নর্থ সাউথের ওরিয়েন্টেশন

নর্থ সাউথে আজ ওরিয়েন্টেশন চলতেছে। গতকাল প্যান্ডেল টানাইছে, চেয়ার থেকে শুরু করে অনেক কর্মযজ্ঞ। অনেকটা বিয়ে বিয়ে ভাব। কেউ কেউ ভবিষ্যতে এখান থেকে নিজেদের জীবনসঙ্গী হিসেবেও নিজেদের নির্বাচন করবে, এটা নিশ্চিত।। আজ স্টুডেন্টদের সাথে প্রচুর লোকজন আসছে। অনেকে একদম পুরা ফ্যামিলি নিয়া আসছে। ছোট ছোট বাচ্চারাও আছে। কেউ কেউ কাউকেই নিয়ে আসে নাই। একা আসছে, কেউ আবার কয়েকজন বন্ধু-বান্ধুবী মিলে আসছে।
.
নর্থ সাউথের নাম প্রথম জানতে পারছিলাম খুব সম্ভবত পত্রিকায়, তখন সম্ভবত চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। তখন নাখাল পাড়ার সেলুনে পত্রিকা পড়তে যেতাম নিয়মিত। দেশের প্রথম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। এলাকার বড় ভাইবোনেরা যখন ৭/৮ বছরে অনার্স শেষ করে তখন এই বিশ্ববিদ্যালয় কোন সেশন জট ছাড়াই সঠিক সময়ে কোর্স শেষ করতে পারে, ছাত্রছাত্রীরা সার্টিফিকেট নিয়ে বের হয়ে যায়। আর অনেক টাকা লাগে পড়তে। এই রকম একটা কনসেপ্টই মাথার মধ্যে ঢুকছিল।
.
তারও ৪/৫ বছর পরে এলাকায় তাবন ভাই ছিলেন, তিনি সম্ভবত নর্থ সাউথে ভর্তি হলেন। তাবন ভাইরা ৩ ভাই বোন ছিলেন। তাবন ভাই, মিথুন ভাই আর শ্রেয়া। শ্রেয়া আমাদের থেকে বয়সে কয়েক বছরের ছোট। উনাদের পরিবারের মধ্যে একটা এলিট এলিট ভাব ছিল। তাবন ভাইয়ের বাবা সিভিল এভিয়েশন অথবা বিমানে কাজ করতেন। মা গৃহিনী পাশাপাশি হোমিও চিকিৎসক।
.
উনাদের ভাইবোনদের মধ্যে সবারই তখন জন্মদিন পালন করা হইত। যেটা আমাদের ঐ সময়ে একটু রেয়ার বিষয়। তাবন ভাইয়ের ব্যক্তিগত একটা কম্পিউটারও কিনে দেয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে। এতকথা বলার কারণ ঐ সময় নর্থ সাউথে যাঁরা পড়তো তারা আসলেই একটু পয়সাওয়ালা লোকজনই পড়তো।
.
কিন্তু এখন সেই চিত্রটা আসলে নাই। কিছুটা হয়তো আছে। ইল্যাবেও দেখেছি আবার নর্থ সাউথেও দেখতেছি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজনই বেশি আসতেছে। আমি সাধারণভাবে যা দেখি তাতে মনে হয় ১০ থেকে ১৫ পার্সেন্ট উচ্চবিত্তর লোকজন। বাকীরা আসলে মধ্যবিত্ত আর অল্প কিছু নিম্নমধ্যবিত্তের লোকজন হয়তো আছে।
.
আমি নিজে যেহেতু নিম্ন বিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসছি। তাই হাঁটাহাঁটির সময় আশেপাশের লোকজনের কথাবার্তা, আচার-চারণ দেখে বুঝতে পারি। পুরাপুরি না বুঝতে পারলেও কিছুটা বুঝা যায় এরা আমাদেরই লোক।
.
এই বোঝাপড়াটা আমার জন্য সবচাইতে সহজ হয়েছে কাজের কারণে। ঘুরাঘুরির কারণে, কাজের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউল্যাব, নর্থ সাউথ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়, প্রাইভেট কোম্পানি, এনজিও সবকিছু মিলিয়ে।
.
কিন্তু প্রশ্ন হইল ৯০ দশকের সেই উচ্চশ্রেণি বা এলিটরা কই? এত কমে গেলো কেন? আমি এটা অনেকবার ভাবছি। এই ভাবনার প্রথম জট খুলছে দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভ্যাট চাপানোর পরে আন্দোলন হইল। এলিটরা আর যাই হোক আন্দোলন কমই করে। ঐ আন্দোলন দেখে বুঝতে পারছি প্রাইভেটে এলিটরা এখন কম।
.
৯০ দশকের এলিটরা এখন আরো এলিটা বা বড়লোক হইছে। তখনকার মধ্যবিত্তের একটা অংশ হয়তো এখন এলিট হইছে। দেশেরও কিছুটা উন্নতি হইছে, দেশের মানুষদেরও কিছুটা উন্নতি হইছে। সেই উন্নত মানুষরা এখন প্রাইভেটে আসতেছে যেহেতু পাবলিকে পর্যাপ্ত সিট নাই। কষ্ট করে হলেও পড়ালেখা করানোর চেষ্টা করতেছে।
.
আর ৯০ অথবা বর্তমানের বেশিরভাগ এলিটদের ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরেই পড়ে। এরা আর এখন কেউ দেশে পড়ে না। পড়লেও আমার মনে হয় খুবই কম। বেশির ভাগই বাইরে।
.
আমার এই মনে হওয়ার সাথে কোন ধরনের রেফারেন্স বা ডাটা নাই। আমি শুধু আমার খালি চোখে আর অভিজ্ঞতায় যা দেখি তাই লিখলাম।
.
একেকজনের অভিজ্ঞতা একেকরকম হইতে পারে।
.
২ আশ্বিন ১৪৩২

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.