বর্তমানে সবাই কম্পিউটারে ঢুকিয়াই আগে শিখেন ফেসবুকিং। আমি যখন কম্পিউটারে প্রথম হাত দিয়াছিলাম, প্রথমেই শিখিতে হইয়াছিল কম্পোজ। প্রথমে কিবোর্ডে খুঁজিয়া খুঁজিয়া এবিসিডি লিখিতাম। ইংরেজি বেশিদিন আমাকে টানিল না। লেখা শুরু করিলাম বাংলা। বাংলা লেখা আরো কঠিন এবং বিরক্তিকর। হঠাৎ মাথায় আসিল দৈনন্দিন দিনের ঘটনাগুলি লিখিয়া ফেলিলে কেমন হয়? শুরু করিলাম দৈনন্দিন দিনের ঘটনা। যাহাকে আমরা ডায়েরি লেখা বলি, বাংলায় বলিলে রোজনামচা।
এই কাজ করিতে করিতেই একসময় অফিসের সকল কম্পোজ আমিই করিতে থাকিলাম। গত কয়েক বছরে সলিমুল্লাহ খান স্যারের যে কয়টা বহি বাহির হইয়াছে তাহার বেশির ভাগ বহির কম্পোজ আমিই করিয়াছি। ভবিষ্যতেও তাঁহার যে কয়টা বহি বাহির হইবে বেশির ভাগ কম্পোজ আমি সম্পন্ন করিয়া ফেলেছি। যাহার সংখ্যা পাঁচের কম হইবে না।
সলিমুল্লাহ খান স্যারের বেশিরভাগ বহির সম্পাদক ছিলেন আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান। তাঁহাকে সবাই রাসেল নামেই চিনিবেন। রাসেল ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়িতেন। তাঁহার সাঙ্গপাঙ্গ অর্থাৎ সহকারী সম্পাদক হিসাবে যাঁহারা ছিলেন তাঁহারও একই বিভাগের তাঁহারই ছোট ভাইবোনেরা। দুইএকজন অবশ্য বাহিরেরও ছিলেন।
আমি বেশির ভাগ কম্পোজ করিতাম পত্রিকা দেখিয়া দেখিয়া। দ্রুত কম্পোজের ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমার বিস্তর ভুল হইত। সেই ভুলগুলি ঠিক করিবার প্রাথমিক কাজ ছিল সহকারী সম্পাদকদ্বয়ের। পাশাপাশি কাকের নিজস্ব বানানরীতিতে বানান শুদ্ধ করাও ছিল তাঁহাদের কাজ। কিন্তু তাঁহারা সেই কাজ খুব যে ভালভাবে করিতে পারিতেন, তাহা কিন্তু না। বেশিরভাগ ভুলই তাঁহারা খুঁজিয়া পাইতেন না। ভুল তো খুঁজিয়া পাইতেনই না, পাশাপাশি তাঁহারা আরেকটা অকাজ করিতেন। সেইটা হল সঠিক বানানকে কাটাকুটি করিয়া ভুল বানানে লিখা।
এই অকাজ তাঁহারা কেন করিতেন? সেটা অনেক বড় রহস্য? আমার কাছে খুব বেশি বড় রহস্য মনে হয় নাই। আমার কাছে মনে হইয়াছে তাঁহারা আসলে মন থেকে এই কাজ করিতেন না। রাসেল ভাই বলিয়াছেন তাই তাঁহারা সম্পাদনার কাজ করিতেন। রাসেল ভাই না বলিলে হয়ত তাঁহারা এই কাজ করিতেন না। প্রক্ষান্তরে তাঁহারা ঠিকই সহকারী সম্পাদকের সীল গায়ে মাখিয়া ঘুরিতেছেন। তাঁহাদের কাছে সম্পাদকীয়তার মানে কি তাঁহারাই ভাল বুঝিবেন। অথচ তাঁহারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন একটা বড় প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করিতেন এবং তাঁহাদের বিভাগও ছিল ঐ কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত। একটু মন দিয়া কাজ করিলে তাঁহাদেরই ভাল হইত।
সহকারী সম্পাদকরা যে শুদ্ধ অকাজ করিয়াছেন তাহা বলিব না, তাঁহারা কিছু ভুল বানানও সঠিক করিয়াছিলেন তবে তাহা খুবই নগন্য। অন্তত আমার কাছে নগন্য।
সহকারী সম্পাদকদ্বয়ের অকাজের কারণে যাঁহার সবচাইতে বেশি কষ্ট হইয়াছে তিনি সেই প্রধান সম্পাদক আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান ওরফে রাসেল ভাইয়ের। কারণ সহকারী সম্পাদকরা যে শুদ্ধ বানানটি ভুল হিসেবে লিখিয়াছেন সেটাই আবার নতুন করিয়া শুদ্ধ করিতে হইয়াছে। একমাত্র রাসেল ভাইয়ের কারণেই কাকের বহিগুলোতে অনেক নির্ভুল থাকিত। কারণ তিনি যে কাজটি করিতেন সেই কাজটিকে ভালবেসে করিতেন এবং নিজের প্রাণের তাগিদেই করিতেন। তিনি যে শুদ্ধ কাকের বহিই সম্পাদনা করিয়াছেন তাহা নহে, তিনি কাকের বাহিরেও কিছু কাজ করিয়াছেন।
এই ভাল কাজের পুরষ্কার হিসাবে সলিমুল্লাহ খান স্যার তাঁহাকে ছাড়া অন্য কাউকেই সম্পাদক হিসেবে চিন্তা করিতে পারেন নাই, এখনও পারেন না। সেই কারণে গত দুই বছরে সলিমুল্লাহ খান স্যারের কোন বহি বাহির হয় নাই।
আমার ব্যক্তিগতভাবে কাকের সহকারী সম্পাদকদ্বয়দের মধ্যে সুমন আরেফীন আর তুষার হাসান মাহমুদকে ছাড়া কাউকেই সম্পাদক মনে হয় নাই।
তর্কের খাতিরে রাসেল ভাই হয়ত বলিবেন কেহ যদি একটা বানান শুদ্ধ করিয়া থাকে তবে তিনি সম্পাদকই।
১. চিচিং তো ফাঁক হইয়া গেল! দুই বৎসর বহি বাহির না হইবার অপরাধে আমি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধী। এই বন্ধ্যাত্ব শীঘ্রই কাটিয়া যাইবে আশা করা যাইতে পারে। এই লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনাও ফাঁদা হইয়াছে ইতিমধ্যে।
২. সুমন আরেফীন এবং তুষার হাসান মাহমুদ অশেষ গুণী সম্পাদক, তাহাতে সন্দেহ নাই।
৩. এইখানেও একটু সম্পাদনা ফলাই। শিরোনাম কাকের সম্পাদকীয় না, “সম্পাদনা” প্রসঙ্গে হইবে। কেন, তাহা অন্যত্র।
শিরোনাম শুদ্ধ করিয়া দিলাম।
তোমার সাধু গদ্যও কিন্তু অনেক ভাল। লিখিতে থাক। যাহা ইচ্ছা তাহাই। যাচ্ছেতাই।
সকলই আপনাদের দোয়ায়।