৩১ মার্চ (ঝিনাইদহ থেকে মাগুরা হয়ে রাজবাড়ি)
ভোরেই রওনা দিলাম নতুন জেলা দেখার উদ্দেশে। আজ ঝিনাইদহ জেলা শহরের কিছু অংশও পার হতে হল। প্রথমেই চোখে পড়লো একটি চক্ষু হাসপাতাল। তারপরে পলিটেকনিক, অবিকল কুড়িগ্রামের মত। পুরা বাংলাদেশেই এই একটা বিষয় সরকারি কোন কিছু তৈরি করলেই হুবহু একই ডিজাইনের হয়।
বিশেষ করে যদি এক সঙ্গে বিশটা বা ত্রিশটা সরকারী কোন স্থাপনা তৈরি হয় তো একই ডিজাইনে। এতে অবশ্য একটা মজার বিষয় আছে কোন বিল্ডিং দেখলেই বলে দেওয়া যায় কোনটা কোন স্থাপনা। যেমন এই পলিটেকটিক ইনস্টিটিউটটি, সাইনবোর্ড না দেখলেও আমি বলে দিতে পারতাম এটা ঝিনাইদহ পলিটেকটিক ইনস্টিটিউট। এই রকম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েরও একই অবস্থা। অবশ্য কিছু কিছু স্থাপনা একটু অন্যরকম বিশেষ করে যেগুলা অনেক প্রাচীন। যেমন ময়মনসিংহ জেলা প্রাশসকের কার্যালয়।
গোয়ালবাড়ি বাজার, হাটগোপালপুর পার হওয়ার পর আলম খালী নামে একটি জায়গা পেলাম। এর মধ্যে পথে কোন গাছপালা পেলাম না। যাও দুয়েকটা পেয়েছি তাও সব ছোট ছোট। আলম খালীর কিছুদূর এগুনোর পরে হঠাৎ করে বিশাল গাছপালা দেখা গেল মনে হচ্ছিল গাছের সূরঙ্গের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। এর পরে শুরু হলো দুই পাশের কলা গাছের সারি অর্থাৎ বিশাল কলার বাগান। এদিকের এলাকায় যে এত বড় কলাবাগান থাকতে পারে তা ধারণা ছিল না আবার কারও কাছে কখনো শুনিও নাই। আমার নিজের এলাকা নরসিংদীতে অনেক কলাবাগান দেখেছিলাম। ঐখানে একটা এলাকার নামই হয়ে গেছে বেলানাগর। পরিষ্কার বুঝায় যাই বেনানা থেকে বেলানা হয়েছে।
কলা বাগানের পর শুরু হলো পেয়ারা বাগান। তারপর পেলাম ইছাখাদা নামে একটা বাজার এই রকম অদ্ভুত অদ্ভুত অনেক নামের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছিলাম। আর এই বাজারগুলো ছোট ছোট। এক সময় মাগুরা পৌঁছালাম। মাগুরাতে আমার থাকার ইচ্ছা নাই। মাগুরা শহরের পথের মোড়ে এক ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বললাম কিভাবে রাজবাড়ি যাওয়া যায় সেটার পরামর্শ নেয়ার জন্য। তিনি আমাকে বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে যেতে হবে।

ট্রাফিক পুলিশ বলেছিলেন শ্রীপুর হয়ে যেতে হবে। শ্রীপুর একটা থানা শহর। শ্রীপুর বাজারে এসে এক কাপড়ের দোকানে জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে রাজবাড়ি যেতে হবে। দোকানের ভদ্রলোক তখন চা-সিঙ্গালা খাচ্ছিলেন, আমাকে টুল দেখি বসালেন। তারপর খুব ভালমতো বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে যেতে হবে। পাশাপাশি জোর করে দুইটা সিঙ্গারাও খাইয়ে দিলেন।
কাপড়ের দোকানের মালিকের কথামত সাইকেল চালিয়ে গোয়ালদা ঘাটে পৌঁছালাম। এখন নদী পার হতে হবে, এর আগে যত লোকজনকেই জিজ্ঞেস করেছি সবাই বলেছে ফেরি পার হতে হবে। কিন্তু এখানে এসে ফেরি পেলাম না। যা দেখলাম সেটাকে ফেরি বলা যায় না মানে আমরা ফেরি বলতে যা চিন্তা করি ঠিক তা না। দুইটা নৌকা এক সঙ্গে বেঁধে ঐটার উপর বাশ দিয়ে পাটাতন তৈরি করা হয়েছে। এইটা দিয়েই মোটর সাইকেল, সাইকেল, এমনকি অটোও পার করা হয়। একজনের কাছে শুনলাম গাড়িও নাকি পারা হয়েছে কয়েকবার এই জিনিশ দিয়ে। আমাদের দেশের মানুষদের বুদ্ধি দেখে তারিফ না করে উপায় নেই। আরো জানতে পারলাম নদীর নাম গড়াই।
এতদিনের অভিজ্ঞতায় দেখলাম একই নামে অনেক নদী আছে। নদী পার হয়ে নারুয়া বাজারে উঠার আগে একটা সাইনবোর্ড দেখলাম শশ্মান লেখা। এই নদীর একটা অংশ শশ্মান হিসেবেও ব্যবহার হয়। এখানে অনেকদূর পর্যন্ত মাটির রাস্তা পেলাম। মাটির রাস্তা হলেও আঁকাবাঁকা অনেক সুন্দর রাস্তা গ্রামের ভিতর দিয়ে। বালিয়াকান্দি থানা পার হয়ে এক সময় রাজবাড়ি পৌঁছালাম।

রাজবাড়ি যখন পৌঁছাই তখন বিকেল। মিটারে তাকিয়ে দেখি আজ ৮২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছি। শহরে কিছুটা ঘুরাঘুরি করে একটি হোটেল খুঁজে বের করলাম থাকার জন্য। রুমে ঢুকে দেখি বিদ্যুৎ নাই, তাই বিশ্রাম নেয়ারও কিছু নাই। আবার বের হলাম, শহরের রেলগেইটের কাছাকাছি যেতেই হাতির দেখা পেলাম। একজন মাহুত হাতি নিয়ে দোকানে দোকানে চাঁদা তুলছে।
রাজবাড়ির হাতির দুয়েকটা ছবি তুলে রুমে ফিরে আসলাম। বিদ্যুৎ এসেছে, নোটবুক নিয়ে বসলাম। সারাদিনের ঘটনাগুলো ছোট করে নোট করে নিলাম। যাতে পরবর্তীতে কখনো কাজে লাগে। আগামীকাল আমার গন্তব্য মানিকগঞ্জ।
