পর্বতকে পাগলের মত ভালবেসে এবং পর্বতকেই জীবনের শেষ লক্ষ্য হিসেবে বেঁচে নেওয়ার মানুষগুলোর মধ্যে রেইনহোল্ড মেসনার অন্যতম। ১৯৪৪ সালে ইতালিতে জন্ম নেওয়া এই দুর্বার দুর্জয়ী পর্বতারোহী তাঁর জীবনকে পর্বতের সাথে একাত্বী করে নিয়েছেন। জীবনকে হাতের মুঠোই নিয়ে কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়াই পৃথিবীর সেরা পর্বত হিমালয়ে উঠার দুঃসাহসিকতা দেখান এই পর্বতারোহী এবং সফলও হন। ১৯৭৮ সালে রেইনহোল্ড মেসনার ও তাঁর বন্ধু পিটার হাবলার কৃত্রিম অক্সিজেন না নিয়ে হিমালয়ের পাদদেশে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়ে আসেন। এই প্রসঙ্গে রেইনহোল্ড মেসনার এর নিলিপ্ত উত্তর হল—তিনি জীবনকে কখনও পাত্তাই দেন নাই। চলছে চলুক না, যখন শেষ হওয়ার তখন হয়ে যাবে।
রেইনহোল্ড মেসনারের পর্বতারোহী হিসেবে হাতেখড়ি তাঁর বাবার হাতেই। মাত্র ১৩ বছর বয়সে রেইনহোল্ড পূর্বের আল্পস পর্বত পাড়ি দেন। তারপর আর তাঁকে পিছনে তাকাতে হয়নি। আল্পসেরই বিভিন্ন শৃঙ্গগুলো পাড়ি দিতে থাকেন। রেইনহোল্ড যখন পর্বত আহরণ শুরু করেন তখন বলার মত তেমন কোন সরঞ্জামই তাঁর কাছে ছিল না। গতানুগতিক কোন শিরপাও ছিল না। তবে তিনি পর্বতকে ভালবাসেন বলেনই সকল বাঁধা অতিক্রম করার সাহস করেন।
১৯৭০ সালে রেইনহোল্ড এবং তাঁর ভাই নাঙ্গা পর্বতের ২৬,৬৬০ ফুট বা ৮,১২৬ মিটার উঠেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটা কঠিন বাস্তব যে তিনি তাঁর ভাইকে হারান এই আরহণে। রেইনহোল্ড নিজেও চরম সীমা অতিক্রম করেন। ফ্রস্টবাইটে তিনি নিজের কয়েকটি আঙ্গুল হারান।
পর্যায়ক্রমে তাঁর জীবনে পর্বতারোহনের বিবরণ দিতে গেলে তা শেষ করা যাবে না। পৃথিবীর বিখ্যাত কয়েকজন পর্বতারোহীর মধ্যে মেসনারের নাম উপরের দিকেই থাকবে। ১৯৮০ সালে রেইনহোল্ড একাই হিমালয়ে উঠার সিদ্ধান্ত নেন। সামিটের তিন দিন আগে থেকেই তিনি ছিলেন অসহনীয় যন্ত্রণার মধ্যে। তবুও মনবল হারাননি। টানা তিনদিন তিনি চারপাশের কিছুই দেখতে পারেননি। তবে তিনি শুধু চিন্তা করেছেন যে তিনি শারীরিক ভাবে এখনও ফিট।
তিনি জানেন নাঙ্গা পর্বতে নিজের ভাইকে হারিয়েছেন তবুও ১৯৭৮ সালে আবার সেই পর্বতে একাই সামিট করেন। আর এইবার ছিল সম্পূর্ণ নতুন একটা রুট। সফলভাবে নাঙ্গা পর্বত পাড়ি দেন। তারপরে ১৯৭৯ সালে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত কেটু-র (K2) ২৮,১৫১ ফুট বা ৮,৬১১ মিটার পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এবার কিন্তু একা না। তাঁরা ৫ সদস্যের একটা দল ছিলেন। তারপর থেকে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন পর্বত একের পর এক পাড়ি দিতে থাকেন। কোন কোন পর্বতে তিনি দুই বারও আরোহন করেন। এছাড়া তিনি সেভেন সামিটও সম্পন্ন করেন।
রেইনহোল্ড তার জীবনের এই সব আশ্চর্যজনক ভ্রমণ নিয়ে নানা রকম বই জার্মান ভাষাতে লেখেন। যার বেশির ভাগ বই পরবর্তীতে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়। যেমন: ‘অ্যান্টার্কটিকা: বোথ হেভেন অ্যান্ড হেল’, ‘দ্যা ন্যাকেড মাউন্টেন’, ‘এ ক্লাইমবারস্ লাইফ’ ইত্যাদি। এছাড়া আরও বই তাঁর রয়েছে। যেগুলোতে পর্বত আরোহণের দুরদর্শ বিবরণ রয়েছে।
সূত্র:
১. https://www.britannica.com/biography/Reinhold-Messner
২. https://en.wikipedia.org/wiki/Reinhold_Messner
তর্জমা: সুরাইয়া বেগম
ছবি: ইন্টারনেট
