১ এপ্রিল (রাজবাড়ি থেকে মানিকগঞ্জ)
খুব ভোরে রওনা দিলাম রাজবাড়ি থেকে। কিছুক্ষণ চালানোর পরে একটি তিন রাস্তার মোড় পেলাম। একটি চলে গেছে ফরিদপুর, ভাঙ্গা, বরিশাল, খুলনার দিকে আরেকটি মাকিগঞ্জ, ঢাকা। আমি ঢাকার পথের রাস্তার অনুসারী হলাম। যেই মোড়টি পার হলাম সেই মোড়টির নাম আহলাদীপুর।
গোয়ালন্দ পার হয়ে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছালাম। বাস ট্রাকের লম্বা সারি। আমি জ্যামের মাঝেই চিপাচাপা জায়গা বের করে একটি ফেরিতে উঠে গেলাম। সাইকেলটি তালা দিয়ে উপরে চলে গেলাম। বুঝা গেল ফেরিতে গাড়ি উঠানামা করতেই বেশি সময় লাগে। তাই লম্বা লাইন হয়ে যায় গাড়ির। আর ফেরিতে গাড়ি উঠার কিছু নিয়মও চোখে পড়লো। যেমন যাত্রী পারাপারের জন্য বাস-গাড়ির অগ্রাধিকার বেশি। সবার প্রথমে অগ্রাধিকার অ্যাম্বুলেন্সের তারপর বাস বা ব্যক্তিগত গাড়ির। ট্রাকের অগ্রাধিকার সবচাইতে কম। অবশ্য শুধু ট্রাকের জন্য আলাদা ফেরিও দেখলাম সেই ফেরিতে অন্য গাড়ি সাধারণত উঠতে দেয়া হয় না। আর অঘোষিতভাবে সাইকেল আর মোটরসাইকেলের কোন বাঁধা নেই। সাইকেলের জন্য কোন টাকা দিতে হয় না। তবে মানুষের জন্য ভাড়া দিতে হয়। যদিও কোন কারণে আমার কাছ থেকে টিকেট চেকার ভাড়া নেন নাই। শুধু জিজ্ঞেস করেছে দেশ দেখতে কেমন লাগতেছে।
ফেরি পার হতে বেশি সময় লাগলো না। দৌলতদিয়ার উল্টা পাড়ের নাম পাটুরিয়া। এই দিকের ফেরি আমি আগে কখনো পার হইনি এই প্রথম। আর এই দিকে আগে কখনো আসিও নাই। শিবালয়, মহাদেবপুর পার হয়ে এক সময় মানিকগঞ্জ পৌঁছালাম।
মানিকগঞ্জে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল তানিয়া আপার বাসায়। ভ্রমণে বের হওয়ার আগেই তানিয়া আপা বলে রেখেছিলেন আমি যেন উনাদের বাসায় থাকি। আর আমার আসার উপলক্ষ্যে তিনিও ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ চলে এসেছিলেন। দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে একটা ঘুম দিলাম। বিকালের দিকে ছোট ভাই টুকু হাজির সঙ্গে আরেক ছোট ভাই রিয়াদ। টুকুকে আগেই বলে রেখেছিলাম আসার জন্য। কিছু জিনিশপত্র ফেরত পাঠাব আর কিছু জিনিশপত্র নেব।
প্রায় এক মাস ধরে তিনটা/চারটা টিশার্ট পরছিলাম। পুরানা টি-শার্টগুলা টুকুকে দিয়ে দিলাম, আর নতুন কয়েকটা টিশার্ট রাখলাম। পাশাপাশি সাইকেলের প্যানিয়ার ফেরত দিয়ে দিলাম। এর বদলে কাঁধে নেয়া যায় এমন ব্যাগ নিলাম। কারণ সামনে বরিশালের দিকে যাচ্ছি সেখানে নদি-খাল বেশি। নৌকাতে বা লঞ্চে উঠতে হলে সাইকেল আর প্যানিয়ার একসঙ্গে তুলা অনেক ঝামেলার তাই এই ব্যবস্থা। পাশাপাশি টর্চ লাইট পাল্টানো থেকে শুরু করে আরো কয়েকটা জিনিশ পাল্টে নেয়ার জন্যই টুকুকে আনানো। পথে দেখেছি অনেক দোকান ছিল সাইকেল ঠিক করানোর তাই অতিরিক্ত সাইকেল সারানোর জিনিশপত্র কমিয়ে নিলাম। এতে আমার জিনিশপত্রের ওজন অনেক কমে গেল।
বিকালটা ভালই কাটলো আপনজনদের সঙ্গে। এতদিনে প্রায়ই প্রতি দিনই নতুন নতুন মানুষদের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছিল আর নতুন নতুন মানুষদের বাড়িতে অথবা হোটেলে দিন কাটছিল। অনেকদিন পরে পরিচিত মানুষজন পরিবার পেয়ে ভালই লাগছিল। টুকুরা চলে যাওয়ার পরেও তানিয়া আপার সঙ্গে নানা বিষয়ে আড্ডা মাঝে মাঝে খালাম্মাও যোগ দিলেন। পথে কি কি ঘটেছে নানা রকম গল্প করা। আর চিরাচরিত সেই বিষয়গুলা তো আছেই শুকিয়ে গিয়েছি কালো হয়ে গিয়েছি। এইসব পাগলামি করে কি লাভ?