৬৪ জেলায় যা দেখেছি–১৪

১৪ মার্চ (জামালপুর থেকে শেরপুর হয়ে গাইবান্ধা)

সকালে রওনা দিলাম সাড়ে সাতটার দিকে। গতকালকেই ঠিক করে রেখেছিলাম একটু সকাল সকাল রওনা দেব। কারণ আজকে কত কিলোমিটার চালাতে হবে জানি না। রাস্তাও তেমন চিনি না, মানচিত্র দেখে যতটুকু বুঝলাম গ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। হোটেল থেকে বের হয়ে অবাক হয়ে গেলাম। এই মার্চের মাঝামাঝিতেও অন্ধকার, মানে কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

প্রথমেই পরলো ভ্রহ্মপুত্র নদীর একটি সেতু যদিও নদীতে তেমন পানি নেই, হাঁটু পানির মত হবে। এই কয়দিনে বেশকয়েকটি নদী দেখেছি, নদীর নামও আছে কিন্তু পানি নেই। এক সময় নিশ্চয়ই পানি ছিল এবং বর্ষায় এখনও পানি থাকে। সেতু পার হওয়ার পরেই ঢুকলাম শেরপুর জেলায়। শহর আরো দশ/বার কিলোমিটার বাকি। নন্দী বাজার, কুসুমহাটী বাজার পার হয়ে শেরপুর শহরে পৌঁছালাম।

37446_1476418520334_7881541_n
শহরটা একটু দেখার জন্য এলোমেলো ভাবে সাইকেল চালালাম। শেরপুর সরকারী (বিশ্ববিদ্যাল) কলেজের সামনে দাড়িয়ে একটা ছবি তুললাম। কলেজের আগে ব্যাকেটে কেন যে বিশ্ববিদ্যালয় লিখে ঠিক বোধগম্য হল না। হয়তো ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় হবে সেই কারণে আগে থেকেই নামটা দেয়া। আরো কিছুক্ষণ এলোমেলো ঘোরাফেরা করলাম। খড়ার পার হয়ে জেলা কারাগার দিয়ে বকশীগঞ্জের দিকে রওনা দিলাম।

আমাকে যেতে হবে সানন্দা বাড়ি। দূরত্ব প্রায় পঁচিশ কিলোমিটারের মত। একটু টেনশনে ছিলাম। কারণ লোকজন বলছিল ঘাট থেকে নৌকা ছাড়ে তিনটার দিকে এর মধ্যে না পৌঁছাতে পারলে বিপদে পড়তে হবে। সানন্দা বাড়ি ঘাটে থাকার জায়গা আছে কিনা জানি না।

তারাটিয়া বাজার পার হওয়ার সময় উল্টা দিক থেকে আসা একদল শিক্ষার্থী আমাকে হাতের ইশারায় থামালেন। কথা বলে জানতে পারলাম তাঁরা এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফিরছেন। আমাকে থামিয়েছেন আমার সঙ্গে ছবি তোলার জন্য। তাঁরা আমাকে দেখেই বুঝতে পেরেছেন আমি দেশ ভ্রমণে বের হয়েছি। তাঁদের সঙ্গে ছবি তুলে গল্প করে আবার রওনা দিলাম। ভ্রমণে বের হওয়ার পর দিনদুনিয়ার তেমন কোন খোঁজ খবরই আমার ছিল না। এঁদের না দেখলে বুঝতে পারতাম না এখন পরীক্ষা চলছে।

