পশ্চিম বঙ্গীয় সাইক্লিং করচা-১

৬৪ জেলা সাইকেল ভ্রমণের সময় একা থাকার কারণে মাথার মধ্যে নানা নানারকম পরিকল্পনা ঘুরতো। সাইকেল নিয়ে বাংলাদেশে কি কি করা যায়। পাশাপাশি ওপার বাংলার কথাও মাথায় এসেছিল।

ভ্রমণ শেষে যখন ঢাকায় ফিরে আসি তখন রাব্বি ভাই কি মনে করে যেন বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ তো শেষ হইছে এখানেই না থেমে এবার দেশের বাইরের কথা চিন্তা কর’। সত্যি কথা বলতে তখন অতটা সাহস হয় নাই। দেশের বাইরে সাইকেল নিয়ে চলে যাব। তবে হঠাৎ একদিন সেই আশা পূরণ হয়েছিল মুনতাসির ভাইয়ের হাত ধরে শ্রীলঙ্কায় ঘুরে এসে। তারপর কিভাবে কিভাবে যেন মালয়েশিয়াও যাওয়া হয়ে গেল।

এবারের ঈদের ছুটিতে ভারতের পশ্চিম বঙ্গেও ঘুরে আসা হল। দেশের বাইরে এ পর্যন্ত তিনটা দেশে গিয়েছি এবং প্রতিটা দেশেই সাইকেলসহ যাওয়ার সৌভাগ্য হল, এর চাইতে শান্তির বিষয় মনে হয় আর কিছু হতে পারে না। প্রথমে প্ল্যান ছিল বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া টেকনাফের মতো পশ্চিমবঙ্গের এক মাথা থেকে আরেকমাথা। সঙ্গী হিশাবে পেয়েছিলাম বাহার ভাই, সোহাগ ভাই আর হাসিব ভাইকে। তবে সোহাগ ভাইয়ের সঙ্গে কেমেস্ট্রিটা বেশি জমে গিয়েছিল।

সেই প্ল্যান আরেকটু বাড়িয়ে নিলাম। তিনটা ভাগে ভাগ করলাম। একটা ভাগে ঢাকা থেকে বুড়িমারি। পুরাটাই বর্ডার রোড ধরে। দ্বিতীয় পার্ট পশ্চিমবঙ্গের এক মাথা থেকে আরেক মাথা অর্থাৎ ম্যাপের উপর দিকে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম জেলা কোচবিহার থেকে বকখালি একদম সমুদ্রে। তৃতীয় পার্টে যশোর রোড।

যশোর রোডের বিষয়টা মাথায় এসেছিলো ৬৪ জেলা ভ্রমণেই যখন যশোর থেকে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলাম। নাভারন থেকে সাতক্ষীরা ঢুকার সময় মনে হচ্ছিল ‘ইশ যদি যশোর রোড পুরাটা চালানো হতো’। ঈশ্বরের সম্ভবত ফেরার সময় পুরাপুরি যশোর পর্যন্ত সাইকেল চালিয়ে আসা হয় নাই। যেখানে আফসোস হয়েছিল সেই নাভারন পর্যন্তই এবার চালানো হলো।

সোহাগ ভাইয়ের সঙ্গে যখন রুট প্ল্যানের পাশাপাশি খরচের হিশাব করছিলাম। তখন অনেক কম বাজেটে করার চেষ্টা করেছিলাম। সব হিশাবনিকাশ করে দেখা গেল দুইজনের বাংলাদেশি ২০ হাজার টাকার মতো হয়। ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছিল বাসে বুড়িমারী। তারপর আবার বেনাপোল থেকে আবার বাসে ঢাকায়। প্রথম পার্ট আর তৃতীয় পার্ট ধরাই হয় নাই। খুবই অল্প বাজেট।

‘কেওক্রাডং বাংলাদেশ’ গ্রুপের সঙ্গে একবার রাজশাহী-কানসাটের দিকে সাইকেল ভ্রমণে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রায় ২০/২৫ জনের একটা টিম ছিল। সাইকেল ট্রাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমরা ট্রেনে গিয়েছি এবং সাইকেল চালিয়ে শেষ করে ফেরার সময় আবার ট্রেনেই ফিরেছিলাম। সেই ট্রিপের শেষে একটা গেট-টুগেদার হয়েছিল। গেট-টুগেদারে শাকিল ভাই একটা মজার অভিজ্ঞতা বলেছিলেন। ট্রেনের টিকেট কাটার সময় শাকিল ভাই টিম লিডার মুনতাসীর ভাইকে বলেছিলেন ফেরার টিকেটটা এসি টিকেট কাটার জন্য। যাতে আরাম করে ঘুমিয়ে অফিস করা যায়।

মুনতাসীর ভাই তখন উত্তরে শাকিল ভাইকে বলেছিলেন, ‘শাকিল ভাই প্লিজ কাম টু দ্যা আর্থ, একটু পৃথিবীতে নেমে আসেন। পৃথিবীর মানুষগুলাকে একবার দেখেন’। অথবা এই টাইপের কিছু একটাই বলেছিলেন। তবে কথার সারমর্ম ছিল এমনই।

আমাদের এখানকার বেশিরভাগ ভ্রমণকারীরা পৃথিবীতে নামতে চান না। উপর থেকে ভ্রমণ করতে চান। আমি ব্যক্তিগতভাবে পৃথিবীতে নেমেই ভ্রমণ করার চেষ্টা করি।

আমার ভারতীয় পার্টে ১১ দিনে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল ৫ হাজার ২০০ কি ৩০০ রুপি। এর মধ্যে আমরা দুই রাত আতিথেয়তা গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছি। বাংলাদেশী টাকায় হিসাব করলে পুরা তিনটা পার্টে ১৫ দিনে ট্র্যাভেল টেক্সসহ খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকার মতো।

পৃথিবীর মাটিতে নামলে একটা বড় সুবিধা হলো নানা রকম পথ খুঁজে পাওয়া যায়। অনেক ঘরের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে সেই ঘর সবার জন্য না। যাঁরা পৃথিবীতে নামতে পারবেন, সবকিছুর সঙ্গে মিশে যেতে পারবেন শুদ্ধমাত্র তাঁদের জন্য।

২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৬

ছবি: হাবিব উল্লাহ বাহার

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.