২০০৭ সালের দিকে মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী একটা সিনেমা বানিয়েছিলেন, নাম ‘ম্যাড ইন বাংলাদেশ’। সেখানে দেখা গেল তিনি একটা চরিত্র তুলে আনলেন নাম সাদেকুর রহমান। পাশাপাশি একটা সংগঠনের নামও নিলেন যুব কল্যান সংঘ। ফারুকী ভাইয়ের বেড়ে উঠা থেকে শুরু করে সবকিছুই নাখালপাড়ায়। আমারও তাই। তবে একটা পার্থক্য ছিল তিনি থাকতেন পূর্ব নাখালপাড়ায় আর আমি পশ্চিম নাখালপাড়ায়। পূর্ব হোক আর পশ্চিম হোক, নাখালপাড়ার বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরাই নাখালপাড়া হোসেন আলী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ছিল। আমরা যারা নাখালপাড়ায় বসবাসকারী ছিলাম, আমাদের সবার কাছেই নাখালপাড়া যুব কল্যান সংঘ খুবই পরিচিত নাম। আর সাদেকুর রহমান হিরু নামটাও অনেক পরিচিত।
যুব কল্যান সংঘের প্রধান ছিলেন বলা যায় হিরু সাহেব। সেই সংঘে আওয়ামী লীগ বিএনপির অনেক নেতা কর্মীই সদস্য ছিল বলা যায়। আমি প্রায়ই সেখানে যেতাম টিভি দেখার জন্য। বিশেষ করে ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য। তখন সবার ঘরে ঘরে টিভি ছিল না। আর কারো কারো বাসায় টিভি থাকলেও ডিসের লাইন ছিল না আবার ডিসের লাইন থাকলেও সবাই ঐভাবে খেলা প্রেমি ছিল না। আমি প্রচণ্ড ক্রিকেট পছন্দ করতাম। আর যুব কল্যান সংঘে খেলা হইলে অন্য কোন চ্যানেল দেয়া হইত না।
বিএনপি সরকার সন্ত্রাসীদের দমন করার জন্য অপারেশন ক্লিন হার্ট নামে একটা অপারেশন শুরু করছিল। অপারেশন ক্লিন হার্ট নামটা সম্ভবত মিডিয়ার লোকজন অথবা সাংবাদিকরাই দিয়েছিলেন। সাদেকুর রহমান হিরু তখন বিএনপির সাপোর্টার ছিলেন যতদূর মনে পড়ে। আর মহাখালী টার্মিনাল তার নিয়ন্ত্রণে ছিল, এখনও আছে। মনে আছে তখন মনোয়ার হোসেন ডিপজলের নিয়ন্ত্রণে ছিল গাবতলী টার্মিনাল। এইসব কথা অবশ্য অনেকেরই জানা থাকার কথা। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এই ধরনের নিউজ হয়তো পড়ে থাকতে পারেন। উনারা দুইজনেই তখন টুকটাক সিনেমায় অভিনয় করতে শুরু করেন। ভিলেনেরই পার্ট বলা যায়। হিরু সাহেব সিনেমায় খুব একটা ভাল করতে পারেন নাই। উনার কোন সিনেমা অবশ্য দেখাও হয় নাই আমার। ডিপজলের কথা আর নাই বা বললাম। বাংলাদেশের সিনেমা ধ্বংসের শেষ কাজটা খুব সম্ভবত ডিপজল সাহেব করেছেন। অপারেশন ক্লিট হার্টের সময় সাদেকুর রহমান হিরু হজ করতে চলে গেলেন। ফারুকী ভাই অবশ্য এইসব কোন কিছুই সিনেমায় ঐভাবে তুলে আনেন নাই। তবে তিনি সাদেকুর রহমানের চরিত্রটা ঠিকই সিনেমার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।
দেশের অথবা সমাজের প্রতিটা ক্রাইসিস মানুষ চেনার জন্য একটা বড় মাধ্যম হিশাবে আবির্ভাব হয়। শাহবাগ আন্দোলনের সময় ফেসবুকে প্রচুর জামাত-শিবিরের সাপোর্টার পেয়েছিলাম। এই রকম প্রতিটা ক্রাইসিসেই বিশেষ বিশেষ মানুষ পাওয়া যায়। যারা গর্ত থেকে বের হয়ে আসে। যেমন বক ধার্মিক, বক আওয়ামী লীগার, বক বিএনপি।
নিরাপদ সড়কের জন্য ছাত্র আন্দোলনের সময়ও কিছু কিছু মানুষ বের হয়ে আসছিল। এই আন্দোলনের অনেকদিন পরে যখন আইন প্রণয়ন হবে তখন হঠাৎ এক টক-শোতে ফারুকী ভাইয়ের চরিত্র সাদেকুর রহমানকে দেখা গেল। তিনি এখন সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের বড় নেতা হয়ে গেছেন। বিএনপি সাপোর্টার থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের সাপোর্টার হয়েছেন।
ফারুকী ভাই খুব সম্ভবত সিনেমা নাটকের অনেক চরিত্রই নাখালপাড়া অথবা তাঁর আশেপাশের চরিত্র থেকে তুলে নিয়েছিলেন।
৯ বৈশাখ ১৪২৭