34859_1476831330654_1003463_n
সানন্দাবাড়ি ঘাটের কাছাকাছি এসে একটা জায়গায় খেয়াপার হতে হল। আমার চোখে খেয়া মনে হলেও স্থানীয় লোকজন এটা ফেরী বলছিল। দুইটা নৌকা একসঙ্গে বেঁধে পাটাতন বানানো হয়েছে বাঁশ দিয়ে। এটা দিয়েই সাইকেল, মোটরসাইকেল এমনকি রিক্সাও পারাপার করা হয়। খেয়াপার হয়ে কিছুদূর সাইকেল চালিয়ে সানন্দাবাড়ি ঘাটে পৌঁছালাম। সেখান থেকে লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারলাম নৌকা ছাড়ে চারটার সময় এবং সেটা সানন্দাবাড়ি ঘাট থেকে না, ছাড়ে মোল্লারচর ঘাট থেকে। মোল্লারচর ঘাট বেশি দূরে নয় ৪/৫ কিলোমিটার। ঘাটে পৌঁছে জানতে পারলাম যদি লোকজন হয় তবে নৌকা ছাড়বে। এর আগে একজন বসে ছিল আমি সহ মাত্র দুইজন যাত্রী।

36204_1478538373329_4131972_n

অপেক্ষা করতে থাকলাম চারটা বাজার জন্য। ঘড়িতে যখন চারটা বাজল তখন আমরা যাত্রী হয়ে মোট পাঁচজন। অল্প লোক হওয়ার কারণে মাঝি আমাদের কাছে দ্বিগুণ ভাড়া চাইল। মাঝি আমাদের শর্ত দিল দুইটা হয় দশজন যাত্রী হতে হবে অথবা যতজনই হোক না কেন অন্তত দশজনের ভাড়া দিতে হবে। তা নাহলে মাঝির তেল খরচ দিয়ে পোষাবে না। আমরা যে পাঁচজন ছিলাম সবারই জরুরি ভিত্তিতে গাইবান্ধা যেতে হবে। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের মাঝির কথামত দ্বিগুণ ভাড়া গুনে নৌকায় উঠতে হল।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর নৌকা গাইবান্ধার বালাসীঘাটে আমাদের নামিয়ে দিল। পথে শেষ বিকেলে অল্প কিছু নৌকা চোখে পড়েছে বেশিরভাগই মাছ ধরার নৌকা। নদীতে পানি কম তাই মাছও কম জেলেও কম। সবাই অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে জানা গেল বর্ষার সময় কিছু মাছ পাওয়া যায়। বালাসীঘাটে যখন নামলাম তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। বালাসীঘাট থেকে গাইবান্ধা শহর আরো প্রায় ৮/১০ কিলোমিটার। ব্যাগ থেকে টর্চ লাইট বের করে জ্বালিয়ে রওনা দিলাম। একহাতে লাইট অন্য হাতে সাইকেলের হ্যান্ডেল। এভাবেই চালিয়ে পৌঁছালাম গাইবান্ধা শহরে। শহরে পৌঁছে ফোন দিলাম মমিন ভাইকে। আমার রাতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে মমিন ভাইয়ের সঙ্গে। মমিন ভাই এলজিইডিতে চাকরী করেন।

মমিন ভাইয়ের সঙ্গে অনেক গল্প হলো। মানচিত্র নিয়ে কথা হলো বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের রাস্তা এবং কিছু শর্টকাট রাস্তা নিয়ে কথা বললাম। খাওয়া-দাওয়ার পর ঘুমোতে গেলাম নতুন সকালের আশায়।

Comments

comments

Comments

  1. কোরেশী

    মমিন এখন আছে বগুড়ার কাহালু উপজেলাতে। পরিবার নিয়ে বসবাস করছে বগুড়াতেই। তোমার কথা মাঝে মাঝে জানতে চাই।

    1. সাইকেল ভ্রমণের লেখাগুলা যদি শেষ করে বই বের করতে পারি ইনশাল্লাহ যাব আবার। সবার সঙ্গে একবার দেখা করে আসব। সবার কাছেই আমার অনেক ঋণ আছে।

  2. বালাসী ঘাট বারাসি নয়

    1. এটা কম্পোজ মিস্টেক। আপনাকে ধন্যবাদ ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য। 🙂

Leave a Reply to Md Shariful Islam Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.