বাস্তবিক অর্থে কোন বই সম্পর্কে লেখার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। যে কয়টা বই পড়েছি তার মধ্যে অনেকগুলোই খুব ভাল মানের ছিল কিন্তু কখনও সাহস করে দুই একটা শব্দও লেখিনি। মানুষ তার বেশির ভাগ সময়ই অপচয় করে কাটিয়ে দেয়। আমিও তার ভিন্ন নই। কোন এক লেখকের লেখায় পড়েছি, বই মানুষের চোখে ঘুম এনে দেয় আবার বই মানুষের ঘুম কেড়েও নেয়। কথা সত্যি প্রমাণ হয়েছে আমার ক্ষেত্রে বার বার। গত দুই দিন ধরে একটা বই পড়ে শেষ করলাম। মূলত বইটি অনুবাদ গ্রন্থ। বলতে গেলে বলতে হয় এই বইটি আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল।
গল্পটি শুরু হয় সলোমন দ্বীপের একজন রাজার সখের তৈরি প্রাসাদ আর মন্দির সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যাওয়া নিয়ে। তখন থেকে গোপনে একটা মিথ চালু হয়ে যায় যে, রাজা লক দেবতাদের অসন্তুষ্ট করেছে বলে তার সব কিছু সমুদ্র খেয়ে নেয়। এই ঘটনাটি ঘটে ১১৭০ খ্রিষ্ট পূর্বে। রাজার ধনরতœসহ সব কিছু সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার পর সমুদ্রের ওই অংশকে অভিসপ্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর তখনই দ্বীপের যে কয়জন লোক বেঁচে ছিল তারা ঘোষণা করেন যে এই কথা আর কেউ মুখ দিয়ে বের করতে পারবে না।
অনেকগুলো বছর কেটে যায়। বর্তমানে দ্বীপটিতে নানা দেশ থেকে পর্যটকেরা আসে বেড়াতে। তবে সংখ্যায় এখনও কম। দ্বীপটি খুব বিখ্যাত না বলে হয়ত। এই দ্বীপেই আসে গল্পের নায়ক নায়িকা- স্যাম ফারগো ও রেমি ফারগো। এরা দুই জন স্বামী-স্ত্রী। এছাড়া এদের আরো বড় পরিচয় হল এরা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে গুপ্তধন উদ্ধার করেছে। দু’জনই অ্যাডভেঞ্চার খুব পছন্দ করেন। এদের একটা ফাউন্ডেশন আছে যেটা অসহায়দের জন্য কাজ করে।
তারা মূলত তাদের লিও নামে এক রাশিয়ান বন্ধুর আমন্ত্রণে দ্বীপে আসে। দ্বীপে এসে তারা নানা রকম সমস্যায় পড়ে। এই সমস্যাগুলো অনেক গুছিয়ে লিখেছেন লেখক। পড়ার সময় সব ঘটনায় মনে হয়েছে আমি সাথে আছি আর ঘটনাগুলো আমার সামনেই ঘটছে। এই গল্পে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে জাপানিরা দ্বীপে কি ধরনের অত্যাচার চালিয়েছে তারও একটু বিবরণ আছে। গল্পে একসময় ইতিহাসের খোঁজে জাপান চলে যায় ফারগো দম্পতি।
ফারগো দম্পতি ইতিহাস ঘাটতে ঘাটতে একসময় গুপ্তধনের ক্লু পেয়ে যায়। আর জাপানি এক কর্ণেল তার ডাইরিতে গুপ্তধনের সংকেত লিখে যায়। কেউ বুঝতে পারেনি। বুঝার কথাও না। সংকেত মানে কবিতা। কিন্তু ফারগো দম্পতি বুঝতে পেরেছে কারণ তারা ইতিহাস ঘেটেছে। অনেক অজানাকে খুঁজে বের করেছে।
দ্বীপটিতে বিদ্রোহীদের অত্যাচার, মানুষ হারিয়ে যাওয়াসহ আরো অনেক অ্যাডভেঞ্চার রয়েছে। মরতে মরতে বেঁচে যাওয়া থেকে শুরু করে অনেক অবিশ্বাস্য ঘটনা রয়েছে। ভ্যানা নামে একজন মহিলা ডাক্তার। গল্পের শুরু থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত সে ছিল দ্বীপের একমাত্র ডাক্তার এবং ভাল মানুষ। কিন্তু শেষ টুইস্টটা হল সেই-ই সব ঘটনার আসল কারিগর। একটা মানুষ কত খারাপ হতে পারে তা এই চরিত্রের মধ্যে পাওয়া যায়। আমার বইটি পড়তে পড়তে মনে হয়েছে ভ্যানার কু-কৃত্তিগুলোই মনে হয় এই বইয়ের গুপ্তধন। কিন্তু একেবারে শেষে হঠাৎ গল্পের মোড় ঘুরে যায় আর শেষে গুপ্তধন পাওয়াও যায়। গল্পের একটা জায়গায় রেমি ফারগো বলেন, ‘এটাই জগতের নিয়ম। কখনও হারতে হয়, কখনও জিততে হয়।’ বইয়ের একথাটি খুব ভাল লাগে।
এই বই সম্পর্কে কয়েকটি মন্তব্য:
‘দ্য সলোমন কার্স একটি দুর্দান্ত থ্রিলার। স্যাম ও রেমি’র নির্ভীক পথচলা, সততা, কৌতূহলী মনোভাব আর বিপদে ঘুরে দাঁড়ানো আপনাকে মুগ্ধ করবে। সিট বেল্টে বেঁধে নিন! খুব ভাল জিনিস উপভোগ করতে যাচ্ছেন!’–লাইব্রেরি জার্নাল।
‘দৃশ্যপট ও অ্যাকশনগুলো এতটাই জীবন্ত মনে হবে যেন গ্রাফিক-নভেল পড়ছেন। জঙ্গলের অ্যাডভেঞ্চার, ভিলেনের সঙ্গে লড়াই এবং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ইতিহাস। ক্লাইভ কাসলার পাঠকদেও মন মাতানো এখনও অব্যাহত রেখেছেন। অন্য বইগুলোর মতো এই বইটিও তাঁর ভক্তদের তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হবে।’–কিরকাস রিভিউ।
‘হাত থেকে নামানো কঠিন।’–অ্যাসোসিয়েট প্রেস।
বইয়ের নাম: দ্য সলোমন কার্স
মূল লেখক: ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক
অনুবাদক: সাঈম শামস্
রোদেলা প্রকাশনী
মূল্য: ৪০০ টাকা
