সম্ভবত ২০০৫/০৬ সালের ঘটনা কাজ করি ‘এশীয় শিল্প ও সংস্কৃতি সভা’য়। বেতন ১২০০/- টাকার মতো, একমাস পর সেই বেতন বেড়ে হয়ে গেল ১৫০০/-, আরও ৩ মাস পর হয়ে গেল ১৮০০/-। মোটামুটি স্বচ্ছল ভাবেই চলতে পারি। ‘এশীয় শিল্প ও সংস্কৃতি সভা’কে সবাই সংক্ষেপে কাক বলে। কাক বলার কারণ হলো ইংরেজিতে Centre for Asian Arts And Cultures সংক্ষেপে CAAC। সেখানে পরিচয় হলো রাসেল ভাইয়ের সঙ্গে, রাসেল ভাই তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অনার্সে পড়তেছেন, বিভিন্ন জায়গায় কোর্স করে বেড়াচ্ছেন। আর কাকে এসে ভলেন্টিয়ার হিসাবে কাজ করেন অবস্য কাকে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা মোটামুটি সবাই ভলেন্টিয়ার হিসাবেই কাজ করে। আমার মত দুই একজন ছাড়া। আমার কাজ হলো দিনের বেলা ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, পত্রিকা পড়া আর অফিসের টুকটাক ছোটখাট কাজ করে দেওয়া। আর রাতের বেলা আমার তৈরি করা কম্পিউটারের পাওয়ার সাপ্লাই, সিডি রোম আর স্পিকার দিয়ে গান শোনা। আর রাসেল ভাইয়ের কাছ থেকে মাঝে মাঝে কম্পিউটারের অ আ ক খ শিখি, সেটা রাতে প্রেক্টিস করি। সেই অর্থে রাসেল ভাই আমার কম্পিউটারের গুরু বলা যায়।
মাঝে মাঝে কনসার্টে যাই গান শুনতে, যেই কনসার্টে ১০০/১৫০ টাকা টিকেট সেই সব কনসার্টে এর বেশি টিকেট দিয়ে গান শোনার মতো অবস্থা হয় নাই। সংগ্রহে প্রায় শ খানেক সিডি ছিল, প্রতি মাসেই গানের সিডি কিনতাম। আর বই পড়তাম বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে ধার এনে, এই ধারের জন্য অবশ্য মাসে মাসে দশ টাকা দিতে হতো। বই পড়া আর গান শোনা ছাড়া আর কোন নেশা ছিলো না, এখন আরো দুইটা নেশা যুক্ত হইছে, মুভি দেখা আর সাইকেল চালানো। ২০০৭ কি ২০০৮ সালে এক কনসার্টে গেলাম নেংটা কালের বন্ধু বাবুকে নিয়ে। গুলশান ওয়ান্ডার ল্যান্ডের পেছনে সম্ভবত ইয়ুথ ক্লাবের মাঠ হবে। গান শুনছি, সন্ধ্যার দিকে এক ব্যান্ড স্টেজে উঠলো নাম ‘মেঘদল’ আমার সংগ্রহে এই ব্যান্ডের সিডিও আছে, ‘আকাশ মেঘে ঢাকা’ নামে একটা গান আমার খুব প্রিয়। তাঁরা কয়েকটি গান গাওয়ার পর শেষ গান গাইবেন, প্রথমেই ভোকাল একটি শঙ্খতে একটি ফু দিলেন তারপর শুরু করলেন। গানেট টাইটেল ছিল ওঁম, এরই মধ্যে মাঠের সবাই চিৎকার চেচামিচি শুরু করে দিলেন। কেউ কেউ পানির বোতল ছুড়ে মারলেন, কয়েকজন আবার জুতা তুলে দেখাতে শুরু করলেন সাহসের অভাবে জুতা ছুড়ে মারতে পারলেন না, গুলশানের পোলাপাইনের মনে হয় সাহস একটু কম হয় অথবা জুতার প্রতি তাদের দরদ একটু বেশি। এক সময় গান শেষ হলো। পোলাপাইনে চিৎকার চেচামেচি তখনো শেষ হয় নাই। গানটা তিনি শান্তির জন্য গেয়েছিলেন, কিন্তু শান্তির গান মাঠের দুই একজন মানুষকে ছাড়া সবাইকে অশান্ত করে দিয়ে গেলো।
