আমি বেশ মানুষকে চিনতাম বা এখনো চিনি যাঁরা মনে প্রাণে দেশকে ভালবাসে। এই মানুষগুলা দেশটাকে পাল্টে শোষণমুক্ত করার বড় স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র অবস্থায় রাজনীতিতে ঢুকেছিল। এই মানুষগুলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র-ছাত্রী। যাঁর যাঁর বোর্ড থেকে প্রথম দ্বিতীয় হওয়া ছাত্র-ছাত্রী। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও তাঁরা সেরা ছাত্র-ছাত্রী। এই মানুষগুলা বেশিরভাগই বাম ধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
এই মানুষগুলা অনেকটা সময় ধরে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, এখনো করছেন। কিন্তু হঠাৎ করে এই মানুষগুলা যখন নিজেরা কোন কিছু মালিক হয়ে যান তখন কেন জানি তাঁরা পেছনের দিনের সংগ্রাম আদর্শ সব ভুলে যান। ভয়ঙ্কর পুঁজিবাদী হয়ে ওঠেন। এরা তাঁদের কর্মীদের এমনভাবে খাটান যা তথাকথিত পুঁজিবাদীদের চাইতে ভয়ঙ্কর। এই মানুষগুলার সবচাইতে বড় গুণ হলো কর্মীদের সেরাটা বের করে নিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু পয়সা দেয়ার সময় যারপরনাই বেহিশাবী। বেহিশাবী অবশ্যই নেগেটিভ অর্থে। এরা কেন ক্ষমতা পাবার পর এভাবে পাল্টে যান তা একটা বড় প্রশ্ন।
অনেক বড় ভাইদের পেয়েছি যাঁরা নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে দিতে চেয়েছেন। ঘর-সংসার না করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই মানুষগুলা কেন জানি সেই জায়গা থেকে ফিরে এসেছেন। ফিরে এসে যাদের সারা জীবন গালি দিয়েছেন সেইসব এনজিওগুলোতে যুক্ত হয়েছেন।
বাম ঘরানার লোকগুলা কোন কারণে খুব একটা সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। বিশেষ করে তাঁরা যেটা বুঝে সেটার বাইরে কোন কিছু গ্রহণ করতে চান না। সহনশীলতা অনেক কম, নিজে যেটা বিশ্বাস করেন সেটা যুক্তি দিয়ে দাঁড়া করাতে চান, মাঝে মাঝে উত্তেজিতও হয়ে যান। গুরুর কাছ থেকে যা শুনেছেন তার বাইরে যেতেই চান না। আমি এঁদের সঙ্গে ছাত্র-শিবিরের একটা মিল খুঁজে পাই।
ছাত্রজীবনে আমার একটা বড় সার্কেল ছিল। সবাই মিলে আড্ডা দিতাম। প্রায় ২৫/৩০ জনের একটা গ্রুপ হবে। এই পুরা গ্রুপের মধ্যে দুইটা অংশ ছাত্রলীগ আর ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। দুইজন ছিল ছাত্র শিবির করতো, আর আমি ছাত্রফন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ছাত্র শিবিরকেও খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে, এঁদের মধ্যে ইন্টারনাল একটা গণতন্ত্র আছে। ছাত্রলীগ আর ছাত্রদলের মিছিল মিটিংয়েও যাওয়া হয়েছে। তাই এই দুই দলকেও দেখা হয়েছে খুব কাছ থেকে। আর ছাত্রফন্টের কথা নাইবা বললাম।
ভবিষ্যতে সময় সুযোগ হলে আমার পর্যবেক্ষণগুলো আরো বিস্তারিত বলার চেষ্টা করবো পয়েন্ট ধরে ধরে, এটা সারমর্ম মাত্র।
আজ এই পর্যন্ত।
১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