৬৪ জেলায় যা দেখেছি-৪

DSC00112৪ মার্চ (কিশোরগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

আজকের যাত্রা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। শহর থেকে বের হয়ে কিভাবে যেতে হবে জেনে নিলাম স্থানীয় এক ছেলের কাছ থেকে। তাঁর নাম সানী। সে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। শহর থেকে বের হয়ে যখন হাইওয়েতে উঠব ঠিক তার আগের মুহূর্তে একজন লোক আমার সঙ্গে সাইকেল চালাতে চালাতে কথা বলতে শুরু করলেন। কথাবার্তা বলে জানতে পারলাম তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাঁর নাম মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। প্রায় ৫ কিলোমিটারের মত তিনি আমার সঙ্গী ছিলেন। তিনি আমার ফোন নাম্বার নিলেন এবং তাঁর নাম্বারটিও আমাকে দিলেন। পরে আমার ভ্রমণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকদিন আমাকে ফোন করেছিলেন এবং পত্রিকায় আমার ভ্রমণ শেষের ছবি দেখে আমাকে অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন।

কাউতুলি হয়ে পিরিজপুর নামক একটি জায়গায় রুটি আর ভাজি দিয়ে এসে দুপুরের খাওয়া শেষ করলাম। খাওয়া শেষ করে আবার পথ চলা।

30513_1449730053139_5570307_nভৈরব সেতুতে আসার পর, সেতুর এক নিরাপত্তাকর্মী আমাকে আটকে দিলেন। তিনি জানালেন, এই সেতু দিয়ে সাইকেল চালানোর অনুমতি নেই। তবে আমি যদি থানা থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে পারি তাহলে তারা আমাকে ছেড়ে দিবেন। তাই বাধ্য হয়ে থানার পথ ধরতে হল।

থানায় গিয়ে খুঁজে বের করলাম থানা দায়িত্বে থাকা ডিউটি অফিসারকে। নেমপ্লেট দেখে বুঝতের পারলাম অফিসারের নাম দুলাল। তাঁকে সব খুলে বলার পর ভালই সহযোগীতা করলেন। তিনি আমার ডাইরিতেই সেতু পারাপারের জন্য সুপারিশপত্র লিখে দিলেন।

সুপারিশ দেখে তো নিরাপত্তারকর্মী হতবাক! তিনি ভেবেছিলেন থানা থেকে আমি অনুমতি পাব না। আমার সুপারিশপত্রে তিনি কিছুটা বিপদেই পড়ে গেলেন–কারণ তিনি সেতুর দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞেস না করেই আমাকে বলে দিয়েছেন থানা থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন সেতুর দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। তিনি ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে বললেন, আমি ভ্রমণে বের হয়েছি, সেতু পার হতে চাই সাইকেল যোগে এবং আমি থানা থেকে অনুমতিও নিয়ে এসেছি। সবকিছু শুনে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব সেতু পার হওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন। আমি মনের আনন্দে ভৈরব সেতু সাইকেল চালিয়েই পার হয়ে গেলাম।

30513_1449448686105_2728675_nসেতু পার হয়ে চলে গেলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে পৌঁছে ডিসি সাহেবের বাসভবনে গেলাম তাঁর সাথে দেখা করতে। বাসভবনে যাওয়ার কারণ ঘড়িতে পাঁচটা বেজে গেছে–অফিসে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যাবে না। তাঁকে বাসায়ও পাওয়া গেল না। তবে তাঁর বাসায় আমার মোবাইল নাম্বার দিয়ে চলে গেলাম রাতে থাকার ব্যবস্থার জন্য। প্রথমে চলে গেলাম এলজিইডির অফিসে কোরাইসি ভাইয়ের কথামত। তিনি সেখানে আমার থাকার ব্যবস্থার জন্য বলে রেখেছিলেন। সেখানকার ইঞ্জিনিয়ার জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।

জেলাপরিষদের ডাকবাংলোটি অসাধারণ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পুরটাই টাইলস্, রুমগুলোও বিশাল। সাধারণত সরকারী ডাকবাংলো কিছুটা নোংড়া হয়ে থাকে, তবে রুম সবসময়ই বড় থাকে। ডাকবাংলোতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বের হলাম শহর দেখার জন্য। শহরে চোখে পড়ল ক্যাপ্টিস্ট চার্চ, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ঘুরেফিরে দেখলাম গীর্জাটি। তারপর জয়কালী মন্দির নামে একটি মন্দির। মন্দিরে তখন কীর্তন চলছিল। কিছুক্ষণ কীর্তন শুনলাম, ছবি তুললাম। আর টিএন্ডটি রোডে পেলাম দুটি বাহারি পানের দোকান। পান না খেলেও অনেক কম দামে ডাব খেলাম রেইলগেটের কাছে। দাম মাত্র দশ টাকা।

এভাবে কিছুক্ষণ ঘুরাফেরা করে আবার গেলাম জেলা প্রশাসকের বাসভবনে। যদি ডাইরিতে কিছু লিখে নেওয়া যায় সেই আশায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে হতাশ হতে হল। তাঁর সহকারী বলে দিলেন তিনি ছুটির দিনে কোন কাজ করেন না। আমার যদি কিছু লিখে নিতে হয় তো রবিবারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

আজ শুক্রবার, রবিবার মানে আরো দুইদিন। সিদ্ধান্ত নিলাম, পরদিন সকালে পরবর্তী জেলার উদ্দেশে রওনা হয়ে যাব। আমার পক্ষে দুইদিন থাকা সম্ভব না। দুইদিন থাকা মানে অতিরিক্ত দুইটি দিন শুধু শুধু নষ্ট হবে একটি কাগজের জন্য আর পকেট থেকে কিছু টাকাও খরচ হয়ে যাবে। আমার পক্ষে এই দুটোই অপচয় করা কঠিন।

৬৪ জেলায় যা দেখেছি-৩

Comments

comments

Comments

  1. ট্রাভেলর হেমায়েত উল্লাহ নুর

    সরিফুল ভাই , আপনার প্রতি রইল আমার অন্তর থেকে প্রান ঢালা অভিনন্দন । এগিইয়ে জান সামনে, পথে নামলে পথ-ই পথ দেখায় । জীবন মানে সংরাম,আর এই সংরাম সরবো প্রথম নিজের সাথে করতে হয় । জা আপনি করে দেখিয়েছেন ।

    আল্লাহ আপনার পথ চলাকে সুখময় করুক
    ট্রাভেলর হেমায়েত উল্লাহ নুর।
    বরিশাল।

    1. হেমায়েত উল্লাহ নুর ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

      আল্লাহ আপনার স্বপ্ন পূরণ করুক।

      শুভ কামপনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.