মনে মনে বলি, মিয়া এইটা আপনার চারুকলা পাইসেন? যেমনে গাইবেন তেমনেই হইয়া যাইব? আইছেন কানার হাটবাজারে, আন্দারে যদি কন তুমি আন্দা সে তোর রাগ করবই (এই ব্যান্ডের জন্ম যে চারুকলায় সেটা তখন জানতাম না)। বাসায় মানে কাকে ফিরা ভোকালের নামটা ভালো মতো দেখলাম, আদমের নাম শিবু। শিবু কুমার শীল। ‘আকাশ মেঘে ঢাকা’ গানের সঙ্গে আরেকটা প্রিয় গান যুক্ত হইলো, ‘ওঁম’। তারও অনেক দিন পর আমার গুরু রাসেল ভাইয়ের সঙ্গে আজিজ মার্কেট যাইতেছি, দেখা হইয়া গেল শিবুদার সঙ্গে। ছবিতে দেখছি, কনসার্টে দেখছি সরাসরি এই প্রথম। দেখা গেল রাসেল ভাইয়ের সঙ্গে শিবুদার পরিচয় আছে। তার মানে তাঁর সঙ্গে আরো দেখা হওয়ার সুযোগ আছে। কাকে আসার পর একটার পর একটা প্রতিভাবান মানুষ দেখতেছি, অন্য প্রতিভাবান মানুষদের কথা আরেকদিন বলবো।
অনেক দিন পর শিবুদা একদিন অফিসে আসলেন আমাদের প্রকাশনী আর আগামী প্রকাশনী থেকে সলিমুল্লাহ খান স্যারে তিনখান বই বের হইতেছে সেই তিনখান বইয়ের প্রচ্ছদ তিনিই আঁকিতেছেন বই গুলোর নাম- সত্য সাদ্দাম হোসেন ও ‘স্রাজেরদৌলা’, বেহাত বিপ্লব ১৯৭১ এবং আদম বোমা। তাঁর আরেকটা প্রতিভা বের হইলো তিনি বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকেন। ঐ দিনই প্রথম কথা বললাম জিজ্ঞেস করলাম, “দাদা আপনাদের পরবর্তী আর কোন সিডি বের হবে না?” উত্তরে দাদা হাসি দিয়ে বললেন, “হ্যাঁ আসিতেছে অপেক্ষা করেন।”
তাঁর যে আরো প্রতিভা ছিল সেটা জানা ছিল না, অনেকদিন পর আবিষ্কার করলাম তিনি নাটকও লিখেন। একদিন রাসেল ভাইয়ের বাসায় দেখি একটা নাটকে অভিনয়ও করতেছেন, নাম “কফি হাউজ।” ততদিনে ফেসবুক মোটামুটি জনপ্রিয় হইয়া গেছে। আমাদের কাক এলিফেন্ট রোড থেকে লালমাটিয়া স্থানান্তর হইলো। শিবুদা’র সঙ্গে যোগাযোগও বাড়তে থাকলো। তার আরও একটা প্রতিভা বের হইলো সেটা আগে জানতাম না, তিনি কিছু কিছু কবিতাও লিখছেন। আর গান লেখা, সুর করা, গান গাওয়া সেটা আরো আগে থেকেই জানতাম। ফেসবুকের কল্যানে দেখতে পেলাম টুকটাক লেখালিখিও করেন, লেখাও মাশআল্লাহ। আরেকটা প্রতিভা বাদ পইরা গেল, তিনি শর্ট ফিল্ম মানে তাঁর ভাষায় খাট ছবিও বা ছোট ছবিও বানাইয়া থাকেন। আরো দুয়েকটা প্রতিভা বাদ পইরা যেতে পারে হয়তো আরো কিছুদিন পর বের হবে। এত কিছু একটা মানুষ কেমনে করে?
22082012
