম কেমন আছেন?’ উত্তরে বললেন, ‘ভালো আছি।’ সঙ্গে একটি প্রতিবাদও করলেন, ‘আপনি আর কখনো আমাকে ম্যাডাম বলবেন না।’ প্রশ্ন করলাম, ‘কেন?’ উত্তরে, ‘ম্যাডাম শুনতে ভালো লাগে না। আপনি আমায় নাম ধরে ডাকবেন কারণ বাবা মা আমার নাম রেখেছেন আপনে আমাকে সেই নামে ডাকবেন।’ কিছুদিন আগে নূরুল আনোয়ারের ছফামৃত নামক বইয়ে পড়েছিলাম, আহমদ ছফার সঙ্গে সাপ্তাহিক পূর্বদেশ পত্রিকার সম্পাদক জনাব কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস সাহেবের সঙ্গে নাম নিয়ে ঝগড়া লেগে গিয়েছিল, যদিও সেটা ছিল নামের বানান নিয়ে। লেখাটা ছিল এমন–
‘সাপ্তাহিক পূর্বদেশ’-এর সম্পাদক ছিলেন কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস। ইদ্রিস সাহেব তাঁর পত্রিকায় ছফা কাকার একটি কবিতা ছেপেছিলেন। সেখানে তিনি তাঁর নামে ‘ছফা’র জায়গায় ‘সফা’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ইদ্রিস সাহেবের কাছে মনে হয়েছে ‘সফা’ শব্দটিই সঠিক। ছফা কাকা ইদ্রিস সাহেবের এ কর্মকে বাড়াবাড়ি বলে ধরে নিয়েছিলেন এবং তিনি তার প্রতিবাদও করেছিলেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। শুনতে পাই ঘটনাটি লোকমুখে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। লেখক আবু কায়সার বয়ান করেছেন:
এটা আপনি করেছেন?
চমকে উঠে সামনে তাকান প্রবীণ সাহিত্যিক। তাঁর মুখের দিকে একজোড়া আগ্নেয় চোখ মেলে দাঁড়িয়ে আছে চিকন চেহারার এক রাগী তরুণ। ডান হাতের মুঠোয় ভাঁজ করা পত্রিকাটি দুলিয়ে দুলিয়ে সে জানতে চাইল, কার কথা মত তার নামের বানান পাল্টে ফেলা হয়েছে।
– আপনার… মানে তোমার পরিচয়টা – ভদ্রলোক বিব্রতভাবে জিজ্ঞেস করেন উত্তেজিত আগন্তুককে।
– আমার নাম আহমদ ছফা। তরুণের ত্বরিত জবাব।
সে আর কিছু বলার আগেই ‘সাপ্তাহিক পূর্বদেশে’র সাহিত্য-সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস পুরো ব্যাপারটা বুঝে ফেলেছেন। শশব্যস্তে তিনি বললেন, আরে তুমিই আহমদ সফা? আজকে সাহিত্য পাতায় তো তোমার কবিতাটি ছাপা হয়েছে। আর আমি নামের ভুল বানানটি শুধরে দিয়েছি। ছফা আবার কী। সফাই তো সঠিক! তাতে এমন খেপে যাবার কী আছে, বল তো! বস, চা খাও।
আহমদ ছফা দাঁড়িয়ে রইলেন। আবারও বসতে বলায় বললেন, বসতে পারি এবং চা-ও খেতে পারি। তবে একটা শর্ত আছে। কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস এবার বিরক্ত হলেন। বিস্মিতও। তাঁর সামনে উদ্ধত ভাষায় কেউ কথা বলতে পারে, তা তিনি তো বটেই; যে কারও জন্যে ছিল অভাবনীয় ব্যাপার। তবু তিনি জানতে চাইলেন, শর্তটা কী?
এ ব্যাপারে একটি সংশোধনী ছাপতে হবে। এবার ধৈর্যচ্যুতি ঘটলো কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিসের। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করলেন এবং টেবিলে ঘাড় গুঁজে লেখাপত্র এডিট করতে শুরু করলেন। কিন্তু নিপাট এ ভাল মানুষটির কপালে দুর্ভোগ ছিল। আহমদ ছফা বললেন, ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি। তবে মনে রাখবেন, যে ছেলের নামকরণ উপলক্ষে সাতটা গরু জবাই করে লোকজনকে খাওয়ানো হয়েছিল, কলমের এক খোঁচায় তার নাম পাল্টে ফেলা যায় না। কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে মুঠোয় ধরা ‘পূর্বদেশ’টা কুটি কুটি করে ছিঁড়ে মেঝের ওপর ছুঁড়ে ফেললেন আহমদ ছফা। (ছফা. স্মা., পৃ. ৪৭)
তার কথায় বেশ ভাল লাগলো নিজের নাম নিয়ে প্রতিবাদ করায়। আমি তাঁর কথার প্রেক্ষিতে বললাম, ‘আপনার কথায় যুক্তি আছে, ছফা ছফা ভাব আছে।’ এই কথা শুনে আমাকে আবার সেই পুরনো প্রশ্ন শুনতে হলো, ‘ছফা কে?’ আমি তাঁকে একটা লিঙ্ক পাঠালাম। ছফা বিষয়ক লিঙ্ক, লিঙ্কটা পাওয়ার পর তিনি বললেন, ভাই আপনে এতো লিঙ্ক দেন কেন? তাও আবার বাংলা লেখার। আমার প্রশ্ন ‘কেন? বাংলা লেখা হলে সমস্যা কি?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘বাংলা পড়তে আমার পেইন লাগে।’ শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। বাংলা পড়তে পেইন লাগে! বাঙ্গালি হয়ে বাংলা পড়তে পেইন লাগে!

যাদের বাংলা পড়তে ব্যাথা লাগে তাদের নিস্চয় লিখতেও অনেক ব্যাথা লাগে 🙂
তাদের ব্যাথা একটু হলেও কমিয়ে দেয়ার জন্য বাংলায় কমেন্টের ব্যাবস্থা করে দিলাম। বিজয় দেয়া সম্ভব না কারন আন্কেল আবার মাইন্ড করবেন।
🙂