৬৪ জেলায় যা দেখেছি–৩৩

২ এপ্রিল (মানিকগঞ্জ থেকে ফরিদপুর)

সকালে রওনা দিতে অনেক দেরি হয়ে গেল। যখন বের হই তখন ঘড়িতে সাড়ে আটটার মতো বেজে গেছে। সাধারণত এত দেরি হয় না। প্রতিদিনই চেষ্টা করতাম ভোর ছয়টার মধ্যে বের হয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় চাইলেও বের হওয়া যায় না। বিশেষ করে কোন পরিবারের সঙ্গে রাত্রি যাপন করলে। আর সেই পরিবার যদি পরিচিত আর আপনজন হয় তাহলে তো কথাই নেই। দেরি হওয়ার মূল কারণ সকালে না খাইয়ে ছাড়াটা।

একই পথে পাটুরিয়া ফিরলাম। ফেরিতে উঠলাম, আমি যে ফেরিতে উঠলাম সেই ফেরিটি সম্ভবত নারাণগঞ্জে তৈরি হয়েছে অথবা নারায়ণগঞ্জে ছিল। ফেরি নারায়ণগঞ্জ লেখা ছিল, তাই আমার এই ধারণা। দৌলতদিয়া, গোয়ালন্দ হয়ে আহলাদীপুর ফিরে আসলাম। এখান থেকে আবার নতুন পথ ফরিদপুর।

আহলাদীপুর থেকে ফরিদপুর খুব বেশি দূরে নয়। কিন্তু কিছুদূর আগানোর পরেই চাকা পাংচার হলো। পথের পাসেই একটি দোকানে লিক হওয়া টিউবটি সারিয়ে নিলমা। দুপুরের কিছুটা পরে ফরিদপুর শহরে পৌঁছালাম। মূল রাস্তার পাশে দুইতিনটি হোটেলে একজন থাকা যায় রুম পেলাম না। বেশির ভাগই দুইটি বিছানার অথবা পরিবার পরিজন নিয়ে থাকা এমন বিছানা। হোটেলের লোকজন বাজারের দিকে যেতে বললেন সেখানে অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। বাজারের দিকেই আমার কাঙ্খিত হোটেল পেয়ে গেলাম।

হোটেলের নাম, হোটেল পার্ক প্যালেস। হোটেলে উঠার সময় প্রতিটি হোটেলেই প্রথমে বলতাম আমি থাকবো এবং অবশ্য আমার সাইকেলও রুমে রাখার অনুমতি দিতে হবে। কিছু কিছু হোটেলই দেখা গেছে এই প্রস্তাবে রাজি হতেন না। কিন্তু সবকিছু শোনার পর ঠিক রাজি হতেন। আবার অনেক সময় দেখা গেছে খালি রুম থাকলে সেটাও খুলে দিতেন সাইকেল রাখার জন্য। বেশি সমস্যা হতো রুম যদি দুই তলা অথবা তিন তলা হতো কাঁধে করে সাইকেল উপরে তুলতে হতো। কিন্তু এই কাজটি আমি নিয়মিতই করতাম।

রুমে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বের হলাম শহর দেখতে। ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে এমন সময় চট্টগ্রাম থেকে জাফর ভাইয়ের ফোন। শরীফ তুমি নাকি ফরিদপুর? ফরিদপুর থাকবা আগে জানাবা না? আমার বাড়ি তো ফরিদপুরেই। তুমি এখন কই? কোথায় উঠেছো? সবকিছু জানার পর হোটেল ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপাচাপি করছিলেন। কিন্তু এক জায়গায় উঠে গিয়েছি সেটা ছাড়া অন্য রকম লাগছিল। তবে জাফর ভাই অনুরোধ করেছিলেন আমি যেন অবশ্যই উনার ভাইয়ের সঙ্গে একবার দেখা করে আসি।

উনার ভাই হাসপাতালে ছিলেন একটা অপারেশনে। অপারেশন শেষ হতে বেশ রাত হবে। তিনি হাসপাতালের পাশেই থাকেন। তিনি অপরেশনে ঢুকার আগে আমার খাবারের ব্যবস্থা ঐ হাসপাতালেই করলেন। রাতে খাওয়াদাওয়া করলাম জাফর ভাইয়ের বড় ভাইয়ের হাসপাতালে, যদিও উনার সঙ্গে দেখা হয় নাই। গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন করছিলেন তাই। হাসপাতালটি ছিল প্রেস ক্লাবের ঠিক উল্টাপাশে নাম ’আনোয়ারা চক্ষু হাসপাতাল’।

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.