
রিংকু ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় ফুয়াদ ভাইয়ের মাধ্যমে। আমরা এক সঙ্গে ক্রিকেট খেলতাম। রিংকু ভাই ছিল আমাদের সিনিয়র। রিংকু ভাইয়ের খেলা অদ্ভূত ভাবে টানতো। শুধু তাই না উনি কিভাবে ব্যাটিং করতেন তাও আমি ফলো করতাম। আমাদের ক্লাবের নাম ছিল ‘টাইগার ক্রিকেট ক্লাব’। রিংকু ভাই সেই ক্লাবের অধিনায়ক ছিলেন অনেক বছর। উনি যখন অধিনায়কত্ব ছাড়লেন তখন সেই দায়িত্ব আমার উপরই আসে। বলা যায় রিংকু ভাই ছিলেন আমার ক্রিকেটিও গুরু। ভাইয়ার সঙ্গে অদ্ভূত একটা মিল ছিল আমার। আমদের দুই জনেরই সাস্থ্য খারাপ ছিল। তবে রিংকু ভাই ছিল অনেক লম্বা। প্রায় ছয় ফুটের কাছাকাছি।
আমি ছোটবেলা থেকেই গান শুনতে ভালবাসি। প্রায়ই রিংকু ভাইকে ব্ল্যাংক সিডি কিনে দিয়ে আসতাম গান রেকর্ড করার জন্য। ভাইয়া সবসময়ই করে দিতেন, রেকর্ড করার পর আমি যে লিস্ট দিতাম তারপরেও যদি সিডিতে জায়গা থাকতো তিনি অন্য গান দিয়ে পূর্ণ করে দিতেন। কোনদিন না করেন নাই, বিরক্তও হন নাই। উনি বিভিন্নভাবে আমাকে সহযোগীতা করতেন, সেটা খেলা হোক খেলার বাইরেই হোক। যেমন একদিন রিংকু ভাইকে টাকা দিয়েছি ব্যাটিং গ্লাপ্স কিনে আনার জন্য। আমি যে টাকা দিয়েছি তিনি সেই টাকার চাইতে একটু বেশি দিয়ে ভাল গ্লাপ্স এনে দিলেন। কিন্তু আমার কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেন নাই।

বন্ধু তুর্যর মাধ্যমে আমরা একটা কনসার্টে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। কনসার্টটি ছিলো শাহিন কলেজের এক ছেলের ক্যান্সারের টাকা সংগ্রহ করার জন্য। আমরা সবাই মিলে রাতে পোস্টার লাগিয়েছি। যে দিন কনসার্ট সেদিন ভোরে আর্মি স্টেডিয়াম গিয়েছি এক সাথে। ঐ দিন রিংকু ভাই একটা নাইকির জ্যাকেট পরে এসেছিলেন। দেখে আমার অনেক ভাল লেগেছিল। কথায় কথায় বন্ধু বাবুকে বলেছিলাম, ‘রিংকু ভাইয়ের জ্যাকেটটা অনেক সুন্দর।’ বাবু কি মনে করে একদিন রিংকু ভাইকে বলেও দিল। অনেকদিন পরে আমরা প্রেক্টিস শেষে মাঠ থেকে বাসায় ফেরার সময় আমাকে অবাক করে দিয়ে জ্যাকেটটি আমাকে দিয়ে দিয়েছিলেন। জ্যাকেটটি আমি এখনও যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছি। ভাইয়ার কথা মনে হলেই জ্যাকেটটা দেখি আর রিংকু ভাইকে অনেক মিস করি।
মা মারা যাওয়ার পর একসময় আমাদের দুই ভাইকে রেখে বাবা চলে যান। তখন আমরা দুই ভাই-ই স্কুল ছেড়ে কাজে ঢুকে পড়ি। কি মনে করে ইচ্ছা হল এসএসসি পরীক্ষাটা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দিয়ে দেই। কিন্তু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অল্প টাকাও আমার কাছে অনেক বেশি ছিল। সেই দুঃসময়ে বন্ধু বাবু, হাবিব ভাই আর এই রিংকু ভাইয়ের কাছ থেকে মোটামুটি একটা বড় অংশ পেয়েছিলাম।
রিংকু ভাইদের মত কিছু অসাধারণ মানুষ আমার পাসে এবং মাথার উপর বটবৃক্ষের মত দাঁড়িয়েছিল বলেই আমি আজ এতদূর আসতে পেরেছি। যা কিছু ভাল, সব শিখেছি উনাদের মত মানুষ পেয়েছি বলেই।
আজ রিংকু ভাই অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন। ফেসবুক আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয়।
ভাল থাকবেন রিংকু ভাই, আজকের দিনে ঐ দিনটার কথা মনে পড়ছে। আমি বাবু, হাবিব ভাই, আপনি। একসঙ্গে ইস্টার্ন প্লাজার পাসে দোকানে খাওয়া, আড্ডা দেয়া।
ভাইয়া আপনার কাছে যে অসম্ভব ভালবাসা পেয়েছি তা এখনও অনুভব করি। বার বার মিস করি সেই দিনগুলির কথা।
জন্ম শুভ হোক।
২ অক্টোবর ২০১৪