বছর দুয়েক আগের ঘটনা। ফেসবুকে বোরহান ভাইয়ের একটা স্ট্যাটাস দেখলাম। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত স্ক্যাটিং করে যাবেন। সঙ্গী খুঁজতেছেন, সঙ্গী না পেলে একাই যাবেন। স্ট্যাটাস দেখেই আগ্রহী হয়ে উঠলাম। ফেসবুকে উনার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। কিভাবে কি করা যায় পরামর্শ চাইলাম। স্ক্যাটের দাম জিজ্ঞাসা করাতে তিন চার হাজারের কথা বললেন। প্রাথমিকভাবে তিনি তাঁর নিজের চার চাকার রোলার স্ক্যাটিংটাও দিয়ে দিলেন। সেটা পরেই হাঁটাহাঁটি করার চেষ্টা করলাম। দেখি একটু একটু পারছি। পাশাপাশি প্ল্যান করে ফেললাম ইনলাইনার স্ক্যাটও কিনবো। হাতে দুই হাজারের মতো ছিল। ইমরান ভাইয়ের কাছ থেকে আরো দুই হাজার ধার করলাম। বোরহান ভাইয়ের সঙ্গে একদিন গুলিস্তান গিয়ে ইনলাইনার স্ক্যাট কিনেও নিয়ে আসলাম।
বোরহান ভাইয়ের সঙ্গে একদিন জিয়া উদ্যানেও গেলাম। সেখানে ‘আজাদ’ নামে একটা স্ক্যাটিং শেখানোর ক্লাব আছে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম সেখানে শুধু টাকার খেলা, আর অতিরিক্ত প্রফেশনাল। ভর্তি হতে টাকা, প্রতি মাসে টাকা। তারপরে আবার আমার স্ক্যাট দেখেই বলে দিলেন এইটা ভাল না দুই নাম্বার। উনার কাছে ভাল স্ক্যাট আছে ৬/৭ হাজার টাকা লাগবে। এত টাকা আমার পক্ষে খরচ করা কঠিন। বোরহান ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই কি করবো? এত টাকা খরচ করা তো কঠিন। আমি কি পারবো?’ বোরহান ভাই তখন অদ্ভূত একটা কথা বললেন। যেটা আমাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বললেন, ‘শরীফ ভাই আপনাকে যতটুকু চিনি এবং জানি, আপনে আসলে নিজে নিজেই পারবেন।’
এই কথা শোনার পরে একটু সাহস পেলাম। বাসায় ফিরে ইউটিউব দেখা শুরু করলাম। প্রতিদিন খুব ভোরে বাসার রাস্তার সামনে অথবা ধানমন্ডি লেকে চলে যেতাম। সেখানেই একা একা প্রেকটিস করা শুরু করলাম। সাতদিন পরে দেখি একটু একটু দাঁড়াতে পারছি। একটু একটু চলতেও পারছি। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল যখন কক্সবাজারে যাব তখন দেখি চাঁদ উঠার সমস্যার কারণে ছুটি ক্যান্সেল। সেই ট্রিপ আর দেয়া হইল না। স্ক্যাটিংও বন্ধ হয়ে গেল।
কয়েক মাস আগে রাহাত ভাই একটা পোস্ট দিলেন, টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হাঁটবেন। আরো কিছুদিন পরে দেখলাম আরো অ্যাক্টিভিটি ঢুকানো হইল। শুধু হাঁটা না, সাইক্লিং, ম্যারাথন, কায়াকিং, টমটম। মাথার মধ্যে আইডিয়া আসলো, আমি তো স্ক্যাটিংটাও করতে পারি। কিন্তু স্ক্যাটিং তো শেখাই হইল না। তখন আবার বোরহান ভাইয়ের কথা মনে পড়লো। উনি তো বলেছিলেন আমার কারো কাছে যেতে হবে না। নিজে নিজেই শিখতে পারবো। নতুন করে প্ল্যান করলাম।
গত দেড় মাসে দৈনন্দিন রুটিন পুরা পাল্টে ফেললাম। প্রতিদিন ভোরে সুরাইয়া ঘুম থেকে ডেকে তুলে ঘর থেকে বের করে দেয়া শুরু করলো। অন্য কোন সময় হলে হয়তো ঝাড়ি দিয়া ঘুমিয়ে যেতাম। কিন্তু স্ক্যাটিংয়ের কারণে ভোরে উঠে সংসদের সামনে যাওয়া শুরু করলাম। একা একা প্রেকটিস শুরু করলাম। একদিন ফেসবুকে দেখি নোবেল নামে একটি ছেলে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত স্ক্যাটিংও করেছে। আর ফেসবুকে দেখলাম ‘স্ক্যাটিং ৭১’ নামে একটা গ্রুপ সেখানে প্রেক্টিস করে প্রতি শুক্রবার। মাথার মধ্যে আবার আসলো সেই ‘আজাদ স্ক্যাটিং’য়ের কথা। ক্লাব মানেই টাকা মাথায় ঢুকে গেছে। কি মনে করে ‘স্ক্যাটিং ৭১’ গ্রুপের নোবেল ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম। দেখলাম এখানে টাকা পয়সার খুব একটা বিষয় নাই। শুধু ভর্তি হওয়ার সময় ৩০০ টাকা। আর কোন টাকা পয়সা লাগে না। আর ঐখানে ঐভাবে ইন্সট্রাক্টরও নাই। সবাই নিজের মতো করেই প্রেক্টিস করে আর নোবেল ভাইরা দুয়েকজন আছে শুধু দুয়েকটা টিপস দেন, ব্যাস এই পর্যন্তই। বিষয়টা আমার পছন্দও হইল, কারণ সাইক্লিং থেকে শুরু করে কম্পিউটার মোটামুটি সবই নিজে নিজে শিখেছি। শুধু মাঝে মাঝে আটকে গেলে বড় ভাই/বন্ধুদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়েছি।
গত দেড় মাস যাবত বলা যায় প্রতিদিন একা একা অনুশীলন করতেছি। আর প্রতি শুক্রবার গ্রুপের সঙ্গে অনুশীলন করতে যাই। গ্রুপে অনুশীলনের চাইতে আড্ডাটাই বেশি হয় বলা যায়।
তবে এখন বলা যায় মোটামুটি একটু একটু চালাতে পারি। ভাঙ্গাচূড়া রাস্তায় একটু সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু মেরিনড্রাইভ আমাকে ডাকছে বলা যায়। খুব সাবধানে চালাবো, ছোটখাট সেতু পড়লে জুতা খুলে হেঁটে পার হয়ে তারপর আবার চালানো শুরু করবো। ভাঙ্গাচূড়া রাস্তা থাকলেও হয়তো খুবই সাবধানে হেঁটে হেঁটে পার হবো। আমার খুব একটা তাড়াহুড়া নাই। কিন্তু একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়াটাই ইচ্ছা।
বোরহান ভাইয়ের রোলার স্ক্যাটটা এখনো ফেরত দেয়া হয় নাই সময়ের অভাবে। আমার বেশির ভাগ কাজই দেখা যায় একা একা করি বা ক্রেডিট হয় নিজের। কিন্তু পেছনে দেখা যায় আসলে অনেকগুলা নাম থাকে। এখানেও যেমন প্রধান মেন্টর হিশাবে কাজ করেছেন বোরহান ভাই, এছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন ইমরান ভাই, নোবেল ভাই, সুরাইয়া।
২১ অগ্রহায়ণ ১৪২৪
ছবি: মাহমুদুল হাসান
